এগিয়ে আসছে মহাসেন, প্রস্তুত উপকূলবাসী

প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত)

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বুধবার ছয় ঘণ্টায়  ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি মংলা বন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪২৬ কিমি, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৬৩ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।

এ ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে খেপুপাড়া-টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মহাসেনের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সবধরণের  প্রস্তুতি গ্রহণ ঘূর্ণিঝড় জেলা প্রশাসন। সেসব জেলার পরিস্থিতি নিচে দেয়ব হলঃ

সোনাগাজী:
 ফেনীতে বুধবার দুপুর থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।  জেলার সোনাগাজী উপকূলের উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠিত নারী-পুরুষরা বসতবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরতে শুরু করেছে।

সাধারণ মানুষ  নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশু  নিয়ে  পড়েছেন বিপাকে । আতঙ্কিত লোকজনের কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে না চেয়ে থেকে সোনাগাজী উপজেলার বাহিরে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাসা, বাড়িতে চলে যাচ্ছে আশ্রয়ের খোঁজে।

সোনাগাজীর ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ।  তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন ধরণের পরিস্তিতি মোকাবেলার জন্য দুই হাজার সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। টিম গঠন করা হয়েছে সাবির্ক পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিমসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পিরোজপুর:
 মহাসেনের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সবধরণের  প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে  পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ।  চর এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে  নিরাপদ স্থানে এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়ার ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারি নির্দেশনার আলোকে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে সেখানে।
জেলার সকল উপজেলার ইউএনওদের সভাপতিত্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।
জেলা সদরের ত্রাণ বিভাগ কন্ট্রোল রুম হিসেবে কাজ করবে।

জেলার সাত উপজেলায় ৭৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত এবং সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে খোলা রাখা হয়েছে।
এছাড়া জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা মঠবাড়িয়ায়  রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির  ৯০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে শুকনো খাবার, জীবন রক্ষাকারী ঔষধসহ বিভিন্ন নৌবন্দরে জলযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

ঝালকাঠী:
ঝালকাঠীতে বুধবার সকাল থেকেই  গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়বসহ দমকা হাওয়া বয়ে যায়।
দমকা হাওয়া শুরুতেই জেলার বিভিন্নস্থানের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়।

বৈরী আবহাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী পাড়ের বহু পবিরার।

গ্রামবাসীদের বিভিন্ন শুকনো খাবার ও পলিথিন নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
ইতোমধ্যেই জেলার চারটি উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

বরিশাল:
বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে বরিশালসহ দক্ষিণের ৩৮টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বরিশাল নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষের এই আদেশে ফেরি চলাচলও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নৌ-বন্দরসহ দক্ষিণের ৭৮টি ঘাট থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নৌযানগুলো যে ঘাটের কাছে রয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানেই নোঙর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বরগুনা:
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় বরগুনায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্বেচ্চাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে ।
৭ নং বিপদ সংকেত প্রচারের পর থেকেই মানুষজন এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা গ্রামে গ্রামে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এই কর্মীবাহিনীরা ৩৭২টি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পুরো জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কাজ করবে বলে জানান জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক হাফিজ আহম্মেদ।

এর আগে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৪৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
এছাড়াও এই জেলায় সর্বমোট ৩২৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় দেড়লাখ মানুষ আশ্রয় গ্রহণ সম্ভব।

নোয়াখালী:                                                                        
গত চারদিন ধরে নোয়াখালী জেলা সদরের সঙ্গে হাতিয়ার এবং হাতিয়ার সঙ্গে স্থানীয় ছোট দ্বীপগুলোর নৌযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

দমকা হাওয়া আর গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে নোয়াখালীর হাতিয়ার দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তবে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এদিকে, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কয়েকটি চরে কোনো আশ্রয় কেন্দ্র নেই বলে জানা গেছে। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে অর্নি ও চালুন্দি ইউনিয়নসহ নলেরচর, কেরিংচর ও নঙ্গলিয়ারচর। এসব চরসহ আশপাশের চরগুলোতে অন্তত দুই লাখ লোকের বসবাস। এখানে বেশিরভাগ চরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নেই।
চর এলাকার বাসিন্দারা নিজ নিজ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে  বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ২৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও প্রত্যেক এলাকায় মাইকে দুর্যোগবার্তা প্রচার করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় চারশ’ কিলোমিটারের মধ্যে এলে চরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হবে।

যেসব এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নেই সেখানকার মানুষকে প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

রিপোর্ট : জামিল আশরাফ খান, নিউজরুম এডিটর
জেএ/১৫/৫-৬

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)