খেয়ালখুশি

সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ পাফার-ফিশ !

প্রস্তুতি: খেয়ালখুশি (প্রতিমুহূর্ত.কম)

পৃথিবীতে কত ধরনের মাছই না রয়েছে। তোমাদের কেউ কেউ মনে করতে পারে মাছ মানেই সুস্বাদু এবং শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বা উপকারী।

 আসলে সব ধরনের মাছই যে উপকারী হবে তা ভাবা যায় না মোটেই। তোমরা কি পাফার-ফিশ দেখেছ বা এর নাম শুনেছ? মাছ কিন্তু সমুদ্রে চলাচল করে। অর্থাৎ এদের নিবাস সমুদ্রের তলদেশে। বিচরণও করে এখানে। চলাফেরা করে সমুদ্রপৃষ্ঠে উপরিতল থেকে পাঁচ থেকে ৩৫ ফুট গভীরে।

পাফার-ফিশের দেহের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ ইঞ্চি। এদের বেশি দেখা যায় ফ্লোরিডা, বাহামা, ব্রাজিলের দক্ষিণাংশসহ বিশ্বের প্রায় সব সাগরেই। সুন্দর বাদামি রেখা দেখতে পাওয়া যায় এদের চোখের উপরে নিচে
 
এবার জান মাছ খাওয়া নিরাপদ কিনা-
পাফার ফিশ খাওয়া মানুষের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। কারণ এটি এক ধরনের বিষাক্ত মাছ। বলা যেতে পারে মেরুদন্ড প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত মাছের তালিকায় নাম উঠেছে পাফার-ফিশের। এরা এত বেশি বিষাক্ত যে, অন্য প্রাণী খাওয়ামাত্র মারা যাবে। এমনকি অনেক প্রজাতির পাফার ফিশের ত্বকও মারাত্মক বিষাক্ত।
 তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মাছ এমন বিষাক্ত জেনেও তা আবার অনেক সময় মজা করে খেয়ে থাকে জাপান, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের মানুষ। ধারণা করা হয়, মাছের শরীরের যে অংশে বেশি বিষাক্ত পদার্থ আছে তা কেটে ফেলে দিয়ে ওই স্থান ভালো করে ধুয়ে রান্না করা হয়।  
মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলেন, সতর্কতার সাথে মাছ রান্না করে না খেলে তা হতে পারে আত্মহত্যার মতো
পাফার-ফিশের প্রধান খাবার সামুদ্রিক আর্চিন, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি জলজ প্রাণী। এদের শরীরের কাঁটাগুলো দেখতে খুব ভয়ঙ্কর। আর শরীর জুড়েই রয়েছে অসংখ্য কাঁটা। কারণে অনেকে মাছকে কাঁটা মাছও বলে থাকে। শরীর ফুলালেই সেই কাঁটাগুলো হয়ে যায় ভয়ঙ্কর। তা হয়ে যায় অনেকটা সজারুর কাঁটার মতো শক্ত।
মাছের প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এরা শরীরের ভেতরে প্রচুর পানি ঢোকাতে পারে। প্রচুর পানি ধরে রাখার মতো ফাঁকা জায়গাও আছে শরীরের ভেতর। আর শরীরে যখন এরা প্রচুর পানি ঢোকায় তখনই ধরনের ফিশকে বলা হয়ে থাকে পাফার-ফিশ। যখন এরা ফুলে বেলুনের মতো রূপ ধারণ করে তখন এদেরকে মাছ বলেই মনে হবে না। ফুলে বেলুনের মতো হয়ে যায় বলে অনেক দেশের শিশুরা মাছকে বলে থাকে বেলুন মাছ। 
আর যখন এরা ফুলে যায় তখন এদের কাঁটাগুলো হয়ে যায় খুবই শক্তিশালী। ধারণা করা হয়, অনেক সময় আত্মরক্ষার জন্য এরা কাঁটাগুলো কাজে লাগায়। অনেক ধরনের জলজ প্রাণী ভয়ে এদের পাশ দিয়েও যেতে চায় না। ফলে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে। তবে এরা কিন্তু নকটারনাল বা নেশাচর প্রাণী। দিনের বেলায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে নানা ফাঁকফোকরে।
 অঞ্চলভেদে মাছের নাম হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের। অনেক দেশে মাছকে বলে টেপা ফিশ। জাপানিরা পাফার মাছকে ডাকে ফুগু। জাপানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফুগুর ত্বক শরীরে থাকে প্রচন্ড বিষাক্ত টিউরোটক্সিন নামক উপাদান, যা সায়ানাইডের তুলনায় ১২০০ গুণেরও বেশি কার্যকর বিষ। এর বিষ কোনোভাবে মানুষের পেটে গেলে সাথে সাথে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায় শরীর। আর অল্পক্ষণের মধ্যেই মানুষ মারা যায় এ্যাফাইজিয়াথন রোগে। এর কোনো চিকিৎসাও এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি
সূত্র: ইন্টারনেট
রিপোর্ট: আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, নিউজরুম এডিটর
এজে- ১৮/৫-২

............................................................................................

 

পুষির কাণ্ড [ খেয়ালখুশি : ছোটদের পাতা ]

পুষির কাণ্ড !

[শার্ল পেঁরোর রূপকথা]

প্রস্তুতি : খেয়ালখুশি/ ছোটদের পাতা (প্রতিমুহূর্ত.কম/ protimuhurto.com) ---

এক ছিল কারখানা মালিক। মারা যাওয়ার সময় সে রেখে গেল তার কারখানা, একটি গাধা এবং একটি বিড়াল। মারা যাওয়ার পর তার ওই অল্প সম্পত্তি ভাগাভাগি হতে মোটেও দেরি হলো না। তবে ওই ভাগাভাগিতে কিন্তু কোনো উকিল কিংবা আইনজীবী কেউই উপস্থিত ছিল না। তার তিন ছেলেরা যার যার ইচ্ছে মতো ভাগ করে নিল বাপের সম্পত্তি।

সবচেয়ে বড় ছেলে নিল বাপের কারখানাটি। দ্বিতীয় ছেলে নিল বাপের গাধাটি। আর ছোট ছেলের ভাগে পড়ল বাবার পোষা বিড়ালটি।

বিড়ালের দখল পেয়ে ছোট ছেলে বলল, আমার ভাইয়েরা, আমার ভাগে পড়া বাবার সম্পত্তিটুকু দিয়ে বেশি কিছু করতে পারবো বলে মনে হয় না। দেখা যাবে খুব শিগগিরই আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে বিড়ালটিই খেয়ে ফেলব। আর ওটার চামড়া দিয়ে একটা কানটুপির বেশি হবে বলে বিশ্বাস হয় না। বিড়ালটির বর্তমান মালিক মানে সেই ছোট ছেলের কথা শুনে কিন্তু বেশ দুঃখ পেল ও হতাশ হলো পুষি।

ওহ্‌ হো, পোষা ওই বিড়ালের নামই কিন্তু পুষি। পুষি বেশ দায়িত্বপূর্ণ গলায় বলল, আমার মনিব, ওই প্রয়োজনটুকুই কিন্তু আপনার সব নয়। অনুগ্রহ করে আমাকে একটা থলি এবং বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর উপযোগী একজোড়া জুতো দিন। আমি যা আয় করব, তার থেকে আপনি যে অংশ পাবেন, আশা করি তা খুব একটা খারাপ হবে না।

এরপর পুষিটা নানান ধরনের পরিকল্পনা করতে লাগল। যেমন ধরা যাক তার ইঁদুর ধরার ব্যাপারটি। ইঁদুর ধরার সময় ফাঁদ পেতে সে নিজেকে ওই ফাঁদেও আড়ালে লুকিয়ে রাখত। মাঝে মাঝে পা চারটে উপরে তুলে দিয়ে মরার মতো পড়ে থাকত। তবে পুষির এমন কৌশল দেখে কিন্তু বেশ হতাশ হতো তার মনিব। পুঁচকে বিড়ালটা কী এমন করবে যে পুষিটার নিজের ভাগ্য বদলাবে, আবার তার ভাগ্যটাকেও বদলে দেবে- অনেক ভেবেও কোনো কিনারা পেল না পুশির মনিব।

যাই হোক, জুতো আর থলি পাওয়ার পর আনন্দে লাফাতে লাগল পুষি। দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে থলিটা সে গলায় ঝোলালো। তারপর লাফাতে লাফাতে চলে গেল বনের একটা জায়গায়, যেখানে প্রচুর খরগোস পাওয়া যায়। থলিটা তুষ আর লেটুস পাতা দিয়ে ভরল। তারপর চারটে পা উপরের দিকে তুলে দিয়ে এমনভাবে শুয়ে থাকল, যেন দেখে মনে হয় সে মরে গেছে। তার এই কৌশলটি ছিল কিছু তরুণ অবুঝ খরগোসের জন্য-যারা দুনিয়াদারির কঠোরতার কিছুই দেখেনি। শিগগিরই তার কৌশল কাজে লাগল। একটা নির্বোধ তরুণ খরগোস ধরা দিল তার ফাঁদে। ঢুকে পড়ল তার ঝোলার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে থলির মুখ দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে আটকে ফেলল সে। শিকারটা পেয়ে বেশ খুশি হলো পুষি।

আনন্দে নাচতে নাচতে রওনা দিল রাজার বাড়ি। রাজপ্রাসাদে ঢুকে রাজাকে অভিবাদন জানিয়ে বলল, মহামান্য রাজা, আমি আপনার জন্য একটি উপহার এনেছি। আমার মনিব জনাব কারাবাসের (নিজের মনিবের একটা জুতসই নাম সে নিজে নিজেই বের করে নিয়েছে) পক্ষ থেকে আপনাকে এই উপহারটি নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। উপহার পেয়ে তো রাজা খুশি। তিনি বললেন, তোমার মনিবকে গিয়ে বলবে যে, আমাকে উপহার দেয়ায় আমি খুব আনন্দিত হয়েছি।

আরেকদিন ঠিক এমনই এক ফাঁদ পাতল পুষি। চলে গেল সোজা কোনো এক মাঠে। থলির মুখটা বড় করে খুলে রাখল। দুটো তিতির থলির ভেতর কী আছে- দেখার কৌতূহল সামলাতে পারল না। ব্যাস, দেখতে গিয়ে অমনি আটকে পড়ল থলির ভেতর। পুষিটাও দড়ি দিয়ে শক্ত করে থলির মুখ বেঁধে আবারও রওনা দিল রাজার বাড়ি। এক জোড়া তিতির পেয়ে কিন্তু কম খুশি হননি রাজা। খুশিতে তিনি পুষির সঙ্গে হাতও মেলালেন।

এভাবে দু-তিন মাস মনিবের পক্ষ হয়ে রাজাকে উপহার দিতে লাগল পুষি। আর অপেক্ষায় থাকল কবে সেই মোক্ষম সময়টি আসবে- যেদিন সে তার মনিবের জন্য কিছু একটা করতে পারবে। এবং একদিন ঠিকই সেই সময় এল। পুষি শুনতে পেল রাজা নদী পারে ঘুরতে বেরোবেন। সঙ্গে থাকবে তার অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে। এত সুন্দর রাজকন্যা নাকি আর কোনো দেশে নেই। শোনার সঙ্গে সঙ্গে পুষি গেল তার মনিবের কাছে। বলল, আমি যা যা বলি তা যদি আপনি করেন, তাহলে আপনার ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে মনিব। আমি যেখানে বলব আপনি কেবল নদীর ঠিক ওই জায়গাটিতে গোসল করবেন। বাকি কী করতে হবে তা আমার ওপর ছেড়ে দিন।

বেচারা জনাব কারাবাস কিন্তু জানেন না পুষি কী মতলব এঁটেছে। তবে তার কথামতো কাজ করলেন তিনি। তিনি যখন গোসল করছিলেন, রাজা নদীর পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে সে জায়গায় আসতেই গলা চড়িয়ে চিৎকার শুরু করে দিল পুষি, বাঁচাও! বাঁচাও! জনাব কারাবাস ডুবে যাচ্ছেন। ও গো কে কোথায় আছো, জনাব কারাবাসকে বাঁচাও। চিৎকার শুনে রাজা তার গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করলেন। তিনি দেখলেন তাকে উপহার দেয়া পুষিটাই চিৎকার করছে। সঙ্গে সঙ্গে রাজা তার লোকজনদের পাঠালেন জনাব কারাবাসকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য করার জন্য। রাজার লোকজন নদী থেকে জনাব কারাবাসকে উদ্ধার করে নিয়ে এল।

পুষি রাজার কাছে ঘটনাটা ব্যাখ্যা করল এভাবে- তার মনিব জনাব কারাবাস যখন নদীতে গোসল করছিলেন, তখনই কিছু ডাকাত এসে তার কাপড়-চোপড় নিয়ে যায়। পুষি তখন চোর চোর বলে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছিল। আর তখনই বদমাশগুলো পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। ঘটনা শুনে রাজা তার নিজের পোশাকগুলো থেকে জনাব কারাবাসকে পোশাক দিতে নির্দেশ দিলেন। রাজার অনেকগুলো পোশাক থেকে খুব সুন্দর পোশাক বেছে নিয়ে পরলেন জনাব কারাবাস। অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে রাজা জনাব কারাবাসকে স্বাগত জানালেন। রাজপোশাক পরা জনাব কারাবাসকেও দেখাচ্ছিল দারুণ।

কানে কানে বলে রাখি, কারাবাস কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর ছিলেন। রাজপোশাকে তাকে আরো সুন্দর লাগছিল। রাজকন্যার চোখেও কিন্তু সুন্দর দেখাচ্ছিল পুষির মনিবকে। যা-ই হোক রাজা জনাব কারাবাসকে তার ঘোড়ার গাড়িতে উঠে তাদের যাত্রার সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানালেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে দেখে বেশ খুশি হলো পুষি। এগিয়ে গেল সামনের দিকে। দেখতে পেল একটি জমিতে চাষিরা ঘাস ছাঁটছে মানে নিড়ানি দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ করে পুষি বলল, শোনো চাষিরা, এই রাস্তা দিয়ে একটু পর রাজা যাবেন। রাজা তোমাদের কাছে জানতে চাইবেন এই জমিটা কার? তোমরা বলবে এটা জনাব কারাবাসের জমি। মনে থাকবে তো? তা না হলে কিন্তু তোমাদের পিটিয়ে কিমা বানাব আমি।

 ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় রাজা ঠিক ঠিক জমিতে কাজ করতে থাকা চাষিদের কাছে জানতে চাইলেন জমির মালিক কে? ভয়ে চাষিরা একসঙ্গে চিৎকার করে বলল, এই জমির মালিক জনাব কারাবাস। রাজা কারাবাসকে বললেন, পৈতৃক সূত্রে বেশ ভালো জমি পেয়েছ দেখছি। কারাবাসও খানিকটা জুড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে, আপনি তো নিজের চোখেই দেখলেন, এই জমি থেকে প্রতি বছর প্রচুর ফসল পাই আমি।

এরপর আরো সামনে এগিয়ে পুষি গেল আরেকটা জমিতে। ওখানে চাষিরা ফসল কাটছিল। তাদের ডেকে পুষি বলল, শোনো ফসলকাটিয়েরা, রাজা তোমাদের কাছে জানতে চাইবেন, এতসব ফসল কার জমি থেকে কেটেছ। তোমরা কিন্তু অবশ্যই বলবে জনাব কারাবাসের জমি থেকে। তা না হলে তোমাদের কিমা বানাতে মোটেও কসুর করব না আমি। আমার কথাটা মনে রেখো কিন্তু সবাই। খানিক পরেই রাজা এলেন সেখানে। ফসল কাটিয়েদের কাছে জানতে চাইলেন, এতসব ফসল কার জমি থেকে কেটেছে? ফসলকাটিয়েরাও পুশির ভয়ে একসঙ্গে উত্তর দিল, জানাব কারাবাসের জমি থেকে।

রাজা এবার কারাবাসের প্রতি আরো খুশি হলেন। ওই যাত্রাপথে যাদের সঙ্গেই দেখা হয়, তাদেরই হুমকি দিতে লাগল পুষি। আর সবাই পুষির হুমকিতে সবকিছু কারাবাসের বলে জানাল। কারাবাসের এত সম্পত্তি আছে দেখে তো রাজা অবাক হয়ে গেলেন।

সবার শেষে পুষিএল এক চমৎকার প্রাসাদে। ওই প্রাসাদের মালিক এক রাক্ষস। আর ওই রাক্ষসটা এতই ধনী যে নিজের সম্পত্তির পরিমাণ সে নিজেই জানে না। ওই যে রাজা যেসব জমিজমা দেখতে দেখতে এলেন, এ সবকিছুর মালিকই কিন্তু সে। বিড়ালটি রাক্ষসের সঙ্গে দেখা করে তার ক্ষমতা কতটুকু সেটা যাচাই করতে চাইল।

পুষি রাক্ষসের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য তার সামনে গেল।  রাক্ষসকে বললো, তার এলাক পেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজা তাকে যথাযথ সম্মান জানাতে চায়। পুষির এমন কথা শুনে তো রাক্ষস খুশিতে গদগদ। একটা রাক্ষসের পক্ষে যতখানি সম্ভব, ভদ্রতা জানিয়ে পুষিকে বসতে বলল রাক্ষস।

পুষি বলল, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আপনি কি আপনার ক্ষমতা দিয়ে অন্যান্য প্রাণী হতে পারেন? যেমন হাতি কিংবা সিংহ হতে পারেন? রাক্ষস বলল, পারি না আবার? এখনই তোমার সামনে একটি সিংহ হয়ে দেখাচ্ছি। বলেই একটা সিংহে পরিণত হলো রাক্ষসটি। কিন্তু সিংহের তর্জন-গর্জনে পুশির আত্মা খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম। পুষি এতটাই ভয় পেল যে, মনে মনে ভাবল, এমন ভয়ানক কোনো প্রাণীতে রূপান্তর হওয়ার কথা আর সে রাক্ষসকে বলবে না।

সিংহটা আবার রাক্ষস হওয়ার পর পুষি বলল, বড়সড় প্রাণীতে রূপান্তর হওয়া তো দেখছি আপনার জন্য কোনো ব্যাপারই নয়। তবে আমার মনে হয় ছোটখাটো কোনো প্রাণী এই যেমন ধরুন ইঁদুর কিংবা ছুঁচো হওয়া আপনার জন্যে বেশ কঠিন। আমার বিশ্বাস অত ছোট প্রাণীতে রূপান্তর হওয়া আপনার পক্ষে অসম্ভব।

অসম্ভব শুনেই ক্ষেপে গেল রাক্ষস। গলা ফাটিয়ে বলল, অসম্ভব! কে বলেছে অসম্ভব! কোন ছুঁচো বলেছে অসম্ভব! কোন হাঁদারাম বলেছে অসম্ভব! নিয়ে এসো তাকে। আগে তার মুণ্ডু চিবিয়ে খাব। তারপর ইঁদুর-ছুঁচো কিছু একটা হয়ে দেখিয়ে দেব। আমি ইঁদুর বা ছুঁচোর মতো ছোট্ট প্রাণীতে রূপান্তর হতে পারি কিনা তুমি দেখতে চাও? মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল পুষি। সায় জানানো শেষ করার আগেই দেখা গেল রাক্ষসটি নিজেকে একটি ইঁদুরে পরিণত করে ফেলেছে। তারপর দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে মেঝেতে। সঙ্গে সঙ্গে খপ করে ইঁদুরটাকে ধরে ফেলল পুষি। তারপর গিলে ফেলতে দেরি করল না এক মুহূর্তও।

