টিকফা চুক্তি এবং বাংলাদেশ


প্রস্তুতি : অর্থনীতি (প্রতিমুহূর্ত.কম)

ঢাকায় দুই দিনব্যাপি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ‘অংশীদারি সংলাপ’ শীর্ষক বৈঠক আজ ২৬ মে রোববার শুরু হচ্ছে।  যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বহাল থাকছে না এমন একটি আভাস পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংলাপে শেষবারের মত চেষ্টা চালানো হবে । তবে যুক্তরাষ্ট্র চায় টিকফা চুক্তিতে সাক্ষর করাতে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলেছেন, আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধা অক্ষুন্ন রাখতে হলে টিকফা সাক্ষর জরুরি ।

টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) চুক্তি বহুদিন ধরেই আলোচিত । মূলত নিজেদের আধিপত্যবাদী বাণিজ্যনীতি অবাধে বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের একটি চুক্তিতে অন্য দেশগুলোকে আবদ্ধ রাখাটাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যেভাবে টিকফা করা হয়েছে বাংলাদেশেও তার চেয়ে আলাদা কিছু হবে না। ইতিমধ্যে তারা পাকিস্তান, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ইরাক, উরুগুয়েসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি সাক্ষর করেছে। টিকফা সাক্ষরের ক্ষেত্রে তাদের মূলনীতি হচ্ছে, চুক্তিবদ্ধ দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবে না।

টিকফা চুক্তি হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্ট সামগ্রীর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় বাংলাদেশের গার্মেন্ট সামগ্রী শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করছে । যুক্তরাষ্ট্রে এ সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে ‘টিকফা’কে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবে ।

টিকফা নিয়ে দু'দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও চুক্তিটি এখন পর্যন্ত সাক্ষরিত হয়নি। তবে এবার বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব আগের চেয়ে বেশ ইতিবাচক । সম্প্রতি সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও টিকফার স্বপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন ।

‘টিকফা’ চুক্তিতে কি কি রয়েছে, তা মানুষ জানে না । চুক্তি নিয়ে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে । তবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এই চুক্তির ফলে দেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে । চুক্তির বিধি-বিধানগুলো বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে অকেজো একটি রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলতে পারে । পুরো দেশের সেবাখাত বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে চলে যাবে। তাদের অবাধ মুনাফা নিশ্চিত করতে গিয়ে দেশের মানুষকে কঠিন মুল্য দিতে হবে ।

দাম বাড়বে প্রত্যেক সেবাখাতের। পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো হয়ে যাবে পণ্য । সরকার যে কম মূল্যে জনগণকে এসব সুবিধা দেয় তা আর চালু থাকবে না। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

দোহা ঘোষণা ২০০০ অনুযায়ী বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় বাণিজ্যবিষয়ক মেধাসম্পদ স্বত্ব চুক্তি অনুসারে স্বল্পোন্নত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৩ সালের পর বিভিন্ন পণ্য ও সেবা এবং ২০১৬ সালের পর ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব বিষয়ক বিধিনিষেধে আবদ্ধ হবে। এরপর আর পেটেন্ট করা ওষুধ উৎপাদন এবং রপ্তানি করা যাবে না। অন্যের পেটেন্ট করা কিছু ব্যবহারের আগে কিনতে হবে। টিকফায় ২০১৩-২০১৬ এর কোনো ব্যাপার নেই। চুক্তি হলেই শুরু মেধাস্বত্বের বাস্তবায়ন। অর্থাৎ এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার-সফটওয়্যারসহ গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বিভিন্ন পণ্য এবং প্রযুক্তির দাম অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যাবে।

ঢাকায় নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছেন, টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর না করলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে না। কিন্তু দোহা নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা। একেই জিএসপি সুবিধা বলা হয়। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এই সুবিধা দিয়েই রেখেছে। তবে তাতে যেসব পণ্য অন্তর্ভুক্ত আছে তার অধিকাংশই বাংলাদেশ রপ্তানি করে না।

তবে সরকারি দলের অনেকেই এই চুক্তির মাধ্যমে লাভের আশাও করছেন । পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক বলেছেন, সরকার কোনো ধরনের মতপার্থক্যের মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে টিকফা সই করবে না। আমাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী টিকফা সই হলে দেশ লাভবান হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদেরও এই চুক্তির পক্ষে বলেন, দ্রুতই আমরা চুক্তিটি সাক্ষর করতে চাই। এর মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়বে। চুক্তিতে দেশের জন্য ক্ষতিকর আমি কিছু দেখিনি।

উল্লেখ্য, টিকফা চুক্তির কথা 'টিফা' নামে প্রথম শোনা যায় ২০০১ সালে। টিফা চুক্তির ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে ২০০২ সালে আলোচনা শুরু হয় এবং খসড়া চুক্তিতে যুক্ত হয় ১৩টি ধারা ও ৯টি প্রস্তাবনা। ২০০৫ সালে খসড়াটি চূড়ান্ত হয়।

                              

প্রতিবেদন : সজল বি রোজারিও

এসআর-২৬/৫-১




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)