খোলামত

 

মধুর আমার মায়ের হাসি...

মধুর আমার মায়ের হাসি...


প্রস্তুতি : খোলামত (প্রতিমুহূর্ত.কম)

মা কথাটি ছোট্ট অতি,
কিন্তু জানো ভাই- ইহার চেয়ে নামটি মধুর
ত্রিভুবনে নাই......

আজ আন্তর্জাতিক মা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে মা দিবস পালিত হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও যথাযথ মর্যাদায় প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে এ দিনে তেমন কর্মসূচি না থাকলেও কিছু কিছু সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মা দিবস পালন করে।

অনেক গবেষকের ধারণা, ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ। তবে মা দিবস উদযাপনের সূচনা করে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। শুরুতে প্রতি বছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসেবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতের শতকের কথা। মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন রূপে ঘোষণা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে 'মা' দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস।

কোন শব্দে এতো আকুলতা !! এতো আবেগ !! এক নিবিড় টান, শেকড়ের টান। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই যেন গৌণ। যে সম্পর্কের সঙ্গে আর কোনো তুলনা হয় না। মায়ের তুলনা মা নিজেই। একটি আশ্রয়ের নাম ‘মা’।

‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে আপন। সবকিছু পরিশোধ করা গেলেও মায়ের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। ‘মা’ শব্দটির বাংলা অর্থ জননী, গর্ভধারিণী, ধাত্রী, গুরুপত্নী, ব্রাহ্মণী, রাজপত্নী, শুশ্রুষাকারিণী, প্রতিপালিকা ইত্যাদি। ‘মা’ ডাকতে সবার খুবই মধুর লাগে। ‘মা’ তাঁর সন্তানকে খুবই ভালোবাসে।

দীর্ঘ দশ মাস ১০ দিন মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। মায়ের দেহে নিউট্রোপেট্রিক রাসায়নিক পদার্থ থাকায় মায়ের মনের মাঝে সন্তানের জন্য মমতা জন্ম নেয়, মায়ের ভালোবাসার ক্ষমতা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে আসার আগে  সন্তান মায়ের গর্ভে তিলে তিলে বড় হয়। মায়ের দেহ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে। এরপর সন্তান প্রসবের সময় মায়েরা যে কষ্ট অনুভব করে তা ‘মা’ ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। বাবা শুধু ভরণ-পোষণই দেয়। কিন্তু ‘মা’ সন্তানকে লালন-পালন করে।

সন্তানের সফলতা মায়ের সফলতা, সন্তানের ব্যর্থতা মায়ের হৃদয়কে ব্যথিত করে। বিশেষ করে যেসব মায়েদের সন্তান প্রতিবন্ধী। সেসব মায়েদের দুঃখের সীমা থাকে না। ‘মা’ সকল সন্তানকে একই চোখে সমান দৃষ্টিতে দেখে। অনেক প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে যাদের অবস্থা গুরুতর। ‘মা’ তাদের পাশে বসে থাকে। মানুষ হলে তার জন্য প্রতি মিলি সেকেন্ড, সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা বা প্রতিদিনই মা দিবস। আর মানুষ রুপে জন্ম নেওয়া অমানুষদের জন্য কখনোই না। একদিনের জন্য মাকে সম্মান, ভালবাসা দেখানো বা উপহার দেওয়া, তা হবে বিলাসিতা বা রসিকতা।

পশ্চিমারা বৃদ্ধাশ্রমে বাবা-মাকে বছরে একদিন দেখতে যায় কিছু উপহার হাতে নিয়ে। টাকা আমাদের কম থাকতে পারে, হতে পারি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র কিন্তু বাবা মায়ের প্রতি বাংলাদেশের মানুষদের ভালোবাসা তাদের চেয়ে কোটি লক্ষ গুণ বেশি। সেদিক থেকে আমরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি বিত্তবান। এ আমাদের গর্ব। আমাদের রয়েছে ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এক গৌরবময় অধ্যায়। আমরা হৃদয় ছুঁয়ে বলতে পারি, আমরা আমাদের মাকে ভালোবাসি। হাজারও না বলা কষ্ট স্বীকার করে মা গর্ভে ধারণ করে সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসে। এ ঋণ কোনোভাবেই শোধ করার নয়। শুধু তাই নয়, সন্তান জন্মের পর নিজের চেয়ে সন্তানই তখন হয়ে ওঠে মুখ্য। এভাবে সারাজীবন মা সন্তানকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন।

আলাদাভাবে ‘মা দিবস’ পালনের কথা না থাকলেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রতিনিয়তই মা’কে সম্মান জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

পবিত্র কোরানুল কারীমে বলা হয়েছে- ‘‘তোমরা আল্লাহ পাকের ইবাদত কর, মা-বাবার প্রতি সদয় ব্যবহার কর; যখন তাঁরা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছবে, তোমরা উহ্ তথা বেদনাদায়ক কোন শব্দ বলিও না।’’

সহি বুখারি শরিফে উল্লেখ করা হয়, ‘আবু হুরাইরা রা. বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা:) দরবারে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সুন্দর আচরণের সবচাইতে বেশি দাবিদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবারও জিজ্ঞেস করল এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।‘ (সহিহ আল বুখারী, এইচ এম সাঈদ কম্পানি, আদব মঞ্জিল, করাচি, কিতাবুল আদব, ২খ, পৃষ্ঠা ৮৮২)। হাদীস শরীফে আরও বলা হয়েছে- ‘‘মা’য়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত।’’

হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে-  মা-বাবার সেবা কর। খ্রিশ্চান ধর্মে বলা হয়েছে- পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করার কথা। মোদ্দাকথা পৃথিবীর সকল ধর্মে মা-বাবার সাথে কর্কশ ব্যবহার করাকে মহাপাপ হিসেবে ধরেছেন।

কবি-সাহিত্যিকরা মাকে নিয়ে মূল্যবান প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা লিখেছেন। রুশ লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ গ্রন্থটি সারা বিশ্বে সমাদৃত। ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো’-নেপোলিয়নের এই ঐতিহাসিক বাণীর উপলদ্ধি হতে মায়েরাই পারে উন্নত দেশ, সমাজ ও জাতি উপহার দিতে।

মা হারা ছেলে-মেয়েদের অনেকাংশই নানা মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে তারা প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়। সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ও চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকাই মুখ্য। জাতিকে শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত তাৎপর্যবহ।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য বিশেষ দিনগুলোর চেয়ে এ দিনটিতে সবচেয়ে বেশি ফোন কল হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিআইপি কমিউনিকেশন এর জরিপে দেখা গেছে, এ দিনটিতে নববর্ষের চেয়ে ৮ শতাংশ, ভালোবাসা দিবসের চেয়ে ১১ শতাংশ এবং হ্যালোয়েনের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি ফোন কল হয়। ভিআইপি কমিউনিকেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার রজার্স বলেন, আমরা ভিআইপি কমিউনিকেশনের ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রাহকের ফোন কল বিশ্লেষণ করে দেখেছি মা দিবসে মায়েদের কাছে সবচেয়ে বেশি কল যায়। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নববর্ষ বা ভালোবাসা দিবসের চেয়ে মা দিবসে ফোন কল বেশি হয়। দক্ষিণ আফ্রিকানরা মা দিবসে ফোন করে সবচেয়ে বেশি। তাদের ফোন কলের হার  এই দিন ৯১ শতাংশ বেড়ে যায়। যা অন্য বিশেষ দিনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও তারা অন্যদের চেয়ে এ দিনটিতে মায়েদের সাথে ফোনে বেশি সময় ব্যয় করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঘানার অধিবাসীরা। বিশ্বে মাত্র দুটি দেশ মিসর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মা দিবসে ফোন কলের সংখ্যা কমছে।

মা দিবস মায়েদের আরো সচেতন করে সার্বিক শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে, আদর্শ মা হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং মাতৃত্বসুলভ উন্নত মননশীলতার জন্ম দেবে: যার পরোক্ষ ফল হিসেবে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আগামী প্রজন্ম পাবে একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।

দেশের সার্বিক শিক্ষা প্রসারের মূল নেপথ্য শক্তি মায়েদের সচেতন করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মা দিবসে বিশ্বের সমস্ত মায়ের প্রতি ভালোবাসা

আজ যেন সীমানা বিহীন ভালোবাসার একটি দিন।
আজ বিশ্ব মা দিবস , যে ভালোবাসায় বাঁধি খেলাঘর।
আজ যেন পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দ বলার একটি দিন।

"আমার মা-কে খুব মনে পড়ছে। তোমাকে খুব ভালোবাসি মা" ।

লেখা : আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের
উৎসর্গ : শাহানা রহমান (আমার মা)
এজে- ১২/৫-৩

---------------------------------------------------------------

 

নারীবাদ বনাম নারী স্বাধীনতা

নারীবাদ বনাম নারী স্বাধীনতা


 প্রস্তুতি : খোলামত (প্রতিমুহূর্ত.কম/ protimuhurto.com)

আমরা অনেকেই নারীবাদ আর নারী স্বাধীনতা বিষয়টি এক করে ফেলি। কিন্ত এ দুটি বিষয়ের মধ্যে আছে বিস্তর ফারাক।



সহজভাবে নারীবাদ বলতে বোঝায়, আজকের পুরষতান্ত্রিক সমাজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে পুরুষেরা তা পাল্টে দিয়ে পুরুষের ভূমিকায় নারীর অবরতীর্ণ হওয়া। যেখানে নারীই হবে সমাজের নিয়ন্ত্রক আর পুরুষরা হবে নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে নারী স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। যে সমাজ ব্যবস্থায় একজন পুরুষ সমাজে নিজের দক্ষতা আর মেধার যে মর্যাদা পায়, তেমনি নারীও পাবে সমান মর্যাদা আর গুরুত্ব।



এ দেশে নারীর অধিকার অর্জনে কিংবদন্তি বেগম রোকেয়া আর সুফিয়া কামাল কখনোই নারীবাদে বিশ্বাস করতেন না। তারা বিশ্বাস করতেন নারী স্বাধীনতায়। যে সমাজে নারীপুরুষের থাকবে সমান অধিকার। পুরুষ নারীকে সম্মানের চোখে দেখবে, নারীও পুরুষকে দেবে যথার্থ সম্মান। কেউ কাউকে হেয় করবে না। সবাই কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে, একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। একে অন্যের প্রতি সম্মান বজায় রাখবে। এরকম একটি সম-অধিকারের সমাজই ছিল বেগম রোকেয়া আর সুফিয়া কামালের স্বপ্ন।



নারীবাদ হলো পাশ্চাত্যের উগ্র মতবাদ। যদিও বলা হয়ে থাকে, একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকারের দাবি হলো নারীবাদ। কিন্তু এ তত্ত্বের আড়ালে আছে, পুরষের বিরুদ্ধে নারীর প্রাধান্য স্থাপন। পুরুষতন্ত্রের ঠিক বিপরীতে যার অবস্থান।



আজকের আধুনিক নারীরা তাই ‘নারী স্বাধীনতা’-তে বিশ্বাস করে, নারীবাদের উগ্র তত্বে নয়। নারী স্বাধীনতা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আর নারীবাদ নিয়ে যাবে পেছনের দিকে।
লেখক : লতিফা লতা, ফেলো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)