হার্ট অ্যাটক কেন হয়? লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা!
হার্ট অ্যাটক কেন হয়? লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা!
একটা সময় মনে করা হতো কেবল প্রবীণদেরই হার্ট অ্যাটাক হয়, কিন্তু তা ঠিক নয়। বর্তমানে তরুণদেরও হার্ট অ্যাটাক হতে দেখা যাচ্ছে।তবে তরুণদের তুলনায় ৪০ বছর বয়সের পর হার্ট অ্যাটাকটা বেশি হয়। তবে সত্যি বলতে কি, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের এখন আর কোনো বয়স নেই। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ২৫ ভাগেরই বয়স ৫০ বছরের কম। পরিশ্রম কমে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার,অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, মদ্যপান ও ধূমপানের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থেকেও হার্টের রক্তনালি ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম কম করা, চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং শরীরের ওজন বেশি থাকার কারণেও বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা।যাদের পরিবারে আগে হার্টের রোগী আছেন তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। আসলে হৃদরোগকে জেনেটিক রোগও বলা যেতে পারে। এই রোগের ঝুঁকি ডিএনএর মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে যায়।
নানা কারণেই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক এর চিকিৎসা করাতে না পারলে তৈরি হয় ঝুঁকি।তাই এজন্য সচেতন থাকা সবার জন্যই খুব জরুরী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, দেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশরাফ-উর-রহমান (তমাল) জানান, হার্ট বা হৃদযন্ত্র রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় পাম্প হিসেবে কাজ করে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো সেই নালী সংকুচিত হয়ে যাওয়া।হার্টের নিজস্ব রক্ত সরবরাহ হঠাৎ কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকলে হার্টের পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক পর্যায়ে আক্রান্ত পেশিগুলো অকেজো হতে শুরু করে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে হার্টের পেশীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।হার্টের একটি বড় অংশ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই ঘটনাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়।
হার্টে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান রক্তনালীগুলোকে করোনারি আর্টারি বা ধমনি বলা হয়। হর্টের প্রধান আর্টারি বা ধমনি হলো তিনটি। কোনো কারণে যদি এসব ধমনির কিছু অংশ বা পুরোপুরি ব্লক হয়, তাহলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। পার্সিয়াল বা অংশত ব্লক হলে তাকে অ্যানজাইনা পেকটোরিস বলা হয়। আর সম্পূর্ণ ব্লক হলে তাকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক।মূলতঃ করোনারি ধমনির ভেতরে কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। জমাট বাঁধা এসব কোলেস্টেরলকে প্ল্যাক বলা হয়। হার্ট অ্যাটাকের ঠিক আগে এমন একটি কোলেস্টেরল প্ল্যাক ফেটে যায়। ফলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে। এই জমাট বাঁধা রক্ত হার্টের রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে।
তিনি জানান, হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ বুকে ব্যথা হওয়া।বুকের ব্যথা একসময় বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চোয়াল, পেটেও ব্যথা হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের তীব্রতা বেশি হলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কাশি হতে পারে। প্রেশার কমে গিয়ে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমিও হয়। বুকের ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
ডা. তমাল জানান, হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগী যেকোনো সময় মারা যেতে পারে। বুকে ব্যথা অনুভূত হলে বা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ মনে হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। রোগী যেন বেশি নড়াচড়া না করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। রোগী যদি জ্ঞান হারায় বা শ্বাস নিচ্ছে না এমন হলে সঠিক নিয়মে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআর দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ অ্যান্টি প্লাটিলেট ড্রাগ দেওয়া যেতে পারে, যা রক্ত তরল করার জন্য ও ধমনিতে রক্ত প্রবাহে বাধা কমাতে সহায়ক।
তিনি আরও জানান, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষার করতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে, চর্বি না জমে সেজন্য রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা ও রক্ত তরল করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। প্রেশার, গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস, কোলেস্টরেল থাকলে, ঘুম না হলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। একই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।
ডা. আশরাফ-উর-রহমান (তমাল) জানান, হার্ট অ্যাটাকের পর অ্যানজিওগ্রাম করা যেতে পারে, আবার পরেও করা যেতে পারে। অ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে দেখতে হবে হার্টের ব্লক আছে কি না। যদি বেশি ব্লক থাকে, তাহলে বাইপাস করতে হবে। আর যদি কম ব্লক অর্থাৎ একটা বা দুইটা ব্লক থাকে তাহলে রিং পরানো যেতে পারে। হার্টের চিকিৎসায় রক্তনালীর ব্লক দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।দেশের অনেক হাসপাতালেই বর্তমানে করোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ রয়েছে। এসব হাসপাতালে হার্টে স্টেইন বা রিং পরানোর ব্যবস্থা আছে। বাইপাস বা ওপেন হার্ট সার্জারিও করা হচ্ছে।যদিও তা খানিকটা ব্যয়বহুল।তাই খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশে এখন হৃদরোগ চিকিৎসার সর্বাধুনিক সব ব্যবস্থাই রয়েছে।
তিনি বলেন,হার্টের রোগীদের কিছু ওষুধ আজীবন খেতে হবে। ধুমপান বা মদ্যপান পুরোপুরি ছাড়তে হবে। খাওয়া-দাওয়া ও লাইফস্টাইলে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। চর্বিজাতীয়, তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়াতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। প্রতিদিন হাটতে হবে, শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। কিছু ফ্রি এক্মারসাইজ বা ব্যায়াম আছে, নিয়মিত তা করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। রুটিন ভিত্তিক জীবনযাপনে গুরুত্ব দিতে হবে।
[নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম, বিনোদন ও লাইফস্টাইল ভিডিও দেখতে প্রতিমুহূর্তের ফেসবুক পেইজ দেখা ও ফলো করা আমন্ত্রণ, লিংক- https://www.facebook.com/Protimuhurto]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন