ওয়ার্ল্ড মিউজিকের দুই কিংবদন্তী




প্রস্তুতি : (প্রতিমুহূর্ত.কম)

ওয়ার্ল্ড মিউজিকের কালজয়ী দুই কিংবদন্তি এলভিস প্রিসলি ও বব মার্লে। মৃত্যুর পরও এই দুই শিল্পী সারা বিশ্বে সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের হৃদয় দখল করে আছে।

এলভিস প্রিসলি : কিং অব রক এন্ড রোল

ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বহুল বিক্রিত অ্যালবামের সঙ্গীত শিল্পীদের
মধ্যে অন্যতম মার্কিন রক্ সঙ্গীত শিল্পী এলভিস প্রিসলি। গানের জগতে তাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। চলুন এই কিংবদন্তি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

জন্ম
১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি মিসিসিপ্পির টুপেলোতে জন্মগ্রহণ করেন রক এন্ড রোলের জনক এলভিস প্রিসলিতার বাবার নাম ভ্যারন এলভিস এবং মায়ের নাম লাভ প্রিসলি তিনি যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তার বাবার বয়স ছিল ১৮ এবং মায়ের বয়স ছিল ২২ বছর জেসে গারন প্রেসলি নামে তার একজন জমজ ভাই ছিল, যিনি প্রেসলির জন্মের ৩৮ মিনিট আগে জন্ম নিয়েছিলেন

 ক্যারিয়ার
এলভিস প্রিসলি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের মধ্যে একজন এলভিস প্রিসলিকে বলা হয় 'কিং অব রক এন্ড রোল' অথবা 'দ্য কিং'১৩ বছর বয়সে তিনি তার পরিবারের সাথে টুপেলো ছেড়ে মেমফিস , টেনেসি-তে চলে আসেন সেখানে তিনি ১৯৫৪ সালে "সান রেকর্ডিং" নামে একটি সংগীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন স্যাম ফিলিপস নামের এক ভদ্রলোক ছিলেন সান রেকর্ডিং এর মালিকতিনি সংগীতশ্রোতাদের কাছে আফ্রো-আমেরিকান মিউজিকের একটি জনপ্রিয় রূপ ফুটিয়ে তুলতে সফল হন স্যাম ফিলিপস রক এন্ড রোল সংগীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব

এলভিসের গাওয়া প্রথম একক গান ছিলো হার্ট ব্রেক হোটেলযেটি ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায় সমালোচকদের মতে, এই গানটির মধ্যেই প্রথম রক এন্ড রোলের সফল ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় মুক্তির পরপরই গানটি আমেরিকান টপচার্টের শীর্ষে চলে আসে এরপরে তিনি টেলিভিশনে গান গাইতে শুরু করেন এবং অল্পকিছুদিনের মধ্যেই তার গান সেরা গানের তালিকার প্রথম স্থান দখল করে নেয়। তিনি সমকালীন গায়কদের মধ্যে সেরা বিবেচিত হন

গান করার পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাও ছিলেন প্রিসলি অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘লাভ মি টেন্ডার’ছবিটি ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়

এলভিস প্রিসলির ব্যান্ডদলের নাম ছিল – ‘দ্যা ব্লু মুন বয়েজ’। এই ব্যান্ডদলের সদস্য ছিল ৩ জন তারা হলেন - এলভিস প্রেসলি , স্কটি মুরে ও বিল ব্ল্যাক

১৯৫৮ সালে তিনি বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন ২ বছর পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে আবার সংগীত জগতে ফিরে আসেন কিছু তুমুল জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে তিনি সেসময় মঞ্চে গাইতে শুরু করেন তার সে সময়কার গাওয়া গানগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যপক সফল হয় মিঃ পার্কারের উৎসাহে ১৯৬০ সালে তিনি আবার হলিউডে ছবি বানানো এবং সংগীত পরিচালনা শুরু করেন। কিন্তু তার এসব কাজ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়

সাত বছর পর ১৯৬৮ সালে তিনি আবার স্টেজে গান গাইতে শুরু করেন তার সে সময়ের করা ট্যুরগুলোও বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং সাথে সাথে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে১৯৭৩ সালে এলভিস প্রেসলির স্টেজে করা একটি গান প্রথমবারের মত স্যাটেলাইট থেকে দেখানো হয় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন দর্শক গানটি সরাসরি উপভোগ করে


মৃত্যু
এলভিস প্রিসলি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায় মাদকদ্রব্যকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনেকেই অভিহিত করেন তিনি ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান

 বব মার্লে : অবহেলিত মানুষের প্রিয় শিল্পী

 বাফেলো সোলজার,নো ওম্যান, নো ক্রাই, গেট আপ স্ট্যান্ড আপ, ব্ল্যাক প্রগ্রেস-এর মতো অনেক ভুবন কাঁপানো গান শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সুবিন্যস্ত জটাধারী চুলের অধিকারী বব মার্লের কথা।

নিজের গানে অবহেলিত মানুষের নানা ক্ষোভ ও সমস্যার কথা তুলে ধরে সংগীতপ্রেমীদের প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছিলেন মার্লে

জন্ম
জ্যামাইকার কুখ্যাত একটি শহরতলির বস্তিতে ১৯৪৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মার্লে তার জন্মের সময় জ্যামাইকা ছিল একটি অশান্ত দেশরাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই অস্থিরতা চলছিলশ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বিভেদের কারণে সংঘাতও ছিল দৈনন্দিন ঘটনাকৃষ্ণাঙ্গ মা ও শ্বেতাঙ্গ বাবার কারণে ছোটবেলা থেকেই সাদা-কালো দ্বন্দ্বে ভুগতেন মার্লে

বিশ্বাস ও দর্শন
মার্লে সবসময় মানবতার পক্ষে গান গাইতেনতার অবস্থান ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষেনিপীড়িত আর খেটে খাওয়া মানুষের জন্য গান করতেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কালোদের ওপর চলতে থাকা বর্ণবাদী নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তার গানের মাধ্যমেসবাইকে বলতেন একত্র হতে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকতে গানের মাধ্যমে রাজনৈতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষ নিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করতেননিজ দেশের রাজনৈতিক সংঘাত মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেনশান্তির জন্য কয়েকটি কনসার্ট করেছেন জ্যামাইকাতেএ সব কনসার্টের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করতেন

বব মার্লে তার পুরো ক্যারিয়ারেই যুক্ত ছিলেন রাসটাফারি আন্দোলনের সঙ্গেজীবনঘনিষ্ঠ গান গাইতেন বলেই বিশ্বজুড়ে মার্লের বিপুল জনপ্রিয়তা তৈরি হয়ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অনেক কনসার্টে গান গেয়েছেন তিনি১৯৯৯ সালে তার বব মার্লে এন্ড দ্য ওয়েইলার্সবিশ শতকের সেরা অ্যালবাম হিসেবে নির্বাচিত করে টাইমস্ ম্যাগাজিন

ব্যান্ডদল
একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও গিটারবাদক বব মার্লে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ব্যান্ডদল গঠন করেছিলেন এরপর কখনো দলের হয়ে আবার কখনো এককভাবেই গানের অ্যালবাম বের করেন। 
 
মৃত্যু
ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কারণে তার শিল্পীজীবন মাত্র ১৮ বছরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে১৯৮১ সালের ১১ মে তার মৃত্যু হয়এরপর অনেক বছর পার হলেও এখনো ভাটা পড়েনি বব মার্লে জনপ্রিয়তায়।



সূত্র : ইন্টারনেট
লেখা : আতিক আহম্মেদ অর্পণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

সম্পাদনা : জামিল আশরাফ খান, নিউজরুম এডিটর
এএ/জেএ/১৮/৫-২

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)