কালের ধূলোয় বিলীন অনন্য নির্মাণশৈলীর নিদর্শন কলমা জমিদার বাড়ি
বহু বছর আগেই
জমিদারদের জমিদারিত্ব
শেষ হয়ে গেছে। তবে দেশের আনাচেকানাচে
এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের স্মৃতিচিহ্ন- জমিদারদের ধসে পড়া প্রাসাদ, বিলাসীভবন। কালের
ধূলোয় ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে টিকে আছে ভবনগুলোর ধংসাবশেষ। এসব ভবনের প্রায় সবই এখন
পরিত্যাক্ত, বসবাসের অযোগ্য। এমনই একটি ভবন লক্ষীকান্তের জমিদার বাড়ি। বিক্রমপুর মানে আজকের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কলমা
গ্রামে এর অবস্থান।
বিক্রমপুর একসময়
ছিল সমৃদ্ধ জনপদ।দক্ষিণপূর্ব বঙ্গের প্রাচীন রাজধানী। অবশ্য মূল শহরের ধ্বংসাবশেষ পদ্মার
গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবুও মুন্সীগঞ্জের নানাপ্রান্তে এখন টিকে আছে সেই
পুরনো বিক্রমপুরের কিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষ। এ অঞ্চলের বিখ্যাত বালাসুর ও ভাগ্যকূলের জমিদার
বাড়ির তুলনায় প্রায় অপরিচিত কলমার
লক্ষীকান্তের জমিদার
বাড়ি। অপরূপ কারুকাজ আর ভবনের দেয়ালে লেখা বাণীর জন্য এটি আলাদা বৈশিষ্ট্যময়
। এই বাণী
থেকে পরিচয় মিলে এই
জমিদারের শিক্ষা ও রুচির
গভীরতা।
কলমার
জমিদার বাড়িটি ১৯৮৯ পর্যন্ত ব্যবহার হয়েছে পাশের এল
কে স্কুলের শিক্ষকদের নিবাস হিসাবে।
এখন এটি সম্পূর্ণ
পরিত্যক্ত। ধারণা
করা হয়, জমিদার লক্ষীকান্ত আঠারশ’ শতকের মাঝামাঝি সময়ে খুব সম্ভবত ১৮৭০-৮০ সালের মধ্যে এই অট্টালিকাটি নির্মাণ
করেন। পরে তার দুই পুত্র
রাজ কুমার ও তারাকান্ত
১৯০১ সালে এই ভবনে প্রতিষ্ঠা করেন বাবার নামে একটি স্কুল। সেটিই এখনকার কলমা এলকে উচ্চ
বিদ্যালয়। এলকে মানে লক্ষীকান্ত। জমিদারের
পুরো নাম শ্রী লক্ষী
কান্ত দাশ চৌধুরী।
স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল রাজ
কুমারের চার ছেলের ওপর। ভবনের গায়ে লেখা আছে তাদের নাম সেবক জ্ঞানেন্দ্র কামিনী ভূপতি দক্ষিণ। বিদ্যোৎসাহী
এই চারজনের পুরো নাম জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র,
কামিনী রঞ্জন, ভূপতি চন্দ্র,
দক্ষিণা রঞ্জন। এই জমিদারদের
এক বংশধর যোগেন্দ্র চন্দ্র
দাশগুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের
একজন সংগঠক। স্বদেশী আন্দোলন গড়ে তোলা অনুশীলন সমিতির আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে একসময় বাড়িটি ব্যবহার করা হতো।
কথিত আছে, দেশভাগের সময় এই
জমিদার পরিবারে সবাই এ অঞ্চল ছেড়ে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে এই বংশের কোনো প্রতিনিধিই এখানে আর আসেননি।
বর্তমানে কলমার
এই জমিদার বাড়িটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। খসে
পড়েছে চুন সুড়কির দেওয়ালের নানা অংশ।উধাও হয়েছে অট্টালিকার অমূল্য সব কারুকাজ।পুরো বাড়িটিকে জড়িয়ে ধরছে পরজীবী আগাছা। হারিয়ে
গেছে এই ভবনের অতীত সৌন্দর্য্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন