যুবতী রাধে: গান নিয়ে বিতর্ক
শাওন ও চঞ্চলের গাওয়া অসাধারণ সেই 'যুবতী রাধে' গানটি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে এটি তারা বেআইনিভাবে গেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। সোশালে ভাইরাল গানটি ইউটিউব চ্যানেল 'আইপিডিসি আমাদের গান’ থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
এটি লোকজ বলেই সবাই জানে। বেশ কয়েকবছর ধরেই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বহু শিল্পীর কন্ঠে গানটি শুনে আসছি, নিঃসন্দেহে মাধূর্যে শাওন-চঞ্চল সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। শেরপুরের অনামা ব্যান্ড সরলপুরের দাবি, গানটি তাদের ভোকাল ও গিটারবাদক তারিকুল ইসলাম তপনের লেখা ও সুর করা। এ গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে তার নাম কপিরাইট অফিসেও নিবন্ধিত। কাজেই গানটি আইনত অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিক মাধ্যমে গাওয়া ও প্রচার অবৈধ। শিল্পীর মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের অধিকার তুলে ধরে ব্যান্ডটি সবমাধ্যম থেকে চঞ্চল-শাওনের গানটি প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে।
প্রশ্ন ওঠেছে, কপিরাইট নিবন্ধনে গানটির গীতিকার ও সুরকার তারিকুল ইসলাম তপনের দাবির বৈধতা নিয়েও। কেননা যুগ যুগ ধরে সাধক-সন্নাসীরা রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনী নিয়ে রচনা করেছেন নানা পালা-পদাবলী। লোকমুখে তা বিবর্তিত হয়ে আসছে। 'যৈবতী রাধে' গানটিও সেরকমই লোকজ সৃষ্টি। গানটির মাত্রা-ছন্দ মধ্যযুগের কবি দ্বিজ কানাইয়ের লেখা মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া গানের পদের মতো, সুর কীর্তনীয়া। কাজেই এটি তপন বা সরলপুর ব্যান্ডের মৌলিক সৃষ্টি হতেই পারে না। এটি বহু বছর আগের প্রচলিত একটি গান, যার কিছু অপ্রচলিত শব্দ পাল্টে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। লোকসংগীতে এমনটাই হয়ে থাকে দেশে দেশে সর্বত্র।
অনেকেই পাল্টা অভিযোগে বলছেন, প্রচলিত ফোক গান সংগ্রহ করে নতুনভাবে সাজালে বা রেকর্ড করলে তা নিজস্ব হয়ে যায় না। মধ্যযুগের একটি সংগৃহীত গান নিজেদের নামে কপিরাইট করিয়ে অনৈতিক কাজ করেছে সরলপুর ব্যান্ড।
শ্রোতারা অবশ্য এইসব বাদানুবাদে কান দিচ্ছেন না। কপিরাইটের ঘেরাটোপে পড়ে আইপিডিসি 'যৈবতী রাধে' সরিয়ে নিলেও এরই মধ্যে গানটি শেয়ার হয়ে গেছে হাজারে হাজার। অনেকদিন পর অপূর্ব ভঙ্গিমায় রাই-কানাইকে পেয়ে মজে বুঁদ হয়ে আছে অনুরাগীরা।
আইনের কি সাধ্য, স্বার্থক শিল্পকে বন্দী রাখার!
আলোচিত গানটির কথা:
সর্বত মঙ্গল রাধে বিনোদিনী রাই
বৃন্দাবনের বংশিধারী ঠাকুরও কানাই
একলা রাধে জল ভরিতে যমুনাতে যায়
পেছন থেকে কৃষ্ণ তখন আড়ে আড়ে চায়।
জল ভরো জল ভরো রাধে
ও গোয়ালের ঝি
কলস আমার পূর্ণ করো
রাধে বিনোদী।
কালো মানিক হাত পেতেছে
চাঁদ ধরিতে চায়-
বামন কি আর হাত বাড়ালে
চাঁদের দেখা পায়?
কালো কালো করিস না লো
ও গোয়ালের ঝি
আমায় বিধাতা করেছে কালো
আমি করব কী?
এক কালো যমুনার জল
সর্বপ্রাণী খায়
আর এক কালো আমি কৃষ্ণ
সকল রাধে চায়।
এই কথা বলিয়া কানাই
বাঁশি হাতে নিল
সর্প হয়ে কালো বাঁশি
রাধাকে দংশিল।
ডান পায়ে দংশিল রাধের
বাম পায়ে ধরিল
মরলাম মরলাম বলে রাধে
জমিনে পড়িল।
মরবে না মরবে না রাধে
মন্ত্র ভাল জানি
দুই-একখানা ঝাড়া দিয়া
বিষ করিব পানি।
আমারও অঙ্গের বিষ
যে ঝাড়িতে পারে
সোনার এ যৌবনখানি
দান করিব তারে।
এই কথা শুনিয়া কানাই
বিষ ঝাড়িয়া দিল-
ছেড়ে ছুড়ে রাধে তখন
গৃহবাসে গেল।
গৃহবাসে যেয়ে রাধে
আড়ে বিছায় চুল
কদম তলায় থাইক্কা কানাই
ফিইক্কা মারে ফুল।
বিয়া নাকি করো কানাই
বিয়া নাকি করো
পরেরও রমণী দেখে
জ্বালায় জ্বলে মরো।
বিয়া তো করিবো রাধে
বিয়া তো করিবো,
তোমার মতো সুন্দর রাধে
কোথায় গেলে পাবো?
আমার মতো সুন্দর রাধে
যদি পেতে চাও
গলায় কলসি বেঁধে
যমুনাতে যাও।
কোথায় পাবো হাড় কলসি
কোথায় পাবো দড়ি?
তুমি হও যমুনা রাধে
আমি ডুইবা মরি।
তুমি হও যমুনা রাধে
আমি ডুইবা মরি।
শাওন ও চঞ্চলের গাওয়া যৈবতী রাধে
সরলপুর ব্যান্ডের ‘যৈবতী রাধা’
<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js"></script>
<!-- protimuhurto -->
<ins class="adsbygoogle"
style="display:inline-block;width:728px;height:90px"
data-ad-client="ca-pub-8283151263697355"
data-ad-slot="4002346699"></ins>
<script>
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
</script>
গানটা দারুণ
উত্তরমুছুন