জন হেনরির গল্প (The gist of John Henry's story)
জন হেনরি মার্কিন লোকগাঁথার কিংবদন্তি চরিত্র। ১৮৮৬ সালে পহেলা মে’তে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে যে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল, সেটার সঙ্গে জন হেনরির কোনো সম্পর্কই নেই। তবু প্রতি মে দিবসে জন উইলিয়াম হেনরি আলোচনায় ওঠে আসে, কারণ শ্রমিকের অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে চরিত্রটি জড়িত। জন হেনরিকে নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে বহু গান, নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র।
দীর্ঘদেহী, সুঠাম, কালো বর্ণের জন হেনরি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন রেললাইন বসানোর কোম্পানিতে। আবার এটাও প্রচলিত আছে- মিথ্যা অভিযোগে সে ছিল কারগারে বন্দি। কারাগারে বন্দিদের দিয়ে আঠারো শতকে নানারকম নির্মাণ কাজ করানো হতো। কয়েদি হিসেবেই জন হেনরিকে যুক্ত করা হয় রেললাইন বসানোর কাজে।
বাস্তবে জন হেনরি নামের কারও অস্তিত্ব ছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। ওই বিতর্ককে অনেকেই অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, কেননা কালের পরম্পরায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীকী চরিত্র হয়ে ওঠেছে হেনরি। পাথরে খোদাই করা হেনরির হাতের উত্তোলিত হাতুড়ি হয়ে উঠেছে সমাজের নিপীড়িত, বঞ্চিত শ্রেণির কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি।
জন হেনরির গল্পটি আফ্রিকান-আমেরিকান মজুরদের মুখ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকান কৃতদাস বংশো্দ্ভত ৬ ফুট দীর্ঘ আর ২০০ পাউন্ড ওজনের হেনরি যে কোনো শক্ত কাজ করে ফেলতেন হাসিমুখে। তার ছিল ৯ পাউন্ড ওজনের এক বিশাল হাতুড়ি। রেলপথ নির্মাণে সঙ্গী শ্রমিকদের কেউই তার সঙ্গে কাজে পারতেন না।
লোহার পাত বহন করা থেকে শুরু করে খচ্চরের পিঠে মোট বয়ে নিয়ে যাওয়া, হাতুড়ি ও বড় স্টিলের পেরেক দিয়ে পাহাড় খনন করাসহ নানা কাজ করতে হতো শ্রমিকদের।
রেললাইন তৈরির জন্য একসময় পাহাড়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। রেলপথের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন স্টিল ড্রিল মেশিন আনার। কারণ এ পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ করা যে কোনো শ্রমিকের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। হেনরি এ সিদ্ধান্ত মানলেন না। কিন্তু প্রকৌশলী ছিলেন তার সিদ্ধান্তে অটল। প্রকৌশলীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন হেনরি। বলেন, মেশিনের চেয়েও বেশি এবং দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবেন তিনি।
হেনরির কথা শুনে শ্বেতাঙ্গ প্রকৌশলী তাচ্ছিল্য করে হাসলেন। শুরু হল প্রতিযোগিতা। এবার হেনরি হাতে তুলে নিলেন হাতুড়ি। একদিকে মেশিন অন্যদিকে হাতুড়ির শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল। হেনরি জীবনবাজি রেখে প্রাণপণে কাজ করে গেলেন। তার হাতুড়ির ঝলকে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।
সুড়ঙ্গের বাইরে তখন টানটান উত্তেজনা। একসময় প্রতিযোগিতার সময়ও ফুরিয়ে আসতে থাকে। হাতুড়ি হাতে হেনরি খুঁড়ে ফেলেছেন ১৪ ফুট আর মেশিন রয়েছে তখনও মাত্র নয় ফুটে। মেশিনকে হারিয়ে জয়ী হন হেনরি। শ্রমিকদের আনন্দ-চিৎকার আর জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যায় পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সেই রেল সুড়ঙ্গ এলাকা। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি সময় থাকেনি। হাত থেকে হাতুড়ি খসে পড়ে হেনরির। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। জীবন দিয়ে শ্রমিকদের মাথা উঁচু করে গেছেন এভাবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন