কুষ্টিয়ার গড়াই নদী খননের নামে ৯৪০ কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ !

প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

কুষ্টিয়ার গড়াই নদী পুনঃউদ্ধারের নামে ৯৪০ কোটি টাকা হরিলুট হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৪ বছর মেয়াদী কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর মুখ থেকে খোকসা পর্যন্ত ড্রেজিং করে মৃত গড়াই নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।

প্রথমে ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদী খনন এবং পরে রক্ষণাবেক্ষন করার কথা থাকলেও প্রথম থেকেই গড়াই নদীর ড্রেজিং কাজে চলতে থাকে দুর্নীতি। একটি চায়না কোম্পানী প্রথমে ড্রেজিং করার কাজ শুরু করে। তখন থেকেই নদী খনন করে নদীর বালি নদীর মধ্যে ফেলা হয়। অপরিকল্পিতভাবে নদী খনন কাজ করায় নদী পারের মানুষ গুলো একাধিকবার অভিযোগ করেও কাজ হয়নি।

এই কাজের দেখা শুনার দায়িত্বে রয়েছেন গড়াই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ। তিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে গাড়ী, বাড়ী ও নগদ আর্থিক সুযোগ সুবিধা গ্রহন করায় তিগ্রস্থ জনগনের কোন অভিযোগ আমলে নেননি। বাধ্য হয়ে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা এলাকার আশরাফ উদ্দিন হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং ২৫৬৬/২০১২। বিজ্ঞ হাই কোর্ট এই রিটের বিপরীতে রুল জারী করলেও হাইকোর্টের ওই রুল আমলে নেননি প্রকল্প পরিচালক, গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প (ফেস-২) ঢাকা। এর পর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের নিকটও ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হলেও তিনিও কোন পদপে নেননি।

এদিকে গড়াই নদী খনন করে বালি নদীর মধ্যে ফেলায় বর্ষা মৌসুমে ওই বালি আবারও নদীর মধ্যে পড়ে গড়াই নদী ভরাট হয়ে যায়। হারিয়ে ফেলে নদী তার নাব্যতা। চলতি বছরে নদী রাণাবেন কাজের ড্রেজিং চললেও ওই একই নিয়ম অনুসরন করে ড্রেজিং করার কাজ চলছে। অথচ গড়াই নদী খননে ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদী থেকে ২ কিলোমিটার দুরে বালি ফেলার কার্যাদেশ থাকলেও ওই আদেশ মানা হচ্ছেনা।

অপরদিকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করায় কুষ্টিয়া শহর রক্ষা প্রকল্পের গড়াই নদীর ৩নং মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রোয়েনে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় শহর হুমকীর মুখে পড়েছে। প্রায় ২৫ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া শহর রক্ষার জন্য মঙ্গলবাড়ীয়ায় এই গ্রোয়েন নির্মান করে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গড়াই বিভাগের অপরিকল্পিতভাবে গ্রোয়েনের গা ঘেসে ড্রেজিং এবং গ্রোয়েনের অববাহিত ভাটিতে গ্রোয়েন মুখী ডিসচার্জ নজেল স্থাপন করার কারনেই পানি মিশ্রিত বালির তীব্র ধাক্কায় এই ধসের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রোয়েন ধস সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তাৎনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ওই স্থানে ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

সঠিক পরিকল্পনা করে গড়াই নদীর ড্রেজিং করা হলে গ্রোয়েন যেমন রক্ষা পেত ঠিক তেমনি সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হতো। কতিপয় দূনীর্তিবাজ কর্মকর্তাদের অর্থ বানিজ্যের কারনেই গড়াই নদীর ড্রেজিং সুফল আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গড়াই নদীর ড্রেজিং তদন্ত করলেই গড়াই বিভাগের দুর্নীতি ধরতে পারবে বলেও মন্তব্য করেছে অনেকই।

উল্লেখ্য, ড্রেজিং কার্যক্রম গড়াই নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প (ফেস-২ ) নামে ঢাকা কেন্দ্রীক দপ্তর দেখা শুনা করছে। নতুন করে এই গ্রোয়েন নির্মান করতে গেলে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আবার মেরামত করতে গেলে  প্রায় ১০ কোটি টাকা লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে গড়াই ডিভিশনে কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুখ খুলেন নি। বিষয়টি এড়িয়ে যান। সরকার যদি সঠিকভাবে গড়াই নদী খননের কাজ তদারকি না করেন তা হলে আবু সাঈদের মত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা সরকারের ভাবমুর্তী ক্ষুন্ন করতে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে। অথচ সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে গড়াই নদী খনন প্রকল্প চালু করেছে তা সফল হবে না বলে অভিজ্ঞমহল মন্তব্য করেছে।



প্রতিবেদন : হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, নিউজরুম এডিটর
এইচএস/এজে- ২৩/৫-২

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)