প্রস্তুতি : জাতীয় (প্রতিমুহূর্ত.কম) ---
“কখনো ভাবতে পারিনি, জীবিত বের হতে পারবো। কোন দিক দিয়ে যে দিনরাত্রি পাড় হয়েছে টের পাইনি। আটকে থাকার সময় শুধু আল্লাহকে ডেকেছি।” এভাবেই রেশমা বললেন সাভারের ভবন ধসে ১৬ দিন আটকে থাকার অভিজ্ঞতা।
উদ্ধারের তিনদিন পর সোমবার সাভার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পোশাক শ্রমিক রেশমা সাংবাদিকদের নিজের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা জানান ।
তিনি বলেন, অন্ধকারে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে গেছি । তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি ফাঁক-ফোকড়। কিন্তু চারদিকের ভাঙ্গা দেওয়ালে সব পথই ছিল বন্ধ। ক্লান্ত হয়ে কখনো
ঘুমিয়ে পড়েছি। কখন দিন হয়েছে, আর কখন রাতের অন্ধকার নেমেছে কিছুই বুঝতে
পারিনি।
রেশমা জানিয়েছেন, ধসে পড়ার আগে তিনি ছিলেন রানা প্লাজার তৃতীয়
তলায়। ভবন ধসের পর হামাগুড়ি দিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে ফাঁকা একটি স্থানে আসি। অন্ধকারে বুঝতে পারছিলেন না, কোথায় আছেন।
রেশমা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার আশেপাশে আরও কয়েকজন লোক ছিল। পরবর্তীতে
যারা সবাই মারা যান। একটি ছেলে আমার কাছে পানি চেয়েছিল এবং বলেছিল আমাকে
বাঁচান, অথচ আমি কিছুই করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, মনে হয়েছে আশপাশে আরও অনেকে আছে।
কিন্তু কয়েকদিন পর বুঝতে পারি- তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে। তখন
বাঁচার ইচ্ছে আরও জোরালো হয়। এই বুঝি আমাকে এখন উদ্ধার করবে। আশায় বুক বেধে
থাকি। আল্লাহকে ডাকতে থাকি।
রেশমা জানান. তার হাতব্যাগে ছোট চার প্যাকেট বিস্কিট ছিল। সেগুলো অল্প অল্প করে খেয়েছেন।
এছাড়া পাশের মৃত সঙ্গীদের পড়ে থাকা খাবার ও পানি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন
তিনি। প্রতিদিনই সেখান থেকে অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন।
তিনি বলেন, উপরে ধ্বংস স্তুপ সরানোর শব্দ শুনে মনে আশা জাগে। চিৎকার করতে থাকি। চিৎকার করতে করতে গলা শুকিয়ে যায়। চিৎকার আর কান্না করার মাঝে সময় পার হতে থাকে। কিন্তু আমাকে কেউ উদ্ধার করতে আসে না।
শুক্রবার উদ্ধার হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে রেশমা বলেন, সেদিন বিকালে প্রথম আলোর দেখা পেয়েছি। যে ছিদ্র দিয়ে আলো ঢোকে
তা অনুসরণ করে কাছে যাই। বুঝতে পারি- আশপাশে লোকজন আছে। তখন চিৎকার শুরু
করি।কিন্তু কেউ আমার ডাক শোনেনি। এরপর স্টিলের একটি পাইপ সংগ্রহ করি। ছিদ্র দিয়ে ওই পাইপ ঢুকিয়ে নড়াচড়া করতে থাকি। অনেকক্ষণ পর উদ্ধারকারীদের সাড়া পাই। তারা
আামাকে একটি টর্চ লাইট দেন। সেই টর্চের আলোতে দেখি আমি যেখানে আছি, তা একটা
কাপড়ের দোকান। হামাগুড়ি দেয়ার সময় আমার কাপড়গুলো ছিড়ে গিয়েছিলো। বেরিয়ে
আসার আগে কাপড় পাল্টে ফেলি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেশমা বলেন, ফাটলের কথা বলার পরে মালিক
আমাদের বলেছিল এটা কিছু না, তোমরা কাজ কর। যখন ভবন ধসে পড়ে তখন আমি মাথায়
প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছু মনে নেই।
দিনাজপুরের মৃত্যুঞ্জয়ী মেয়ে রেশমা জানান, ২০১০ সালের জুনে ঢাকায় আসেন তিনি। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। সব শেষ গত ২ এপ্রিল রানা প্লাজার তৃতীয় তলার নিউ ওয়েব বটম গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। সেখানে তার বেতন ছিলো ৪ হাজার ৭০০ টাকা।
লেখা : রুদ্র মাহমুদ
আরএম/১৩/৫-৬
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন