মৃত্যুপুরী গাজায় বাড়ছে লাশ, কাঁদছে বিশ্ব-মানবতা


বিশ্বমানবতার হুমকি হয়ে উঠেছে ইসরাইল। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকা এখন ইসরাইল এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফিলিস্তিনিদের লাশের সংখ্যা। গত দুই সপ্তাহে অব্যাহত   ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫শ’ ছাড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ৫০১ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।

ইসরাইলের বর্বরোচিত, অমানবিক এবং নারকীয় হামলা ফিলিস্তিনিদের জীবনের সবকিছু করে দিয়েছে ওলোটপালোট। পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম অধ্যুষিত জ্বলন্ত গাজায় ঝরছে প্রাণ। নারী-পুরুষ নিষ্পাপ শিশু কেউ রেহাই পাচ্ছে না। গাজা উপত্যকার মানুষ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভাবেন সেহরি পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন কি না। সেহরি খেয়ে রোজা রাখলে ইফতার করতে পারবেন কি না সে চিন্তা তাদের ভাবনায় ফেলে দেয়। তারাবির নামাজের সময় মসজিদে ড্রোন হামলা হবে কি না সেটাও তাদের অস্থির করে তোলে। সাধারণ মানুষ, নারী আর নিষ্পাপ শিশুদের রক্তাক্ত শরীর জানান দিচ্ছে কেউ রেহাই পাচ্ছেন না ইহুদি হায়নাদের হাত থেকে। গাজার গণহত্যার প্রধান ঘাতক বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লাগাম কেউ টেনে ধরছে না। বিশ্ববিবেককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি খুনের নেশায় মদমত্ত।


গাজায় গত ১৩ দিন ধরে ইসরাইলি হামলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে রোববার। এদিন অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে। নারী ও শিশুসহ যারা নিহত হয়েছে তাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার অদূরে অবস্থিত শেজাইয়া এলাকায় শেল হামলায় সেখানকার বেশিরভাগ বাড়িঘর ও স্থাপনাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

শেজাইয়াতে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মী। ইসরাইলি বোমা ও শেল থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে শেজাইয়ার হাজারো মানুষ।

ইসরাইলের এই মানবতাবিরোধী হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইসরাইলেও শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ। কিন্তু কোনো কিছুতেই কান দিচ্ছে না ইসরাইলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার।

গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃঢ মনোভাব জানেয়ে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন এই হামলা চলবে।’

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোববার হামাসের ১০ জনের একটি দল সুড়ঙ্গ দিয়ে ইসরাইলে ঢুকে পড়েছিল। গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দু’বার সুড়ঙ্গ পথে ইসরাইলে প্রবেশ করে সহিংসতার চেষ্টা চালিয়েছে হামাস, দুটি প্রয়াসই নস্যাৎ করা হয়েছে। গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন নাগরিকও নিহত হয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্র দফতর নিহতদের নাম প্রকাশ করলেও, তাদের পেশা সম্পর্কে কিছু জানায়নি। তবে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, দু’জনই ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
গাজা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে সারা বিশ্বে। রোববার জরুরি বৈঠক ডেকে ইসরাইল ও হামাসের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন গাজায় ইসরাইলের গোলা নিক্ষেপকে ‘অত্যন্ত ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করার পর নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসে। রোববার রাতে জর্দানের অনুরোধে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সবচেয়ে দুর্বলতম পদক্ষেপ ‘শুধু চাপ দেয়ার’ বিষয়ে একমত হয় এর ১৫ সদস্য দেশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধ বন্ধের প্রয়াসে তৎপর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও যুদ্ধ বিরতি কার্যকার করার জন্য শিগগিরই  কায়রো সফর করবেন বলে জানা গেছে। মিসর যে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল তাতে দু’পক্ষের সম্মতি আদায়ের লক্ষ্যেই কেরি মিসরের রাজধানীতে যাচ্ছেন বলে সে দেশের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে।

এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলের গাজা হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ হচ্ছে। রোববার খোদ ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরেও হয়েছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। প্যারিসে বিক্ষোভকারীরা ইহুদিদের কিছু দোকানপাটে লুটপাট চালায়।

লিংক এখানে > মৃত্যুপুরী গাজায় বাড়ছে লাশ, কাঁদছে বিশ্ব-মানবতা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)