ছাতকে লিচুর বাম্পার ফলন

প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে যুগ-যুগ ধরে মধুমাসের মিষ্টি ফল লিচুর চাষ হচ্ছে।

ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নে লিচু চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে লিচু চাষ সম্ভব।

এখানের সুস্বাদু ফল লিচু উৎপাদনের উপর নির্ভর করে মানিকপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করছে। চলতি মৌসুমে নোয়ারাই ইউনিয়নের এ অঞ্চলে প্রায় কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হয়েছে।

ছাতক শহরের নোয়ারাই বাজার থেকে গ্রাম্য মেঠোপথে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনীবাজার। রাঙামাটির এ মেঠোপথ ধরে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে মানিকপুর গ্রামের লিচু বাগান। এ গ্রামে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছে-গাছে পাকা লিচুর রঙিন ঝলকানী দেখা যায়।

লিচুর গ্রাম নামে পরিচিত মানিকপুর গ্রামের মানুষ যুগ-যুগ ধরে লিচু উৎপাদন করে উপজেলাসহ বিভাগীয় শহর ও রাজধানীতে সরবরাহ করে আসছে। প্রতিকূল অবস্থা, কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এখানকার লোকজন উৎপাদিত লিচু বাজারজাত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। 


বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে এলাকার বাগান মালিক ও লিচু চাষিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অতিথিদের লিচু দিয়েই আপ্যায়ন করে তারা। পাকা লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ ও বিক্রির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন লিচু চাষিরা।

সরেজমিনে নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের বিভিন্ন লিচু বাগান ও বাড়িতে গিয়ে বাগান মালিকদের সাথে আলাপকালে লিচু চাষিরা তাদের সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। লিচু উৎপাদনের সাথে জড়িত ও বাগান মালিক আরব আলী, সাইদুর রহমান, সুন্দর আলী, জামাল উদ্দিন, ফুল মিয়া, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল কুদ্দুস জানান, প্রতিবছরই যথা সময়ে লিঁচু গাছের পরিচর্যা দিয়ে ভাল ফলনের উপযোগী করে তোলা হয়।

শ্রম ও পরিচর্যায় এখানে লিচুর ফলনও আশানুরূপ হচ্ছে। কিন্তু লিচু পাকা শুরু হলেই বাঁদুর-চামচিকার কারণে লিচু আধকাঁচা অবস্থায়ই বিক্রি করতে তারা বাধ্য হন। এসব পাখির উপদ্রব থেকে পাকা লিঁচু রক্ষা করতে চাষিদের বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহারসহ রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ঝাকে-ঝাকে এসব পাখি বাগানের লিচু গাছে এসে হানা দেয়। এ সময় তারা গাছের মগ ডালে টিন বাজিয়ে, ফাঁদ তৈরিসহ লিচু রায় জাল দিয়ে লিচু গাছ মুড়িয়ে রাখা হয়। এরপরও শতকরা ৩০ ভাগ লিচু পাখির উপদ্রবের কারনে নষ্ট হয়ে যায়। সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকলেও তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাননি চাষিরা।

অনুন্নত যোগাযোগের কারণে উৎপাদিত লিচু বাজার মুল্যের তুলনায় প্রায় অর্ধেক মুল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এ সুযোগে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্ব ভোগী কম মূল্যে লিচু কিনে নিচ্ছে চাষিদের কাছ থেকে। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাঁদুর জাতীয় পাখি থেকে তারা পরিত্রান পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে এ এলাকায় লিচু চাষে আরো লোকজন আগ্রহী হয়ে উঠবে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, মানিকপুর গ্রামসহ আশপাশ এলাকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী। এখানের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। কৃষি অধিদপ্তর থেকে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের যাবতীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা পূরন করে প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব।

প্রতিবেদন : এম মহসীন, জেলা প্রতিনিধি, সিলেট
সম্পাদনা : হাসান ইমাম, বিভাগীয় সম্পাদক, সারাদেশ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)