রেশমা তুমি ভালো থেকো

রেশমা তুমি ভালো থেকো

প্রস্তুতি : এক্সক্লুসিভ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

ধসেপড়া বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তুপের নিচে বেসমেন্ট আন্ডারগ্রাউন্ডের ছোট্ট একটি ফাঁকা জায়গা। ফাঁকা জায়গাটি মসজিদের একটি কক্ষ। পৃথিবীর আলো-বাতাস, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা  সেখানে পৌঁছায় না। যেখানে অন্ধকার মৃত্যুফাঁদ সেখানে ৭২ ঘন্টা পর প্রাণের অস্তিত্বতো কল্পনা করাই যায় না। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা বাস্তবতাকেও হার মানায়। এমনই একটি অলৌকিক ঘটনা রেশমার প্রাণের স্পন্দন। 

ভবন ধসের ৪০৮ ঘন্টা পর পর্যন্ত কিছু শুকনো খাবার, ও পানি খেয়ে বেঁচে ছিলেন অসীম জীবনীশক্তির এই নারী। পঁচা লাশের গন্ধ তাকে এতটুকু জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা করেনি। মৃত্যকুপের ভয়াল জগতের হাতছানি তাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি। বেঁচে থাকার আকুন্ঠ স্পৃহা তাকে নিজের জীবনের প্রতি মমর্ত্ব যুগিয়েছে। কি ছিল এই নারীর মাঝে? যা অন্যদের মাঝে নেই। না, রেশমা আমাদের মতই অনন্য সাধারণ রক্ত-মাংসের একজন মানুষই। তবে রেশমার জীবনের দামের অতটুকু মূল্য নেই যতটুকু আমরা নিজেদের মূল্যমান মনে করি। তা না হলে কেন রেশমার মত খেটে-খাওয়া গার্মেন্ট শ্রমিকদের রানা প্লাজার মত একটি মৃর্তুকুপের বলি হতে হবে? প্রশ্নটা পোশাক শিল্প কারখানার মারিক ও প্রশাসনের প্রতি না হয় ছুড়ে দিলাম। রানার মত পিশাচ ঘাতকেরা কি কোনদিন এই শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্ধষা ও পরিশ্রম উপলব্ধি করতে পারবে? 
 
রেশমাও সেইসব শ্রমিকদের প্রতিনিধি। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী পেশায় গার্মেন্টসকমী। বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে। রেশমারা তিন বোন দুই ভাই। তার আরেক বোনও অন্য একটি গার্মেন্টসে কাজ করে। অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলে। রেশমারা সহজে কখনো হার মেনে নেয় না। ধৈর্য্য পরিশ্রমই তাদের পথচলার পাথেয়। যার কারণে শত কষ্টের মাঝেও নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে পারে। জীবনের নিকট তারা সহজে হার মেনে নেয় না। রেশমাও হার মেনে নেয়নি জীবনের কাছে। নানা রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও দীর্ঘ ৪০৮ ঘন্টা লড়াই করে বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজের জীবনকে। সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১৭তম দিনে এসে উদ্ধার করা হল এই বিস্ময় জাগানো নারীকে। কেউ কেউ বলছেন অলৌকিক ঘটনা। আবার কেউ কেউ বলছেন উপরওয়ালার রহমত। কথায় আছে, ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে?’
 
১০ মে শুক্রবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে উদ্ধার কর্মকান্ড পরিচালনা করছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। বেজমেন্ট খোঁড়ার সময় হঠাৎ সেনাবাহিনীর ওয়রেন্ট অফিসার রাজ্জাক একটি লাঠি নাড়াতে দেখতে পান। কাছে গিয়ে গর্ত দিয়ে কাছে গেলে তিনে রেশমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। একটি গর্ত করে সেখান দিয়ে তিনি দেখতে পান কেউ একজন একটি ছোট পাইপ নাড়ছে। তিনি আওয়াজ দিলে মেয়েটি চিৎকার করে বলে উঠে, ‘স্যার আমাকে বাঁচান, স্যার আমাকে বাঁচান।’ এরপর সেখানে বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মী ছুটে যান। তারা রেশমাকে আশ্বস্ত করলেন, তারা যেকোনভাবেই হক তাকে বাঁচাবে। উদ্ধারকর্মীদের এই কথা শুনে রেশমা খুশির সাথে আশস্ত হল। কতদিন পর সে আবার সূর্য দেখতে পাবে। সে আবার পৃথিবীর মুক্ত হাওয়া গায়ে মাখতে পারবে। রেশমা বেঁচে আছে এই খবর মুহূর্তেই মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে জাতি, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই রেশমার জন্য প্রার্থনায়রত ব্যস্ত। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেইসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীরা রেশমার জীবন প্রার্ণনা করে ফেইসবুকিং ও টুইট করে পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া কামনা করে।

বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে রানা প্লাজার ধবংশস্তুপের বেসমেন্টে রেশমার জীবিত সন্ধান পাওয়া যায়। বেসমেন্টের নামাজ পড়ার স্থানে রেশমা আটকে ছিলেন। পুরো ভবনটি ধসে পড়লেও ওই স্থানে তিনি অক্ষত ছিলেন। উদ্ধারকর্মীরা ভারী ভারী যন্ত্রপাতির কাজ থামিয়ে রেশমাকে উদ্ধার করতে কাজ শুরু করে দেন। টানা ৪৫ মিনিট রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার তৎপরতার পর বিকেল ৪ টা ২৭ মিনিটের দিকে রেশমাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে তাকে সেনাবাহিনীর একটি এম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে  নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে তাকে। তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। ভারী খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে এই কারণে তাকে জুস খেতে দেওয়া হয়। এখন সাবধানে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদাসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ রেশমার নব জীবনকে অভিবাদন জানিয়েছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকেই আগাক। দেশের যেকোন বিপদে আমরা সবাই এক হতে পারি। এটাই বাঙালি জাতি হিসেবে ব্যাপক প্রাপ্তি। 

কে বলেছে বাংলাদেশের কোন সুখবর নেই! একটি তরুণ প্রাণ এখনো বেঁচে আছে। শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আজো রেশমা বেঁচে আছে। একটি অপার সম্ভবনা এখনো বেঁচে আছে হতাশাগ্রস্থ বাংলাদেশে। রেশমারা অবিনাসী। রেশমা বেঁচে থাকবে। রেশমা আবার স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। রেশমা আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শিখাবে। আরো দীর্ঘজীবি হও রেশমা।
 
লেখা : জামিল আশরাফ খান নয়ন
জেএ/১০/৫-৫

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)