বিলুপ্তির পথে কাসা-পিতল শিল্প
প্রস্তুতি: সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)
এক সময়ে কাসা-পিতল শিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আধুনিকতার ছোয়ায় এ শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্প পরিবার গুলোরও দূর্দশার শেষ নেই। মেলামাইনের কারণে কাসা-পিতল শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে।
ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়ায় প্রায় ২০টি কাসা কারখানা বন্ধ হলেও এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ধরে রেখেছে কয়েকজন কারখানার মালিকরা। বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের উপহার, অতিথি আপ্যায়নে কাসা পিতল শিল্পের তৈরি সামগ্রীর কোন বিকল্প ছিলনা একসময়।
কাসা পিতল শিল্পের তৈজষপত্রের চাহিদার কারণেই কুষ্টিয়ায় এক সময়ে গড়ে উঠেছিল ২০/২৫টি কাসা কারখানা। কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর ধারে বড় বাজার ঘোড়া ঘাটে গড়ে উঠেছিল এসব কারখানা। এসব কারখানার পাশ দিয়ে পথচারী যাওয়ার সময় কাসা পিতল তৈরির হাতুড়ির ঠাস ঠাস শব্দে মানুষ কানে আঙুল দিয়ে হাঁটতো। কাসা-পিতল কারিগরদের হাতুড়ি আর যন্ত্রপাতির টুং টাং শব্দে যেন কানে তালা লেগে যেত।
সে সময়ে কুষ্টিয়ার উৎকৃষ্ট মানের কাসা- পিতল সামগ্রী, থালা, কলসি, ড্যাগ, জগ, বালতি, কড়াই, বদনা, ঘটি বাটিসহ নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর সুনাম ছিল দেশজুড়ে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেলামাইন তৈরি হওয়ায় কদর কমেছে এ শিল্পের তৈজষপত্রের।
প্রয়োজনীয় পূজির অভাব, কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, কাসা পিতলের আসবাবপত্র ব্যবহারে মানুষের অনীহাসহ বিভিন্ন কারনে শত বছরের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কুষ্টিয়ার ২৫/৩০টি কাসা পিতল কারখানা। বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা হিসেবে এখনো অনেক শ্রমিক এই পেশায় জড়িয়ে থাকলেও তারা রয়েছে খুবই কষ্টে।
এই সম্পর্কে কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাজারে কাসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর কমে যাওয়ায় মালিকরা কারখানা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন মাত্র কয়েকটি কারখানা রয়েছে। এখানে কাজ করে এখন আর তেমন আয় হয়না। যে টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চলছে খুবি কষ্টে।
বর্তমানে কাচামালের সংকট থাকায় বাহির থেকে কাচামাল আসছেনা। ফলে কাজ কমে গেছে। যতটুকু কাচা মাল আমদানী করা হচ্ছে তা দিয়ে কোন রকমে কাজ চলছে। প্রায় ২৬/২৭ বছর ধরে এই কাসা-পিতল শিল্পের সাথে জড়িত। এক সময় এই শিল্পের কদর ছিল।
এছাড়া বর্তমানে মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে আসায় কাসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর আর নেই। আগে শত শত শ্রমিক এই কাসা শিল্পে কাজ করে ভালোভাবে সংসার চালালেও এখন আর আয় না থাকায় শ্রমিকরা পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
কাসা-পিতলের কাচামাল একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হলে পথের মাঝে পুলিশ-বিডিআর-এর ঝামেলার কারনে কাচা মাল সংগ্রহে হিমসিম খেতে হয়। তাছাড়া কাসা-পিতলের তৈজসপত্র পাশ্ববর্তী ভারতে পাচার হওয়ায় এ শিল্প চরম ভাবে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। কুষ্টিয়ার তৈরী কাসা-পিতল উন্নতমানের হলেও তা বাহিরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। যে কারনে এই ব্যবসা দিনদিন ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি এ শিল্পের উপর একটু সহযোগীতা করতো তা হলে পুরাতন এ পেশা আবারও ফিরে পেত তার যৌবন।
এ বিষয়ে কাসা-পিতল তৈজসপত্র ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কাসার তৈরী থালা, বাটি, ঘড়া, জগ, ড্যাগ, চামচ এর কদর এখনো রয়েছে। মেলামাইনসহ অন্যান্য শিল্পে সরকার যেভাবে সাহায্য সহযোগীতা করছে তেমনি ভাবে কাসা পিতল শিল্পে সহযোগীতা করলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। মেলামাইনের কারণে ও অন্যান্য সমস্যার কারণে বন্ধ হওয়ার পথে এ শিল্প। কাসার ব্যবহার না থাকায় এগুলো চলে যাচ্ছে ভারতে। ফলে কাসা শিল্প শূণ্য হচ্ছে কুষ্টিয়া।
এই শিল্পে যদি প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা না দেওয়া যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কাসা পিতল শিল্পের ব্যবহার একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তাই কাসা-পিতল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারে হস্তক্ষেপ কামনা করছে এ শিল্পের সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা।
লেখা: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, নিউজরুম এডিটর
এইচএস/এজে- ১৮/৫-১
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন