আমাদের সেই তরুণবেলা


তারুণ্যের সূচনালগ্নে আমাদের তিন বন্ধুর বিশ্বাস ছিল, থিয়েটার করে সমাজ পাল্টে দেওয়া যায়। আমি ছিলাম ঢাকা পদাতিকে, মিঠু আর মিল্লাত উদীচীতে। একই এলাকায় বাসা, রাস্তার এপার-ওপার। এক বিকালের আড্ডায় কি জানি কি হলো, তিনজনের মিলিত ভাবনা- সমাজ পাল্টানোর লড়াইটা কেনো নিজ এলাকা থেকে শুরু করছি না!

ঢাকা প্রভাকর, মহল্লার বন্ধুদের নিয়ে নিজেরাই গড়লাম নাটকের দল। আমাদের গুলশান মডেল স্কুলের হেডস্যার খালেদ মোমিনকে গিয়ে ধরলাম, ছুটির পর বিকেলে স্কুলে রিহের্সাল করবো.. আপনি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা। নাটকের কস্টিউম, সেট ও হলভাড়ার জন্য টাকা দরকার। মিল্লাতের বাবা জলিল আংকেল ব্যবসায়ী মানুষ, সাবেক নির্বাচিত স্থানীয় গণপ্রতিনিধি। তাই অনেক বলে কয়ে তাকে সভাপতি হতে রাজি করালাম। ওই সময়ের স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ছাত্রনেতা মোস্তফা ব্যানার্জী আর এম এ খালেক ভাই হলেন সহ-সভাপতি। নাটকের টিকিট পুশিং সেলের জন্য উনাদের প্রভাব-পরিচিতি কাজে লাগানোটাই ছিল আসলে টার্গেট।

আমি হলাম সাধারণ সম্পাদক ও নাট্যকার। লিখলাম নাটক- সূর্বণপুরের শেষদৃশ্য, ধর চোর ধর, হাঁও মাঁও খাঁও, শেয়াল পন্ডিতের পাঠাশালা আর অন্য নাট্যকারের লেখা প্রযোজনা- রাজার হলো সাজা ও এ কোন ঠিকানা। বদলোক প্রধান ওইসব নাটকে মূল ভূমিকায় অভিনয় করতো এনামুল হক মিঠু। নাটকের গানবাজনা আর মঞ্চায়নের অর্থ সংস্থানসহ স্টেজ ম্যানেজারের দায়িত্ব থাকতো কামরুজ্জামান মিল্লাতের উপর।দৃষ্টিপাত নাট্যদল থেকে কলেজ সহপাঠী আবু সুফিয়ান বিপ্লবকে আনা হলো নির্দেশনার জন্য।




১৯৯০ থেকে ৯৪, পাঁচ বছরে মহিলা সমিতি, গাইড হাউজসহ মঞ্চ ও পথনাটক সবমিলিয়ে আমরা শতাধিক শো করি। বিশেষ করে আমাদের পথনাটক ‘শেয়াল পন্ডিতের পাঠশালা’ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। শো হয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বহু উৎসবে। জীবনের প্রয়োজনে এবং লোকাল পলিটিক্সে ঢাকা প্রভাকর আর টিকে থাকেনি। আমাদের মধ্যে একমাত্র কামরুজ্জামান মিল্লাতই নাটকে আছে, থিয়েটার আর্ট ইউনিটে।পাশাপাশি ওইসময়ই সে ব্যবসায় ঢুকে পড়ে, আজকে তিনটা রপ্তানিমূখি গার্মেন্টসের মালিক মিল্লাত। মিঠু চলে গেল কর্পোরেট জবে, জয়েন করে র‌্যাংগসে। আমি নাটকের রিভিউ লিখতে লিখতে কেমনে জাানি চলে এলাম ‘অনিশ্চিত’ পেশা সাংবাদিকতায়।

ওইসময় আমরা তিনবন্ধু দিনরাত একসঙ্গে থাকতাম বলে এলাকায় আমাদের বলা হতো ‘ত্রিরত্ন’। আমাদের দেখাদেখি গুলশান-বাড্ডায় বয়ে যায় নাট্যজোয়ার; গড়ে ওঠে কতোদল- গতিধারা, ধুমকেতু, থিয়েটার প্রাঙ্গণ, গুলশান থিয়েটার, সপ্তক, প্রতিশ্রুতি। কোনোটারই এখন অস্তিত্ব নাই।

প্রায় এক দশক পর বোধহয় আমরা ‘ত্রিরত্ন’ একসঙ্গে বসে আড্ডা দিলাম, যদিও আমরা তিনজনই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, বাসা কোয়ার্টার কিলোমিটারের মধ্যেই। নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্সে বসে ফেলে আসা টগবগে দিনের কতো কি মনে পড়ে গেল! কথার ফুলকির ইতি টানতে হয়, রোস্টার্স বন্ধের সময় পার হয়ে যাওয়ায়। একটা বিষয়ে আমরা ঐক্যমতে পৌছেছি, সপ্তাহে না হোক মাসে অন্তত একবার বিগত তরুণবেলার টানে আমরা ‘ঐক্যবদ্ধ’ হবো।




অফ দ্য রেকর্ড: ঢাকা প্রভাকর টিকিয়ে রাখতেও আমাদের ঐক্যমত ছিল, কিন্তু আমরা অনিবার্য কারণে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারিনি।

<script data-ad-client="ca-pub-8283151263697355" async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)