কান চলচ্চিত্র উৎসব : ৬৭ বছরের ঐতিহ্য

প্রস্তুতি : বিনোদন (প্রতিমুহূর্ত.কম)-- 

বিশ্ব চলচ্চিত্রর যারা খোঁজখবর রাখেন তাদের মধ্যে কান চলচ্চিত্র উৎসবের নাম শোনেনি, এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে । এই উৎসব অনেক ছবি বা শিল্পীর ঝুলিতে এনে দিয়েছে পুরস্কার আর অনেকে ফিরে গিয়েছে খালি হাতে । তবে কান উৎসবের লাল গালিচায় হাঁটাও অনেকে সৌভাগ্য হিসেবে মনে করে ।



প্রতি বছর মে মাসে ফ্রান্সের রিজোর্ট শহর কানে এই উৎসবটি হয়ে থাকে । অস্কারের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উৎসব এটি । এখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ছবি ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় । সেগুলোর মধ্য থেকে জুরি বোর্ড মনোনীত ছবিগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হয়। এই উৎসবের সবচে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এই উৎসবে আর্ট ফিল্মকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় ।



মূলত ১৯৩০ সালে এই ধরনের একটি চলচিত্র উৎসবের কথা চিন্তা করা হয় । সে সময় ইতালি ও জার্মানির ফ্যাসিস্ট সরকার চলচ্চিত্রের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবের চলচ্চিত্র নির্বাচনেও হস্তক্ষেপ করছিলো। এই প্রেক্ষিতে ফিলিপ এর্লেঙ্গার ফ্রান্সে একটি আন্তর্জাতিক সিনেমাটোগ্রাফিক উৎসবের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবে সমর্থন দেয় যুক্তরাজ্য ও মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতারাও। ভেন্যু হিসেবে অনেক শহরের নামই প্রস্তাব করা হয়েছিলো। তার মধ্যে থেকে বেছে নেয়া হয় ‘কান’কে।


১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে জার্মানি ও পোল্যান্ড আক্রমণ করে । শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসব । ১৬ টি দেশ এতে অংশ নেয় । ১৯৪৮ ও ১৯৫০ সালে বাজেটের সমস্যার কারণে এই উৎসব হয়নি ।

এই উৎসবের সবচেয়ে মর্যাদার পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘গোল্ডেন পাম’-কে । এই পুরস্কার ১৯৫৫ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে ।   ১৯৬২ সাল থেকে শুরু হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিক উইক ।

প্রথম উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় কানের ‘ওল্ড ক্যাসিনো’তে । পরের বছরই উৎসবের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ‘প্যালেস ডিস ফেস্টিভ্যালস’-এ উৎসবটির আয়োজন করা হয়েছিলো, তখনো প্যালেসের ছাদের কাজ শেষ হয়নি। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, ঝড়ো বাতাসের মাঝে ছাদহীন প্যালেসেই চলেছিলো উৎসব। এরপরে ১৯৮৩ সালে উৎসবের জন্য আরো বড়ো আকারে তৈরি করা হয়েছিলো ‘প্যালেস ডিস ফেস্টিভ্যালস অ্যাট দেস কংগ্রেস’। এটি ‘দি বাঙ্কার’ নামেও পরিচিত। 


সত্তরের দশকে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে । ১৯৭২ সালে কান উৎসবের প্রেসিডেন্ট ‘রবার্ট ফেব্রে লে ব্রেট’ উৎসবে চলচ্চিত্রের অংশগ্রহণে পরিবর্তন আনেন । ব্যবস্থাপনা পরিচালক মউরিস বেসি ফ্রেঞ্চ ছবি ও বিদেশি ছবি নির্বাচনের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন ।


উৎসবটি আগে মাসব্যাপী হলেও ১৯৭৮ সালে তৎকালীন কান উৎসবের প্রেসিডেন্ট জাইলস জ্যাকব উৎসবটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। এর মধ্যে ছিলো উৎসবটির পরিধি এক মাস থেকে কমিয়ে ১৩ দিনে আনা। এছাড়া তিনি প্রতিযোগিতার ছবির সংখ্যাও সীমাবদ্ধ করে দেন।



২০০২ সালে উৎসবটি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফেস্টিভ্যালস ডি কান’ বা ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ নাম গ্রহণ করে।


লেখা : সজল বি রোজারিও
এসআর ১৫/০৫-২ 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)