হাঙ্গেরিয়ান সুইসাইড সঙ: যে গান উসকে দেয় আত্মহত্যার ভাবনা



মনখারাপের সময়টাতে গান শুনতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি মনভালো থাকলেও সঙ্গী হয় গান। এটা কেবল কথার কথাই নয়, গান মানুষের মনকে সত্যিই প্রভাবিত করে তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত। শুনলে চমকে উঠতে পারেন, এমন একটা গান আছে যেটি মানুষের মনে উসকে দেয় আত্মহত্যার ভাবনা। ‘হাঙ্গেরিয়ান সুইসাইড সং’ নামে পরিচিত এ গানটি শুনে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন।

বিষন্ন রোববার (গ্লুমি সানডে) শীর্ষক গানটির স্রষ্টা হাঙ্গেরিয়ান পিয়ানোবাদক রেজসো সেরেস । ১৯৩৩ সালে তিনি এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন। রেজসে নিজেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। গানটি ঘিরে লোকমুখে শোনা যায় নানা মিথ। সুন্দরী এক নারী গানটি প্লেয়ারে চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। একজন ব্যবসায়ীর সুইসাইড নোটে পাওয়া গিয়েছিল এই গানের কথাগুলি। হাঙ্গেরির দুই কিশোরীও নাকি এই গানটি গাইতে গাইতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে জীবনাবসান ঘটিয়েছিল।

আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়া এই গানটি তৈরি হয়েছে হৃদয়-বিদারক ঘটনার মধ্য দিয়ে। হাঙ্গেরিয়ান সুরকার রেজসো সেরেস মামলার ফেরে পরে সহায়-সম্বল হারিয়ে একসময় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। গভীরভাবে যে নারীকে তিনি ভালোবাসতেন সেই নারীও তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। তীব্র বিষাদে আচ্ছন্ন সেরেসের হাতে ওই সময় আসে শৈশবের বন্ধু লাজলো জ্যাভরের লেখা একটা কবিতা। সেরেসের বেদনায় সহমর্মিতা প্রকাশের জন্যই জ্যাভর কবিতাটি লিখেন। সেই কবিতায় সুর ছুইয়ে দিয়ে এমনই এক মমস্পর্শী গান তৈরি করলেন পিয়ানোবাদক রেজসো সেরেস, যা মানুষকে মুহূর্তে নিয়ে যায় অন্যভুবন।

এই গানটিই রেজসো সেরেসের পরিচিত পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়। প্যাল ক্যামার নামে এক রেকর্ডিস্ট গানটি রেকর্ড করার পর হঠাৎ করেই হাঙ্গেরিতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।

অনেকে বলেন, সেরেসের কষ্ট জ্যাভর অনুধাবন করেছিলেন। আবার এটাও বলা হয়, মূল কবিতাটি নেমে এসেছিল সেরেসের কলম বেয়েই। সেটিকে অদলবদল করে গানের আকার দেন জ্যাভর। এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং পুলিশের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য গবেষণা দেখা যায় যে, হাঙ্গেরি এবং আমেরিকায় সেই সময়ে অন্তত ১৯টি আত্মহত্যার সঙ্গে এই গানটির যোগসূত্র ছিল। আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার দায়ে গানটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো, এই গানটি গাইতে গাইতে চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রেজসো সেরেস নিজেই। তবে গানটির প্রভাব তার মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে, ইউরোপ-আমেরিকার নানা স্থানে আত্মহত্যা করেছেন এমন সব মানুষের প্রিয় গানের তালিকায় ছিল এই ‘হাঙ্গেরিয়ান সুইসাইড সং’ ।

জেনে নেয়া যাক এই ভয়ংকর গানটির লিরিক …


বিষন্ন রোববার

(Gloomy Sunday)

বাংলায় ভাবানুবাদ: বিপুল হাসান


রোববারের ব্যস্ত বিকালে একশোটি সাদাফুল হাতে
তোমার অপেক্ষায় ছিলাম হে প্রিয়।
প্রতি রোববার স্বপ্ন খুঁজতে খুঁজতে ফুরিয়ে গেছি
কবে হারিয়ে গেছি আমি নিজে।

বুকের ভেতর শুনি কষ্টের থৈথৈ আওয়াজ
হৃদয়ে এখন কেবল রক্তপাত
রোববারগুলো কেন এমন হলো
কেন আমার এমন হলো?

চোখের ভেতর মায়া, মায়ার ভেতর কষ্ট।
ব্যস্ত রোববারে নিজেকে নিয়েই সবাই ব্যস্ত।
আমার রোববারের ব্যস্ততা তোমাকে ঘিরেই।
এই ব্যস্ততা কেবলই তোমার অপেক্ষায় হে প্রিয়।

জানি কোনো এক রোববারে তোমাকে আসতেই হবে
সবকিছু ফেলে ছুটে আসতেই হবে রোববারে
একটা কাঠের কফিনের পাশে দাঁড়ানো পুরোহিত
পরিত্যক্ত ঘরে পড়ে থাকবে বিয়ের সামগ্রী।

দেখবে কফিনে কতোজন ছড়াবে মুঠো মুঠো ফুল
সেখান থেকে একশটি সাদা ফুল তুমি নিও হে প্রিয়।
শবযাত্রায় ওরা শেষকৃত্যে ওরা নিয়ে যাবে দেহ
আমি ছায়া হয়ে আপেক্ষায় থাকবো বসে সেই গাছের নিচে।

নতুন মুকুলে ভরে যাবে গাছ, আবার ঝরেও যাবে
আমি তবু স্থীর অপেক্ষায় বসে থাকবো হে প্রিয়
তোমাকে না নিয়ে চুড়ান্ত গন্তব্যে যাই কি করে
আমার হাতছানি তুমি এড়াবে কি করে?

একদিন ফুরোবে বিষন্ন রোববার
এই তো এলো বুঝি শেষ রোববার।


[On a sad Sunday with a hundred white flowers,
I was waiting for you, my dear, with a church prayer,
That dream-chasing Sunday morning,
The chariot of my sadness returned without you.

Ever since then, Sundays are always sad,
tears are my drink, and sorrow is my bread…
Sad Sunday. Last Sunday, my dear,
please come along.

There will even be priest, coffin, catafalque, hearse-cloth.
Even then flowers will be awaiting you, flowers and coffin.
Under blossoming (flowering in Hungarian) trees
my journey shall be the last.

My eyes will be open,
so that I can see you one more time,
Do not be afraid of my eyes
as I am blessing you even in my death
Comin Suday… Last Sunday.]


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)