কামারুজ্জামানের মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষা

কামারুজ্জামানের মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষা


প্রস্তুতি : জাতীয় (প্রতিমুহূর্ত)

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এদিকে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায় ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এলাকা জুড়ে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ কিছুক্ষণের মধ্যে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু করবেন।

কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার সংবাদ কাভার করতে গিয়ে সাংবাদিকরা ট্রাইব্যুনালের ফটকে অপেক্ষা করছেন। সেখানে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ ৭ ধরনের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে।

১ নম্বর অভিযোগ-প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়েছে, কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৯ জুন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।

এরপর তাকে নির্যাতন করে আহম্মদনগরের রাস্তার ওপরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে কাছাকাছি কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।

২ নম্বর অভিযোগ- মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে ও মুখে চুনকালি মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে নগ্ন অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে শেরপুর শহর ঘোরায় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা।

৩ নম্বর অভিযোগ-একাত্তরের ২৫ জুলাই ভোর বেলায় কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১২০ জন পুরুষকে ধরে এনে হত্যা করে। ধর্ষণের শিকার হন গ্রামের মহিলারা।

৪ নম্বর অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ২৩ অগাস্ট মাগরিবের নামাজের সময় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাকে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে বসানো আলবদর ক্যাম্পে রাখা হয়।

মোস্তফার চাচা তোফায়েল ইসলাম এরপর কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার ভাতিজাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই রাতে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাশেম নামের আরেক ব্যক্তিকে মৃগি নদীর ওপর শেরি সেতুতে নিয়ে গিয়ে গুলি করে।

গুলিতে গোলাম মোস্তফা নিহত হলেও হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান আবুল কাশেম।


৫ নম্বর অভিযোগ-একাত্তরে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক সন্ধ্যায় শেরপুরের চকবাজারের বাসা থেকে মো. লিয়াকত আলী ও আরো ১১ জনকে আটক করে ঝিনাইগাতী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তিনজন ছাড়া বাকি সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গুলি করার সময় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে প্রসিকিউশন।

৬ নম্বর নির্যাতন- একাত্তরের নভেম্বর মাসে দিদারসহ কয়েকজনকে ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দিতে বাধ্য করতে সেখানে নির্যাতন চলে তাদের ওপর।


৭ নম্বর অভিযোগ-একাত্তরে ২৭ রোজার দিন দুপুরে টেপা মিয়ার বাড়ি ঘেড়াও করে আলবদর বাহিনী। এরপর কামারুজ্জামানের নির্দেশে টেপা মিয়াসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, কামারুজ্জামান এসব অপরাধ করেছেন একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে। তার বিচরণক্ষেত্র ছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন গত ১৫ জানুয়ারি এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৩১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

জেএ/৯/৫-৪

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)