মিডিয়া

এটিএন নিউজ থেকে আবেদ খানের পদত্যাগ

এটিএন নিউজ থেকে আবেদ খানের পদত্যাগ


প্রস্তুতি : মিডিয়া (প্রতিমুহূর্ত.কম/ protimuhurto.com) ---

খ্যাতিমান সাংবাদিক আবেদ খান এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ।এই স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলটিতে কর্মরত অবস্থায় নানাভাবে তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময় তিনি কীভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, তা তুলে ধরেছেন পদত্যাগ পত্রে। পদত্যাগপত্রের কপি তিনি গণমাধ্যমের কাছেও পাঠিয়েছেন। নিচে এটিএন নিউজের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো আবেদ খানের পদত্যাগ পত্র হুবহু তুলে ধরা হলো। 




 


===========
বরাবর
চেয়ারম্যান
এটিএন নিউজ লি.
ঢাকা


পদত্যাগ পত্র


জনাব,
গত বছর জুলাই মাসে আমি এটিএন নিউজ-এ যোগদান করি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে। যথাযথ দায়িত্বপালন করতে এসে বিগত নয় মাসে এখানে আমি যেসব বাধার পাহাড় টপকানোর চেষ্টা করেছি, তার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, যে কোনো কারণেই হোক আমাকে সেই সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। বরং এর বিপরীতে দু:খের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে আগে থেকে প্রবহমান অস্থির পরিবেশকে জিইয়ে রাখা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। 


সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমি প্রতিষ্ঠানটির জন্য যখনই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছি, তখনই নানাভাবে আমাকে বিব্রত করা হয়েছে, ক্ষমতাশূন্য করা হয়েছে। এসব কথা বিভিন্ন সময়ে আপনাকে আমি অবগত করেছি। আমি মনে করি, এ সবই হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অথবা পরোক্ষ ইন্ধনে। নইলে ‘সকল দায়িত্বপ্রাপ্ত’ জাতীয় পদাধিকার দিয়ে কাউকে নিয়োগের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাকে ‘দায়িত্বশূন্য’ করা হবে কেন? এসব বিবিধ সমস্যার কথা আপনাকে আমি প্রায়শই জানাতাম। মনে করতাম, এটিএন নিউজ-কে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সংবাদচ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং এর কর্মপরিবেশের একটি সুস্থ সুন্দরধারা ফিরিয়ে আনতে আপনি হয়তো আন্তরিক হবেন, ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন। তাই ধৈর্যধারণ করেছি, অপেক্ষা করেছি আপনার ভূমিকার জন্য কিন্তু তাতে হতাশ হয়েছি।


আপনি জানেন, এ প্রতিষ্ঠান গুটিকয়েক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটির ভারী বাতাসের ভেতরে এখানে স্বস্তির নিঃশ্বাসে কাজ করতে পারে না বেশির ভাগ কর্মী। যাদের কারণে এখানকার বাতাস ভারী হয়ে থাকে, তাদের কাছে নতজানু না-হয়ে কেউ টিকতে পারে না এখানে। স্বাভাবিকভাবেই কর্মীদের মাঝে সুন্দর নির্মল কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট ছিলাম আমি। ফলে আমাকে আরো বেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। এ কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যথিত হলেও প্রকৃত ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের মুক্তপ্রাণ মেধাবী কর্মীদের এবং এর কর্মপরিবেশের।


আপনি জানেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে আমার কাছে সব ধরনের অফিসিয়াল ফাইল পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করা হতো। অফিসিয়াল কাজ সুষ্ঠুভাবে দেখভাল কিংবা সম্পাদনা করার পরিবেশ ব্যহত করা হতো ইচ্ছেকৃতভাবে। আমার অফিসরুম একবার তছনছ করা হয়, বিষয়টি আপনাকে অবগত করা হলেও তার সুরাহা হয়নি। এমনকি এসব সমস্যা সমাধানে আপনি আমাকে বারবার আশ্বস্ত করলেও তা বাস্তবায়নে কোনো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়নি। সর্বশেষ আমার অবর্তমানে (রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কলকাতা সফরের সময়) গত ১৬ এপ্রিল ’১৩ তারিখে আপনি আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন বলে জানতে পারি। চিঠিটি আমার হাতে পৌঁছানোর আগেই এর অনুলিপি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের পরিপন্থী এবং ব্যক্তি আত্মমর্যাদার ক্ষেত্রে অবমাননাকর। ঊধ্বর্তন পর্যায়ে বিশ্বাস ও ভদ্রতার সীমা রেখে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করার যে রীতিনীতি রয়েছে, এটা তারও পরিপন্থী। 


এখানে আমাকে যেভাবে দিনের পর দিন দায়িত্বহীন প্রমাণ করার পাঁয়তারা চলছিল, তা কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। অথচ আমার প্রতি পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছে অফিসে ঠিকমতো সময় না দেওয়ার। এটাকে বলা যায়, খেলার মাঠে বড় খেলোয়াড়কে ডগআউটে বসিয়ে রেখে বলা যে, এবার তো আপনার ভালো পারফরমান্স দেখলাম না। আমার প্রতি এটিএন নিউজের এমন অমর্যাদাকর আচরণ আমাকে ক্রমাগত নিদারুণভাবে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।


যেহেতু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম, সেহেতু সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো কাজ করতে চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থেই। আমার আন্তরিকতা ও সেই চেষ্টার ছাপ, যাঁরা প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত হিতাকাঙ্খী ছিলেন, তাঁরা সবচেয়ে ভালো জানেন। তাঁরা আমার জন্য ব্যথিত হবেন, কষ্ট পাবেন, আমি ক্ষমাপ্রার্থী তাঁদের কাছে।


প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোবেসে এর ক্ষয়ের বিরুদ্ধে এককভাবে লড়ে গিয়েছিলাম, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এ পত্রে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি এখন অপারগ হয়ে আপনার কাছ থেকে অব্যহতি চাইছি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অতি সত্ত্বর অব্যাহতি দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।

আবেদ খান
উত্তরা, ঢাকা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)