তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নেওয়াজ শরিফ

তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন নেওয়াজ শরিফ

 

 
প্রস্তুতি : আন্তর্জাতিক (প্রতিমুহূর্ত.কম)  ---

পাকিস্তানের রাজনীতিতে নেওয়াজ শরিফ সবসময়ই জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ । আরেকবার তা প্রমানিত হলো এবারের নির্বাচনে।  এবার তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী  হয়ে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। মিয়া মুহাম্মদ নেওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের ১৮তম প্রধানমন্ত্রী হবেন । এর আগে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডটি যৌথভাবে ছিল বেনজির ভুট্টো ও নেওয়াজ শরিফের।
 
শনিবার পাকিস্তানের ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে বিজয়ী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে  পৌছে গেছে নেওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)। এ পর্যন্ত পাওয়া প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ি ২৭০ আসনের ন্যশনাল অ্যাসেম্বলিতে নেওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ- এন ১৩০ আসন পেয়েছে।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ। তাদের আসন সংখ্যা হচ্ছে ৩৭। এছাড়া নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছে মাত্র ৩৫ আসন। তবে পার্লামেন্টে প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় নেওয়াজ শরিফকে অন্য দলের সমর্থনে সরকার গঠন করতে হবে। এখন জোট সরকার গঠনে তিনি তেহরিক-ই ইনসাফ না পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে বেছে নেন সেটাই দেখার বিষয়।
 
১৯৪৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাঞ্চাব প্রদেশের একটি বিত্তশালী পরিবারের জন্ম নেন নওয়াজ শরিফ। তিনি ১৯৭৬ সালে ৩০ বছর বয়সে রাজনীতিতে জড়ান । পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে রাজনীতিতে সুপরিচিত হয়ে উঠেন।

জুলফিকার আলির ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয়করণ নীতি হাতে নিলে বেশ ক্ষতির মুখে পড়ে শরিফের পরিবার। তাদের ইস্পাতের ব্যবসা চলে যায় সরকারের হাতে। ঠিক সেই সময়ে নিজে রাজনীতিতে জড়ান তিনি।রক্ষণশীল পাকিস্তান মুসলিম লিগে যোগ দিয়েই প্রথমে মনোনিবেশ করেন পরিবারের ব্যবসা উদ্ধারের। 
 
তিনি ১৯৮০ সালে পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের নিয়ন্ত্রণাধীন পাঞ্চাব উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেন। এ সময় জিয়াউল হকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন । ১৯৮৫ সালে জেনারেল জিয়া তাকে পাঞ্চাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সময়টাতে নেওয়াজ শরিফ রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকেন। পরে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু মুসলিম লিগকে পূণর্ঘটন করে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো। নির্বাচনে হেরে পাকিস্তান মুসলিম লিগ থেকে বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করেন তিনি।

১৯৯০ সালে গোলাম ইশহাক খান বেনজিরকে সরিয়ে দিয়ে নেওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই ভুট্টো পরিবারের প্রতি প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে পাকিস্তানে বেসরকারিকরণ ও অর্থনৈতিক উদারকরণ নীতি বাস্তবায়ন শুরু করেন। কিন্তু সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় বেনজিরের মতো তাকেও সরিয়ে দিতে চেষ্টা চালান প্রেসিডেন্ট ইসহাক। কিন্তু নেওয়াজ শরিফ সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। অবশেষে ইসহাক ও শরিফ দুই জনেই সেনাপ্রধান আবুল ওয়াহেদ কাকার অনুরোধে পদত্যাগ করেন।

১৯৯৭ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে শরিফের দল পিএমএল-এন। এসময় পাকিস্তানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন তিনি। তারই তত্ত্বাবধানে ও গ্রহণহীতি নীতির প্রেক্ষিতে পাকিস্তান পরমাণু কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু দুই বছরের মাথায় তাকে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সামিরক আদালতে সন্ত্রাস, অপহরণের দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২০০০ সালে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠায় জেনারেল পারভেজের সামরিক সরকার।
 
নেওয়াজ শরিফ ২০০৭ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নেওয়াজ (পিএমএল-এন) দ্বিতীয় হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কর ফাঁকি দেওয়া ও অর্থপাচারের অভিযোগ থাকলেও এর কোনোটিই আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
 
পাকিস্তানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানসহ ৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসাব করলে নেওয়াজ হবেন পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী।
 
আরএম-১২/৫-৬
 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)