জামালপুর জিলা স্কুলের সম্পত্তি অবৈধ দখলের চেষ্টা


প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

হযরত শাহ জামাল (রঃ) এর পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত জামালপুর জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মাধমিক বিদ্যালয়ের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জামালপুর জিলা স্কুল। এই বিদ্যালয় জেলার শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

জামালপুর জিলা স্কুলের বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ১৬০০ (প্রায়) এবং যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা দুটি শিফটে বিভক্ত করে শিক্ষকগণ বিদ্যাদান করে আসছেন। সুনাম, ভালো ফলাফল এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য অধিকাংশ ছাত্রই এখানে শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাস্থানের শীর্ষ ছাত্ররাই শুধুমাত্র এই বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তারপরও বিদ্যালয়টির অবকাঠামো বড় না হওয়ায় অনেক মেধাবী ছাত্র এখানে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না।
 

দেশের নামকরা একটি বিদ্যাপীঠ হয়েও বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। তাছাড়া একেবারে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত হওয়ায় বিদ্যালয়টির বেশকিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সুষ্ঠু বিদ্যাদানের জন্য চাই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ কিন্তু বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভবন সম্প্রসারণ কোন কালেই সম্ভব নয়। কারণ এর অন্যপাশে রয়েছে জেলার প্রধান সড়ক। বিদ্যালয়ের নেই কোন নিজস্ব অডিটোরিয়াম। ছাত্রদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দূরবর্তী অবস্থানে অবস্থিত হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্রই তাদের প্রাকৃতিক ও শারীরিক চাহিদা, খেলাধুলা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে পৌর ভবন, এর মাঝে কিছু পুরাতন ঘরবাড়ি পড়ে আছে। অন্যদিকে পশ্চিম দিকে আছে খোলা একটি মাঠ যা সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত মাঠের জমির পরিমান ৬৬ শতক। যার পূর্ব দিকে জিলা স্কুল, পশ্চিমে সরকারী বাসভবন, উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ, দক্ষিণে জিলার প্রধান সড়ক।

২০০৩ সালে জিলা স্কুলের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভুমি মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়ের অনুকূলে উক্ত জমি খানা দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদান করে। তৎকালীন সময়ে জমির মূল্য ধার্য্য করা হয়েছিল প্রায় ৮ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ভূমি অফিস হতে এ মূল্য পরিশোধ করে দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত ১০ বছর যাবৎ প্রধান শিক্ষকগণ মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে উক্ত টাকার আবেদন করে ব্যর্থ হন।

বর্তমান প্রধান শিক্ষক ২০১২ সালে উক্ত জমির প্রতীকী মূল্য বরাদ্দের জন্য ভূমি মন্ত্রনালয়ের নিকট আবেদন করেন। ভূমি মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অনুমতিক্রমে ১০০১ টাকা প্রতীকী সেলামি ধার্য্য করে এ মূল্য পরিশোধের পর জমিটির দলিল প্রদান করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের আলোকে বিধি অনুযায়ী সব কাজ শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রধান শিক্ষক ০৬-০২-২০১৩ ইং তারিখে দলিলে সাক্ষর করেন।

এই আনন্দ সংবাদে জিলা স্কুলের ১৯৬১ ব্যাচ থেকে শুরু করে ২০১৩ ব্যাচের ৫ শতাধিক ছাত্র, অভিবাবক ও সকল শিক্ষক মিলে ১১ ফেব্রুয়ারি বাঁশের বেড়া নির্মাণ করে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় ঐদিন বিকালে থানায় বিজ্ঞ জজ আদালতের পক্ষে নাজির একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যাতে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিবাবকগণকে কতিপয় সন্ত্রাসী,গুন্ডা, মাস্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আরও পরিতাপের বিষয় ১৪
ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় শিক্ষকদের কাছে মামলার নোটিশ প্রদান করা হয়। এ মামলায় প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় সব শিক্ষককে বিবাদী করা হয়েছে। পরবর্তীতে অনুসন্ধান করে আরও জানা যায়, ১৭ ফেব্রুয়ারি কোর্ট অবমাননার দায়ে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে শিক্ষকদের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের কোমলমতি কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে তাদের চিরচায়িত স্বভাবের বশে খেলতে গেলে জেলা জজ আদালতের কতিপয় কর্মচারী তাদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এমনকি এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত তারা নানা ধরনের ভয় ভীতি প্রদর্শন, জখম, গুমের হুমকি দিয়ে আসছে। জামালপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাহীন। তাদের অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন এবং বিষন্নচিত্তে সময় পার করছেন।


জেলা জজ আদালত ঐ জমিতে ইঞ্জাঙ্কশন জারি করেন। কিন্তু জেলা জজ কোর্টের কিছু কর্মচারী ইঞ্জাঙ্কশন ভায়লেসন করে প্রভাব খাটিয়ে জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। যাতে লেখা আছে জমিটি জেলা জজ কোয়ার্টারের জন্য নির্ধারিত স্থান।

মূলত এই জমি জামালপুর জিলা স্কুলের। এখানে জেলা জজ কোর্টের কিছু অসাধু কর্মচারী তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য নিজেদের আঞ্চলিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন।

রিপোর্ট : কেএম মুত্তাকী, জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর

সম্পাদনা : জামিল আশরাফ খান

কেএম/জেএ-১৪/০৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)