বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন, কেন হয়? কিভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত ? মুক্তি যেভাবে...
বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন কেন হয়? কিভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত? মুক্তি মিলবে
যেভাবে
বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন, একধরনের
মানসিক ব্যাধি। যাপিতজীবনের নানা জটিলতায় দিন
দিন বিষন্নতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।কিন্তু বিষন্নতা যে একটি রোগ সেটা অনেকে বোঝেন
না বা বুঝলেও তা স্বীকার করতে চান না। বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ কোনো কিছুতেই উৎসাহ পান
না। সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি নিজ পরিবারের একান্ত আপনজনদের সঙ্গে
সহজভাবে মেলামেশা করতে পারেন না। ঠিকমতো কারও সঙ্গে কথা বলেন না, চুপচাপ একাকী দিন
কাটান। ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা মানুষের অনুভূতি, চিন্তাচেতনা ও কাজকর্মের ওপর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে। এটি মানুষকে অক্ষমতার দিকে ঠেলে
দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনডেক্সে বলা হয়েছে- দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অপরাধবোধ,
বিরক্তি, ক্লান্তি, অমনোযোগিতা, অনিদ্রা, খাওয়াদাওয়ায় উদাসিনতা, আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে
ফেলা, নিজেকে মূল্যহীন মনে হওয়া এসব বিষয়কারো মাঝে প্রবলভাবে দেখা গেলে তাকে ডিপ্রেশন
বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। সংস্থাটির হিসেবে বিশ্বে
বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। বাংলাদেশে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান
না থাকলেও সংখ্যাটা নেহাত কম না এবং দিন দিন তা বাড়ছে।
মাইন্ডসেট সাইকোথেরাপি অ্যান্ড কাউন্সেলিং সেন্টারের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট
ও সাইকোথেরাপিস্ট ফৌজিয়া শারমীন হোসেন জানান, বিষণ্নতা দুধরনের। স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী।
নানা জটিলতায় কখনো না কখনো স্বল্পস্থায়ী বিষণ্নতায় আমরা সবাই ভুগে থাকি। এটা হলো সাময়িক
মনখারাপ। যা অল্প কিছু সময় পরই ঠিক হয়ে যায়,
এটা নিজে থেকেই কাটিয়ে ওঠতে পারি। এর জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘমেয়াদি
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতাকেই মুলত: মানসিক ব্যাধি বলা হয়ে থাকে।যা মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত
করে তুলে।এ থেকে মুক্তি পেতে উপযুক্ত চিকিৎসার ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেন, মানুষ বিষণ্নতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জীবনযাপনের একপর্যায়ে
এতে আক্রান্ত হয়। টিনএজ বা উঠতি বয়স থেকে শুরু করে প্রবীন বয়সের যে কোনো সময় মানুষ
বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে। কেন এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে কিছু কমন
কারণ আছে, যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। যেমন: মানসিক বা শারীরিকভাবে অবমাননার
শিকার হলে, সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে।পরিবার,স্বামী-স্ত্রী, বন্ধুবান্ধব
বা কাছের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা বা মতবিরোধ থেকেও অনেকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন।
জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে অনেকে বিষণ্নতায় ভোগেন। হঠাৎ কর্মহীন হলে, চাকরি
হারালে, অবসরে গেলে, আয় কমে গেলে, জায়গা পরিবর্তন করলে, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে, এমনকি নতুন
বিয়ে করলেও অনেকে ডিপ্রেশনের শিকার হয়। কাছের মানুষের মৃত্যু অনেকের ক্ষেত্রে বিষণ্নতার
ঝুঁকি বাড়ায়। বড় ধরনের কোনো রোগ থাকলেও রোগী বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে নিজের চেষ্টা থাকতে হবে। সেইসঙ্গে
প্রয়োজন পরিবার ও আশেপাশের মানুষদের সহায়তা। প্রতিদিনের কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া, জীবনপ্রণালী
এমনকি চিন্তা-ভাবনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও চিকিৎসার পাশাপাশি
নিজের চেষ্টা না থাকলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বিষন্নতা কাটাতে প্রতিদিন জীবনকে একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।লক্ষ্য
নির্ধারণ করে প্রতিদিনের কাজ করতে হবে। নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোনো
কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার মজার বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া।পর্যাপ্ত
ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীরা নিদ্রাহীনতায় ভুগেন।প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু
পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ
করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে।
প্রতিদিন অল্পকিছু সময় ব্যায়াম করলে শরীর এবং মন সুস্থ থাকবে। সুষম খাদ্য
গ্রহণে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিড
থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।
বিষণ্নতায় ভুগলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে
থাকে। নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে।
যুক্তি দিয়ে সবকিছুর বিচার করতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্নতায় আক্রান্তদের অবশ্যই মনো্বিজ্ঞানী বা সাইকোলজিস্টদের
পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কিছু থেরাপি নিতে হবে। ডিপ্রেশন পুরোপুরি না ভালো
হওয়া পর্যন্ত তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ও জীবনযাপন চালিয়ে যেতে হবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন