স্টিফেন কিংয়ের ছোটগল্প ‘দ্যা আদার সাইড অফ দ্যা ফগ’

স্টিফেন কিংয়ের ‘দ্যা আদার সাইড অফ দ্যা ফগ’

কুয়াশার অন্যপাশে

ভাষান্তর: বিপুল হাসান


বাসা থেকে বের হলো পিট জ্যাকব। সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে ছুটে এলো কুয়াশা। সে দেখলো, গাঢ় কুয়াশা তার বাসাটাকে গিলে ফেলেছে। সামনে কুয়াশায় তৈরি একটা চাদর ছাড়া সে আর কিছইু দেখতে পাচ্ছে। তার ভেতর অদ্ভূত এক অনুভূতি তৈরি হয়। মনে হয়, পৃথিবীর কোথাও আর কেউ নেই, সে-ই হলো এ গ্রহের শেষ মানুষ।

আচমকা কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো পিট জ্যকাবের। মাথাটা বন বন করে পাক খাচ্ছে, আর মোচড় দিচ্ছে পেট। অনেক উপর থেকে দ্রুতগতিতে লিফট নেমে এলে যেমনটা লাগে, মনে হচ্ছে ওইরকমই একটা পড়ন্ত লিফটের মধ্যে সে দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য ওই অনুভূতিটা দীর্ঘক্ষণ টেকসই হলো না। শরীরটাকে একটু নাড়া দিয়েই অদ্ভূত অনুভূতিটা চলে গেল।

জ্যাকব পিট এবার ধীর পায়ে হাঁটতে থাকেন। হালকা হাওয়ায় কুয়াশা কাটতে শুরু করে। কিন্তু কুয়াশা কাটতে শুরু করার সাথে সাথে পিটের চোখ আতঙ্কে আর বিস্ময়ে কপালে ওঠলো। একি, এসব কি হচ্ছে! কোথায় এলো সে?

পিট একটা শহরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানে কোনো শহর থাকার কথা নয়। কারণ তার বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের শহর চল্লিশ কিমি দূরে!


 
এ কেমন শহর! সবকিছুই একদম অচেনা। এই জীবনে এরকম আগে কখনো সে দেখেনি।


 
অদ্ভূত সুন্দর সব অট্টালিকা, অনেক উঁচু। প্রতিটা ভবন যেন আকাশ ছুঁয়েছে। লোকজন সব স্বচ্ছ পলিথিন কনভেয়র বেল্টের উপর দিয়ে হাঁটছে। এ কোথায় এলো পিট!

কয়েক কদম এগিয়ে একটি ভবনের সামনে থামকে দাঁড়ালো। ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরে লেখা আছে- এপ্রিল ১৭, ২০৯৭। ঠিক দেখছে তো? চোখ কঁচলে আরেকবার ভালো করে দেখলো। না, ভুল দেখেনি। ভবিষ্যতে চলে এসেছে পিট, কিন্তু কিভাবে?

এটা কিভাবে সম্ভব! পিট বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। একটু পরেই বিস্ময়ের ঘোর কেটে আতঙ্ক গ্রাস করলো তাকে। সীমাহীন সেই আতঙ্কে থর থর করে কাঁপতে লাগলো সে। সামনে দেখতে পেলো কুয়াশার পর্দা, খুব দ্রুত সেটি সরে যাচ্ছে। সরে যাওয়ার আগেই ওটার ভেতর ঢুকে পড়তে হবে। সরতে থাকা কুয়াশার দিকে সে দৌড় দিল।

অচেনা ও উদ্ভট ইউনিফর্ম পড়া একজন পুলিশ রাগান্বিত কণ্ঠে তাকে ডাক দিলো, হেই হেই..। তার ডাক কান না দিয়ে ছুটতে থাকলো পিট। ভুমি থেকে ছয়-সাত ইঞ্চি উপরে চলমান অদ্ভুত গাড়িগুলোতে ধাক্কা খাওয়া থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেল।

বিশ্বের সেরা দৌড়বিদের মতোই দৌড়ে সে কুয়াশার মধ্যে ঢুকে পড়লো, আর সঙ্গে সঙ্গেই আবার সবকিছু ফাঁকা হয়ে গেল...।

জ্যাকব পিটের ভেতর ফিরে এলো আবার সেই অনুভূতি। প্রথমে অস্বস্তি, তারপর মাথা বন বন আর পেট মোচড়। সবশেষে সেই পড়ে যাবার অনুভূতি। এরপর আবার কুয়াশা সরতে লাগলো।

যাক, পিটের মনে প্রশান্তি। নিজের জায়গায় ফিরে আসা সম্ভব হলো। কিন্তু কিসের কি!

হঠাৎ বিকট আওয়াজ। গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়ানো সে। একটা অদ্ভুত প্রাণী চিৎকার করছে। প্রাণীটিকে সে এর আগে চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখেছে। এবার বাস্তবে দেখলো।

প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রকা- প্রাণী ব্রান্টোসোরাস, তীক্ষè দাঁত বের করে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ওর ছোট ছোট চোখে ভয়ঙ্কর জিঘাংসা। বেরিয়ে এসেছে দুই পাটির ধারালো দাঁত। তাকে টুকরো টুকরো করে খুবলে খেতে ছুটে আসছে প্রাণিটি। আতঙ্কে জমাট হয়ে যাওয়া পিট অনুভব করে প্রাণ বাঁচানোর আদিম তাগিদ।

ফের সে দৌড় দিলো কুয়াশার দিকে। মাটি ফুঁড়ে উদয় হলো আরেকটি ব্রান্টোসোরাস। অল্পের জন্য সেটার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া থেকে নিজেকে সামলালো সে। দুর্দান্ত গতিতে দৌড়ে সে আবার কুয়াশার ভেতর ঢুকে পড়লো...।

শোনো, কুয়াশা নিশ্চয়ই কখনো কখনো তোমাকে ঘিরে ধরে। পরের বার যখন কুয়াশা ঘিরে ধরবে কান পাতলে নিশ্চয়ই শুনতে পাবে কারো পায়ের শব্দ। তাকে ডাক দিও...।

ওটা পিট জ্যাকব হতে পারে, কুয়াশায় এখনও সে ঠিকানা খুজে বেড়াচ্ছে...।

দয়া করে বেচারাকে একটু সহযোগিতা করো।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)