রানা প্লাজা : ৬ তলার নকশার কাগজ পাল্টে ১০তলা

 

রানা প্লাজা : ৬ তলার নকশার কাগজ পাল্টে ১০তলা

প্রস্তুতি : জাতীয় (প্রতিমুহূর্ত.কম/ protimuhurto.com)--

সাভারে ধসে পড়া ভবন রানা প্লাজার নকশা ও লে-আউট প্ল্যান অনুমোদনে সাভার পৌরসভা বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি’ বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান সচিবালয়ে সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
 
স্থানীয় সরকার সচিব জানান, এ ঘটনায় দায়িত্ব অবেহলা ও সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী কাজ করায় সাভার পৌর মেয়র মো. রেফাত উল্লাহকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 
 
সাভার পৌর মেয়রকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তাকে বরখাস্ত করা হবে এবং তার গাফলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে পুলিশি মামলা দায়ের করা হবে।
 
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রানা প্লাজার মূল নথিকে পাশ কাটিয়ে ৬ তলার জায়গায় ১০তলা ভবনের অনুমোদন দেয়। তদন্তকালে কমিটি এ প্রমাণ পেয়েছে বলেও জানানো হয়।
 
মেয়র সব নথি উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় পরিপূর্ণ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি’ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন ২০০৫ সালে প্রথম দেয়া হয়। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই রানা প্লাজার ৭ম-১০ম তলার নকশা অনুমোদনে সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়। সাত বা ততোধিক তলার ইমারতের ক্ষেত্রে স্থাপত্যিক নক্সা ছাড়াও কাঠামোগত নকশায় আবেদনকারীর স্বাক্ষর করার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাভার পৌরসভার মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রানা প্লাজার মূল নথিকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য নতুন নথি সৃষ্টি করে ৭ম থেকে ১০ তলার নকশা অনুমোদন করেন, যা দায়িত্বে অবহেলা, অদক্ষতা ও ক্ষমতা অপব্যবহারের সামিল। 
 
এছাড়া বিল্ডিং কোড অথবা অগ্নি প্রতিরোধ দপ্তর অনুমোদিত অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন পদ্ধতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা পাওয়া যায়নি।
 
রানার ভবনের ষষ্ঠতলা ভবনের ১০তলা ফাউন্ডেশনের নকশা পরীক্ষা করা হয়নি এবং এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের কোনো প্রতিবেদনও নথিতে পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত কমিটির মতামতে উল্লেখ রয়েছে। নকশায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ইমারত নির্মাণ কমিটির আদেশক্রমে উক্ত কমিটির সদস্য সচিবের স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও স্বাক্ষর করা হয়নি।
 
এছাড়াও রানা প্লাজা নির্মাণের স্বল্প সময় পর বিধ্বস্ত হওয়ায় স্থাপত্যিক নকশা ও কাঠামোগত নকশায় স্বাক্ষরকারী স্থপতি এটিএম মাসুদ রেজা ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার সাজ্জাদ হোসাইনের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলেও মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
 
প্রতিবেদনে সকল পৌরসভায় নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করে বিধিবিধান হালনাগাদ করে নকর্শা অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেয়র ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পদক্ষেপসহসহ ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে পৌরসভাগুলোকে বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণের নির্দেশ এবং অনুমোদন বর্হিভূত নির্মাণকাজ ও নকশা বহির্ভুত নির্মাণ হলে তা ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করতেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
 
উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধসের পর ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে লে-আউট, নকশা অনুমোদনের সময় সাভার পৌরসভা সব বিধি-বিধান অনুসরণ করেছে কিনা তা যাচাই করতে গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। 
 
গঠিত এ তদন্ত কমিটিতে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোল্লা আজিজুল হক ও এলজিইডির নকশা বিশেষজ্ঞ মো. সরোয়ার হোসেন সদস্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো. খলিলুর রহমান সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)