নেত্রকোনায় সাদামাটি উত্তোলন, হুমকির মুখে আদিবাসীরা




প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

নেত্রকোনা জেলা সীমান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দূর্গাপুর উপজেলা। এটি সোমেশ্বরী নদীর তীরে আদিবাসী নৃ-গোষ্টীর এলাকা বলে পরিচিত। পাহাড়ে ঘেরা নদীবিধৌত এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে পরিপূর্ণ। এ এলাকার বিজয়পুরে আছে সিরামিক্স সামগ্রীর অন্যতম প্রধান উপাদান সাদামাটির খনি। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে তা উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এখন হুমকির মুখে এ এলাকার আদিবাসীদের বাসভূমি।

গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হদি, ভালু, রাজবংশী আদিবাসী ও বাঙালিদের বসবাস দূর্গাপুর উপজেলার জীবন-যাপনকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ এলাকার বিজয়পুরের পাহাড়, টিলা ও সমতল ভূমিতে আছে বিপুল পরিমাণ সাদামাটি। যাকে এলাকার লোকেরা সাদা সোনাবলে থাকেন। এ সাদামাটি অন্তত ৯ টি কোম্পানী বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে। বিজয়পুরবাসী তাদের নিজ এলাকার অমূল্য খনিজ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

এলাকা সূত্রে জানা যায়, বিজয়পুরে শত শত বছর ধরে আদিবাসীরা বাস করে আসছে। আইন অমান্য করে কোম্পানীগুলো অবাধ ও অপরিকল্পিতভাবে  সাদামাটি উত্তোলনের ফলে অনেক আদিবাসী পরিবার হারিয়েছে তাদের বসতবাড়ি। খনির তলদেশে শিশুসহ প্রাণ দিয়েছে এ পর্যন্ত ৮ জন।

আদিবাসী রঞ্জিত ক্ষত্রিয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হচ্ছেন ছনগড়া গ্রামের রামকুমার দেবর্ষির ছেলে রিত হাজং, গাইমারা গ্রামের ধেরীজ রেসার ছেলে লফজ রিসিল, গুচ্ছ গ্রামের বীরেশ স্নালের ছেলে জুয়েল তজু, গাইসারা গ্রামের দানিয়েল রেমার ছেলে দিগন্ত স্নাল ও মাইজপাড়া গ্রামের বেনেডিক্ট রুরালের ছেলে দিলীপ মানকিনসহ এলাকার অজ্ঞাত আরো তিন জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অপরিকল্পিত ভাবে মাটি উত্তোলন করার ফলে কামারখালি বাজার থেকে চারুয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাদা মাটি উত্তোলনকারী এসব কোম্পানী খনি এলাকার খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সরকারি আইন অমান্য করছে। এজন্য কোটি কোটি টাকা মূল্যের মাটির অপচয় হচ্ছে, ব্যবহারও সুষ্টুভাবে হচ্ছে না। দিন দিন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে এলাকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ। বিপুল পরিমান অর্থ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

দূর্গাপূরের ব্যবসায়ী মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, দূর্গাপুরের সাদা মাটি অর্থাৎ সাদা সোনা উত্তোলন করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাদা মাটি পাওয়া যাচ্ছে নেত্রকোনা বিজয়পুরে। অথচ আজ পর্যন্ত স্থানীয় ভাবে সেখানে গড়ে উঠেনি মৃত্তিকা ভিত্তিক কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে হতে পারতো শত শত লোকের করমসংস্থানবিজয়পুর হতে পারতো শিল্পোন্নত একটি বাণিজ্যিক এলাকা।

এলাকাবাসীর দাবী, বিজয়পুরের সাদা সোনা উত্তোলনে সরকারী নীতিমালা মেনে চলতে কোম্পানীগুলোকে বাধ্য করা প্রয়োজন। এতে করে রক্ষা পাবে আদিবাসীদের বসত বাড়ী। দূর্ঘটনায় মাটি গর্ভে জীবন দিতে হবে না আর কোন আদিবাসীর। বিজয়পুরের উপযুক্ত স্থানে মৃত্তিকা শিল্প গড়ে তুললে তা এলাকার অর্থনীতিতে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। প্রতিবছর সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।


দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ভূতত্ত্ব ও জরিপ অধিদপ্তর বিভিন্ন কোম্পানীকে মাটি কাটার পরিমান সম্পর্কে রয়েলিটি দেয়। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।

দূর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুল হোসেন আকুঞ্জি এ ব্যাপারে জানান, তিমধ্যে দূর্গাপুরে আইন অমান্য করে সাদা মাটি উত্তোলনসহ উপজাতীদের প্রাণহানি ও বসতবাড়ি ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে। তবে এর কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

                                                 
প্রতিবেদন : বিজয় চন্দ্র দাস, জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
সম্পাদনা : সজল বি রোজারিও
বিডি/এসআর-২৫/৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)