পুষির ইুঁদরবেশী রাক্ষস গেলার পরপরই রাজার নজরে পড়ল অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদটি। তিনি এত সুন্দর প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে ভালোমতো না দেখে যেতে পারবেন না। প্রচণ্ড কৌতুহল তাকে টেনে নিয়ে এল প্রাসদের ভেতর। রাজার ঘোড়ার গাড়িটি প্রাসাদের ঝুলন্ত সেতুর ওপর ওঠার ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ শুনল পুষি। সঙ্গে সঙ্গে প্রাসাদ আঙিনায় দৌড়ে গেল সে। চিৎকার করে অভিবাদন জানাল রাজাকে, আসুন আসুন মহামান্য রাজা। জনাব কারাবাসের প্রাসাদে আপনাকে সুস্বাগতম!

রাজা কারাবাসের দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় বললেন, কী বললে! এই অপূর্ব প্রাসাদের মালিকও তুমি কারাবাস? এই প্রাসাদের মতো এত সুন্দর ভবন আমি আর কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আহা কী সুন্দর আর কী মিহি এর গাঁথুনি! দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। তোমার অনুমতি পেলে প্রাসাদটা একটু ঘুরে দেখতাম। জনাব কারাবাস নিজের হাতে রাজকন্যাকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করলেন। তারপর রাজাসহ প্রাসাদ ঘুরে দেখতে লাগলেন। যদিও জীবনে কখনো এমন প্রাসাদে ঢোকেননি তিনি। অথচ এটাই কিনা তার প্রাসাদ হয়ে গেল। তা-ও এমন সুন্দর একটা প্রাসাদ। এমন প্রাসাদকে নিজের ভাবতেই বুক জুড়িয়ে যাচ্ছে কারাবাসের। দেখা গেল রাজকন্যাও যেন কিছুটা ঝুঁকে পড়েছে কারাবাসের প্রতি।

রাজার চোখ কিন্তু ছানাবড়া। এমন গোছানো প্রাসাদের ভেতরটা। তিনি যতই দেখেন ততই মুগ্ধ হন। এমনকি প্রাসাদের বৈঠকখানাটি ছিল তখন পুরোপুরি সাজানো-গোছানো। দেখে মনে হচ্ছে অতিথিদেও জন্যই বুঝি সাজিয়ে রাখা আছে সব। সারি সারি খাবার, পানি, ফলমূল-সব। আসলে রাক্ষস তার বুদের নিয়ে আড্ডা মারার জন্যই কিন্তু বৈঠকখানাটি সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল। অথচ সেই রাক্ষস কিনা পুষির পেটে।

বৈঠকখানায় বসে রাজা জনাব কারাবাসকে বললেন, এখানে বসে খানিকটা জিরিয়ে নেই। আর যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে, আমি চাই তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে কর। রাজকন্যাকে বিয়ে করতে জনাব কারাবাসের কি কোনো আপত্তি থাকার কথা? যে বাপের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে কেবলই একটি ইঁদুর খেকো বিড়াল পেয়েছে-তার তো নিশ্চয়ই কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কাজেই ওই প্রাসাদেই রাজকন্যাকে বিয়ে করে ফেলল জনাব কারাবাস। আর বিড়ালমশাই?

সে তো এক মহান ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে গেল। তার কি আর ইঁদুর শিকার মানায়? কেবল খানিকটা আনন্দ করার প্রয়োজন ছাড়া ইঁদুর সে শিকার করেই না। কেনই বা করবে। সব ইঁদুর তো আর রাক্ষস নয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)