আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের নামের আাগে কেন উদ্ভট খেতাব?






প্রস্তুতি : খোলামত (প্রতিমুহূর্ত.কম)--

আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা পরিচিত উদ্ভট ও অদ্ভুত নামের খেতাবে। ছদ্মনামের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের পিতা-মাতার দেয়া আসল নাম। কালা রফিক, ল্যাংড়া আমির, মুরগি মিলন, কিলার আব্বাস, নাটকা বাবু আরও কত কি নামে পরিচিত হচ্ছে সন্ত্রাসীরা। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের পরিচিতি র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, এসবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রেকর্ডেও লিপিবদ্ধ। এসব সন্ত্রাসীদের কেউ খুন হয়েছে, কেউবা আছে কারাগারে, আবার কেউ আত্মগোপন করে আছে বিদেশে, কেউ বা আন্ডারওয়ার্ল্ড দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ সন্ত্রাসীদের এই ধরনের নাম শুনে হাসি, ঠাট্রা, তামাসা, কৌতুক রসিকতায় মত্ত হন।

হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় কুষ্টিয়ায় লাশ পাওয়া রাজধানীর ৫৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজুমদারের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক নাম ছিল কালা রফিক। তার শরীরের রং কালা বলে তাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে কালা রফিক ডাকা হতো। কেরানীগঞ্জ থেকে অপহরণের পর উদ্ধারকৃত ছয় বছরের শিশু স্কুলছাত্র পরাগ ম-লের অপহরণকারীদের অন্যতম আমীর আলী ওরফে ল্যাংরা আমীর। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর সময় তার পায়ে পুলিশের গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ল্যাংড়া হয়ে হাঁটত বলে তার নামের আগে পরিচিতি পেয়েছে ল্যাংড়া আমির।

রাজধানীর এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম হচ্ছে মুরগি মিলন। এক সময় মুরগী বিক্রি করত বলে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নাম হয়েছে মুরগি মিলন। কালা রফিকের মতোই আরও নাম আছে কালা জাহাঙ্গীর, কালা ফারুক। কালা জাহাঙ্গির হচ্ছে পুরষ্কার ঘোষিত দুর্ধর্ষ শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার গায়ের রং কালো ছিল বলে তাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে কালা জাহাঙ্গীর নামে ডাকা হতো। এক সময়ের বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই সন্ত্রাসীর কোন হদিস নেই। আদৌ বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। আরেক সন্ত্রাসীর নাম হচ্ছে কালা ফারুক। সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার সময় প্লেন থেকে নামিয়ে আনার পর অস্ত্র উদ্ধারাভিযানে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় কালা ফারুক। লালবাগের এক সন্ত্রাসীর নাম নাটকা বাবু।

আমেরিকায় আত্মগোপনরত এক সন্ত্রাসীর নাম টোকাই সাগর। আসল নাম গোলাম রসুল সাগর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টোকাই ছিল। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এসে তার নাম হয় টোকাই সাগর। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরষ্কার ঘোষণা করার পর সে আমেরিকায় চলে গেছে। আরেক সন্ত্রাসীর নাম কিলার আব্বাস। তার আসল নাম আব্বাসউদ্দিন। পেশাদার কিলার হওয়ায় তার নামের আগে কিলার যোগ করে ডাকা হয় কিলার আব্বাস নামে। দুই সন্ত্রাসীর নাম পিচ্চি হান্নান, পিচ্চি হেলাল। তাদের দেহের আকৃতি বেটে। তাই তাদের আন্ডারওয়ার্ল্ডে ডাকা হয় নামের আগে পিচ্চি হান্নান ও পিচ্চি হেলাল। পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে মারা গেছে। পিচ্চি হেলাল কারাবন্দী। আরেক সন্ত্রাসীর নাম হচ্ছে ভিপি হেলাল। তার আসল নাম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী। এক সময় কলেজের ভিপি ছিল। তাই আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নামের আগে যুক্ত হয়েছে ভিপি হেলাল।

রাজধানীর আরেক সন্ত্রাসীর নাম বিহারী মুন্না। মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পে জন্ম নেয়ার কারণে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাকে ডাকা হতো বিহারী মুন্না নামে। বিহারী মুন্নার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও কাছ থেকে কিছুই জানা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ক্যাডার শিশিরকে ডাকা হতো ডগ শিশির নামে। কাঁটাবনে এক দোকানে চাঁদা না পেয়ে দোকানীর কুকুর নিয়ে আসার কারণে তাকে ডগ শিশির নামে ডাকা হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে করিম সরকার দাপট দেখিয়ে নীলক্ষেত এলাকায় ফাও তেহারি খেত বলে তার নাম হয়ে যায় তেহারি করিম। র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত রায়েরবাজারের বাবুর দুই চোখ ঘোলা হওয়ায় তাকে ডাকা হতো ক্যাট বাবু। ক্রসফায়ারে নিহত পুরনো ঢাকার শহীদ ডাকাত দলের সর্দার ছিল বলে তার নামের পরিচিতি হয় ডাকাত শহীদ।

ঢাকাই আকবর, কানা শফিক, ঠোঁট উচা বাবু, মাছ কাদের, বিডিআর সেলিম, মেজর ইকবাল, বোমা মতিন, চাউল পিন্টু, গরু শফিক, ভোতা রানা, লাদেন মামুন, বোতল আক্কাছ, হোঁকড়া বাবু, পাঁঠা সাত্তার, ভাংরী খোকন, ফাউল সোহেল, সাদা সেন্টু, মামা খোকন, ব্যাঙ্গা বাবু ইত্যাদি কত যে নাম আছে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার কোন ইয়ত্তা নেই। শরীরের গড়নের আকৃতিতে, কর্ম দোষ বা গুণে, সহজে চেনার সুবিধার্থে, মা-বাবার দেয়া আসল নাম আড়ালে হারিয়ে সন্ত্রাসীদের আন্ডারওয়ার্ল্ডে উদ্ভট ও অদ্ভুত নামের পরিচিতি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সন্ত্রাসী আরেক সন্ত্রাসীকে আসল নামের সঙ্গে উদ্ভট খেতাব দিয়ে ডাকে বলে তাদের এই ধরনের পরিচিতি পেয়েছে। তাই পুলিশের খাতায়ও সন্ত্রাসীদের আসল নামের আগে পরে উদ্ভট খেতাব দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা, গ্রেফতারের অভিযানে, আন্ডারওয়ার্ল্ডে কথোপকথনের সুবিধার্থে সন্ত্রাসীদের নামের এই ধরনের খেতাব ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা এইভাবে মতামত ব্যক্ত করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সদের কাছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের এই ধরনের খেতাবী নামের পরিচিতি বেশি। পুলিশ সোর্সদের কাছে নাম জিজ্ঞেস করলেই তারা আসল নামের সঙ্গে খেতাবী নামটি যুক্ত করে দেয়। এভাবেই পুলিশের রেকর্ডে সন্ত্রাসীদের নামের উদ্ভট ও অদ্ভুত পরিচিতি যুক্ত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের এসব নামের পরিচিতি নিয়ে অনেক সময় হাসি, ঠাট্রা তামাসাও হয়।

 আরএম/২১/০৫-০১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)