মনের গোপন ঘরে ভয়াল ব্যাধি `সিজোফ্রেনিয়া’


মনের গোপন ঘরে ভয়াল ব্যাধি `সিজোফ্রেনিয়া’

 

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক ব্যাধি বা সাইকোটিক ডিজঅর্ডার। মনের এ অসুখে আক্রান্ত রোগীর চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও ব্যক্তিসম্পর্ক মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।  হয়তো আমাদের মধ্যে কিংবা আমাদের আপনজনদের মধ্যেই আছে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি।  যেহেতু শরীরের  নয়, এটা মনের অসুখ- তাই চট করে ধরা মুশকিল। আসলে সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি মানসিক রোগ,  সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এমনকি সহিংসতা, হত্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। সঠিক সময়ে এ রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া হলে এটি নিরাময়যোগ্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে সিজোফ্রেনিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ। বাংলাদেশে এর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন জানান, সিজোফ্রেনিক রোগীরা দিন দিন একা হয়ে যায়। সমাজ ও বাস্তবতা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আচার-আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। নিজেদের মন, চিন্তাশক্তি, অনুভূতি বা ইচ্ছেশক্তি কোনো কিছুতেই তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তার মধ্যে বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়। গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। যা ঘটেনি বা যা নেই এমন জিনিসে বিশ্বাস করে। কোনো কারণ ছাড়া একাই হাসে, একাই কাঁদে। নিজের সঙ্গে বা কাল্পনিক কোনো চরিত্রের সঙ্গে একা একাই  বিড়বিড় করে কথা বলে। নিজেই পুরোপুরি আলাদা এক কাল্পনিক জগত তৈরি করে তার ভেতর ঢুকে পড়ে।

সিজোফ্রেনিয়ার রোগী এমন কিছু বিশ্বাস করে যার বাস্তব ভিত্তি নেই। যেমন: অশরীরী কারও দেখা পাওয়া এবং তার সঙ্গে কথা বলা,  সবাইকে সন্দেহ করা, সবাই তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এমন অনেক ভ্রান্ত ধারণা তাদের মধ্যে থাকে। যার কারণে কখনো কখনো সে হয়ে ওঠতে পারে আগ্রাসী বা আক্রমনাত্বক।

মনের জটিল এ অসুখে আক্রান্ত রোগী কখনো মানতে চায় না যে তিনি অসুস্থ। নিজেকে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ দাবি করেন সবসময়।

সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় তার কারণ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না কোনো বিশেষজ্ঞই। তবে জেনেটিক বা বংশগত কারণে এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে দেখা দেয় বলে গবেষকরা মনে করেন। যেমন মা কিংবা বাবার এই রোগ থাকলে সন্তানের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় বিশ শতাংশ। পাশাপাশি পরিবেশগত কারণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, পারিবারিক কারণ, বিকাশজনিত সমস্যা- এসবও সিজোফ্রেনিয়া রোগের জন্য দায়ী। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং পুরুষের মধ্যে এ রোগের হার কিছুটা বেশি।

ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন বলেন, আগে সিজোফ্রেনিয়া রোগকে মানসিক রোগের ক্যান্সার বলা হতো। মনে করা হতো, একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে আর রক্ষা নেই। এ ধারনা ঠিক নয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, সঠিক সময়ে এ রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেওয়া হলে এটি নিরাময়যোগ্য। এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ (অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিকেশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ওষুধ ছাড়া এ রোগের উপসর্গের উপশম সম্ভব নয়। অনেক সময় রোগীরা ভালো হয়ে যাওয়ার পর ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ায় ফের রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় এবং চিকিৎসা জটিলতা বৃদ্ধি পায়। এ জন্য আজীবন ওষুধ খেতে হবে আর মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। পাশাপাশি নিয়মিত সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিং সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে এ রোগের  চিকিৎসায় পরিবারের সদস্যদের ইতিবাচক ভূমিকা এবং তাদের সহানুভূতি-সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা, ধারাবাহিক সাইকোথেরাপি ও প্রশিক্ষণে সিজোফ্রেনিক রোগী সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

কাজেই কারো মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা গেলে ভয় না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

[নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম, বিনোদন লাইফস্টাইল ভিডিও দেখতে প্রতিমুহূর্তের ফেসবুক পেইজ দেখা ফলো করা আমন্ত্রণ, লিংক- https://www.facebook.com/Protimuhurto]

 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আনিসুল হক

সমূদ্র থেকে নদীতে ইলিশ কেন আসে?

বাংলাদেশের সকল নিউজ সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন আরটিভি অনলাইনে