চেন্নাইকে হারিয়ে আইপিএল ট্রফি মুম্বাইয়ের হাতে

প্রস্তুতি : খেলা (প্রতিমুহূর্ত.কম)


ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ফাইনাল মানেই টানটান উত্তেজনা, গ্যালারীতে উম্মাদনা, ঝলকানো আতশবাজী, চিরায়িত ক্রিকেটীয় প্রথাকে আবার নতুন করে লেখা।

এবারের আইপিএল ফাইনাল আয়োজনের জন্য কোলকাতার ইডেন গার্ডেন আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল কিন্তু গত কিছুদিন থেকে আবহাওয়া যেন একটু বেরসিক হয়ে রইলো। সাধারণ দর্শকদের মাঝে এই বেয়ারা আবহাওয়া নিয়ে সঙ্কার শেষ ছিল না। “ফাইনাল ম্যাচ কি পুরো বিশ ওভারের হতে পারবে”- ম্যাচ শুরুর আগে এমন জল্পনা-কল্পনা ছিল স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক ও বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মাঝে।

আইপিএল ফাইনাল বলেই বোধহয় আবহাওয়াও ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে গেল। গত কয়েকদিনের আবহাওয়া সাথে এর যেন কোন মিলই নেই। পরিষ্কার-মেঘমুক্ত আবহাওয়া; খাঁটি ক্রিকেটীয় আবহাওয়া যাকে বলা হয় আরকি। আর ইডেন গার্ডেনের সত্তর হাজার দর্শক জানিয়ে দিল তারা কোন নির্দিষ্ট দলের সমর্থক নয় বরং তারা ক্রিকেটের সার্বজনীন সমর্থক। গ্যালারীতেও দেখা মিলল নিরপেক্ষ কিছু সমর্থকের, যারা একই সাথে মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের জার্সি গায়ে এসেছিলেন ভালো ক্রিকেটকে সবটুকু সমর্থন জানাতে।

ফাইনাল ম্যাচের টসটা মুম্বাই-ই জিতে যায়। মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন।

ইনজুরির কারণে আজও মাঠে নামলেন না ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুল্কার আর খারাপ ফর্মের জন্য আগেই স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলেন রিকি পন্টিং। দুই ব্যাটিং কিংবদন্তীর জায়গায় মুম্বাইয়ের হয়ে ওপেন করতে নামেন আদিত্য টারে ও ডুয়েন স্মিথ। গত কিছুদিন থেকেই এই যুগল মুম্বাইকে ভালো শুরু এনে দিলেও আজ তারা একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই চেন্নাইয়ের মোহিত শর্মা স্মিথকে এলবিডাব্লিউ-এর ফাঁদে ফেলেন। পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক পেসার এলবি মরকেল টারেকে বোল্ড  করেন। ৪ রানে ২ উইকেট হারানো মুম্বাই তখন তাকিয়ে আছে ফর্মে থাকা দীনেশ কার্ত্তিক ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার দিকে। কিন্তু হায়!!! তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই রোহিত ক্যাচ এন্ড বোল্ড হন। এবারের বোলারের নামও মরকেল।

দলকে এই চাপ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন কার্ত্তিক ও রাইডু। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৩৬ রান। কিন্তু কার্ত্তিক ২১ রান করে মরিসের বলে বোল্ড হলে সবটুকু দায়িত্ব গিয়ে পড়ে পোলার্ডের উপর। রাইডুর সাথে পোলার্ড জুটি বেধে মুম্বাইকে পঞ্চম উইকেটে ৪৮ রান দেন। এই দুই ব্যাটসম্যান ১৫ ওভার পর্যন্ত খেলেন কিন্তু চেন্নাইয়ের নিয়ন্ত্রিত বোলিঙের কারণে প্রথম ১৫ ওভারে তারা মাত্র ১০০ রান তোলে। ১৫.১ ওভারে ব্রাভো রাইডুকে বোল্ড করে মুম্বাইয়ের প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙ্গে দেন। আউট হবার আগে রাইডু ৩৬ বলে ৩৭ রান করেন, যাতে ছিল ৪টি চারের মার। ওপেনার ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার কারণে মুম্বাই সমর্থকরা তাকিয়ে ছিল টেইল এন্ডারদের দিকে। হারভজন ৮ বলে ১৪ করে মুম্বাইয়ের পালে ভালোই বাতাস দিচ্ছিলেন কিন্তু আবারও আঘাত হানেন ব্রাভো। শেষরদিকের ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন। পোলার্ডের অপরাজিত ৬০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের কল্যাণে মুম্বাই শেষপর্যন্ত ১৪৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তোলে। পোলার্ডের ৩২ বলে খেলা ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৩টি ছয়।

চেন্নাই বোলারদের মাঝে ৪ উইকেট পান ব্রাভো, ২ উইকেট নেন মরকেল। মোহিত শর্মা ও মরিস ১টি  করে উইকেট পেলেও চেন্নাই স্পিনারদের আজ উইকেট শূন্যই থাকতে হয়েছে।

১৪৯  রানের টার্গেট এমনিতেই খুব বেশি না, অন্তুত চেন্নাইয়ের হাসি-রাইনা-ধোনী দিয়ে সাজানো ব্যাটিং লাইনাপের জন্য। পুরো সিরিজে ভালো খেলা মাইক হাসির দিকে আজও স্পটলাইট ছিল। কিন্তু টি-২০ আদর্শ বোলার যাকে বলা হয় সেই লাসিথ মালিঙ্গা যে মুম্বাই দলে আছেন। হাসিকে ১ রানেই বোল্ড করেন এই শ্রীলঙ্কান পেসার। একই ওভারের পঞ্চম বলে চেন্নাইয়ের আরেক ব্যাটিং মহারথী সুরেশ রাইনাকে শূন্য রানে স্মিথের ক্যাচ বানান মালিঙ্গা। প্রথম ওভারশেষে চেন্নাইয়ের স্কোর ২/২। ম্যাচটা যে মুম্বাই এমনিতেই ছেড়ে দিচ্ছে না তার আভাস পাওয়া যায় প্রথম ওভার থেকেই। দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন মুম্বাইয়ের আরেক পেসার মিশেল জনশন। তার করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই বাদ্রীনাথ আউট, চেন্নাইয়ের স্কোর ৩/৩। চেন্নাইয়ের প্রথম স্বীকৃত পার্টনারশিপ আসে চতুর্থ উইকেট জুটিতে। ডুয়েন ব্রাভো ও মুরালি বিজয় মিলে ৩৬ রান যোগ করে চেন্নাইকে একটু স্বস্তি এনে দেন। কিন্তু পঞ্চম ওভারে ব্রাভোকে ধাওয়ান আউট করলে আবার চাপে পড়ে চেন্নাই। জনশনের হাতে ক্যাচ তুলে দেবার আগে ব্রাভো করেন ১৬ বলে ১৫ (৩টি চার)। আলরাউন্ডার জাজেদাও শূন্য রানে আউট হলে চেন্নাইয়ের জয় একরকম অনিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু তখনো চেন্নাইয়ের আশার আলো হয়ে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনী। এলবি মরকেল ১০ ও রবিচন্দ্র আশ্বিন ৯ রানে আউট হলে চেন্নাইয়ের স্কোর থেমে যায় ১২৫ রানেই। আর ২৩ রানে ম্যাচ জিতে আইপিএলের ট্রাফি প্রথমবারের মতো মুম্বাইয়ের হাতে ওঠে।

চেন্নাই অধিনায়ক ধোনী একতরফাভাবে লড়াই করলেও জেতাতে পারেননি দলকে। ধোনীর ৪৫ বলে অপরাজিত ৬৩ রানের ইনিংস খেলার পথে ছয় হাঁকান ৫টি, আর চার ছিল ৩টি।

আজকের দিনটা ছিল মুম্বাইয়ের। প্রথমে চাপে পড়ার পর পোলার্ডের আপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস ও শেষেরদিকে সব বোলারদের একসাথে জ্বলে ওঠাই বলে দিচ্ছিলো এই ম্যাচে মুম্বাইয়ের শক্ত অবস্থানের কথা। মালিঙ্গা, জনশন ও হারভজন ২টি করে উইকেট নেন। ওঝা, ধাওয়ান ও পোলার্ড ১টি করে উইকেট নিয়ে মুম্বাইয়ের জয়কে আরও তরান্বিত করেন।

৬০ রানের ইনিংসের জন্য প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচের পুরষ্কার যায় মুম্বাইয়ের কাইরন পোলার্ডের হাতে।

দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলা মুম্বাইয়ের পক্ষে আজকের ম্যাচ মোটেই সহজ ছিল না। ছয় আইপিএলে পাঁচবার ফাইনাল খেলা চেন্নাইকেই সবাই ফেবারিট ভালছিল কিন্তু চিরায়িত অনিশ্চয়তার খেলার নাম ক্রিকেট আর এই কথাটিই প্রমাণ করে প্রথমবারের মতো ফাইনাল জিতে নিলো মুম্বাই। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ধোনীর  চেন্নাইকে অসহায় আতœসমর্পন করতে হল।


এক নজরে আইপিএল-৬ :


চ্যাম্পিয়ন : মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স
রানার্সআপ : চেন্নাই সুপার কিংস
প্লেয়ার অফ দ্যা সেশন : শেন ওয়াটসন (রাজস্থান রয়েলস)
ইয়ং প্লেয়ার অফ দ্যা সেশন : স্যামসন (রাজস্থান রয়েলস)
ফেয়ার প্লে : চেন্নাই সুপার কিংস
সর্বোচ্চ রান : মাইক হাসি (৭৩৩ রান)
সর্বোচ্চ উইকেট : ডুয়েন ব্রাভো (৩২ উইকেট)
সবচেয়ে বেশি ছক্কা : ক্রিস গেইল (৫১ ছয়)



প্রতিবেদন : নিপুণ কাওসার, বিভাগীয় সম্পাদক, খেলা
এনকে : ২৭/০৫-২৭

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)