বর্ষার অসুখ-বিসুখ ও তার প্রতিরোধ



প্রস্তুতি: স্বাস্থ্য (প্রতিমুহূর্ত.কম) ---

গ্রীষ্মের তাপদাহ ধুয়ে দিতে বর্ষা আসে একরাশ সস্তি নিয়ে। কিন্তু এই স্বস্তির মাঝেও লুকিয়ে থাকে নানা ধরনের রোগবালাইসহ অনেক শারীরিক সমস্যা। আর তাই এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য আমাদের সবার প্রয়োজন কিছু বাড়তি সচেতনতা।

বর্ষাকালে তীব্র গরম, হঠাৎ আবার বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারনে শিশু ও বড়দের মাঝে দেখা দেয় নানা সমস্যা।

এ সময় শিশুদের রোগ ও করণীয়:

বর্ষাকালে সাধারনত শিশুরাই বেশি অসুখ-বিসুখের শিকার হয়। কারণ বড়দের তুলনায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। রোগবালাই সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক লুৎফুল এহসান ফাতমী জানিয়েছেন, এ সময় সাধারনত সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং পানিবাহিত রোগ যেমন: ডাইরিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ চর্মরোগ ও টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া বর্ষাকালে মশার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক রোগে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে অধ্যাপক লুৎফুল এহসান ফাতমীর কিছু পরামর্শ :


* শিশুকে অবশ্যই ফোটানো ও বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে।

* শিশুর মল যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এতে জীবাণু সহজেই ছড়িয়ে যেতে পারে।

* সামান্য সর্দি-কাশি ও জ¦রকে অবহেলা করা ঠিক হবে না, কারণ এর থেকে নিউমোনিয়া হয়ে শিশুর জীবন বিপন্ন হতে                   পারে।

* সর্দি-কাশি হলে শিশুকে লেবুর রস, তুলসী পাতার রস, ও আদা খাওয়ানো যেতে পারে।

* শিশুকে মেঝেতে শোয়ানো যাবে না।

* বাড়ির আশেপাশের মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে।

* এই বর্ষাকালে গ্রামবাংলায় বন্যার প্রাদুর্ভাব হয়। এক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে বেশি আশংকাজনক তা হল পানিতে ডুবে যাওয়া ও সাপে কাটা। তাই কোন অবস্থাতেই শিশুকে পানিতে নামতে দেয়া যাবে না।

*সর্বোপরি শিশুর পুষ্টিকর খাবারের দিকে নজর দিতে হবে, এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

বর্ষায় বড়দের রোগবালাই ও সচেতনতা :


বর্ষার নবধারার জল যেমন আবর্জনা ধুয়ে দেয় তেমনি অনেক রোগও বয়ে আনে। এ সময়কার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া জীবাণুদের জন্য অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে তোলে, যা বড়দেরকেও সহজেই অসুস্থ করে ফেলে। এই আবহাওয়ায় বড়রা যে সব রোগে আক্রান্ত হতে পারেন সেগুলো হল-

ডাইরিয়া :
ডাইরিয়ার প্রধান কারণ হল দূষিত পানি পান। বর্ষায় জলের সঙ্গে জীবাণু মিশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ফলে                   ডাইরিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

কলেরা :
কলেরা রোগটি হয় রোটা ভাইরাসের সংক্রামনে। এতে রোগীর দেহে লবণ ও পানির ঘাটতি দেখা দেয় ফলশ্র“তিতে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকাংশে দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে রোগীর জীবনহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।

টাইফয়েড :
বর্ষাকালে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সালমোনেলা টাইফি নামের এক ধরনের জীবাণু পানি ও খাবারকে দূষিত করে। এই দূষিত পানি অথবা খাবার খেয়ে মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়।

হেপাটাইটিস :
হেপাটাইটিস একটি যকৃতের রোগ। এর আবার বেশ কিছু প্রকারভেদ আছে। এগুলোর মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই পানিবাহিত ভাইরাস বলে বর্ষাকালেই বেশি হয়।

কৃমি সংক্রামন:
বর্ষাকালেই কৃমির বেশি প্রাদুর্ভাব হয়। এসময় পানি আর কাঁদামাটিতে মিশে থাকে এই জীবাণু। তাই অন্য যে কোনো ঋতুর তুলনায় বর্ষায় খুব সহজেই কৃমির সংক্রামন ঘটে।

কেমন করে এই রোগগুলি প্রতিরোধ করা যায় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ.বি.এম আবদুল্লাহ বলেন, “সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই বর্ষার রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব”। তিনি কিছু বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

*সব সময় খাওয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

* গোসল কিংবা খাওয়া এমনকি গৃহাস্থলির জিনিসপত্র ধোয়ার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি ব্যাবহার করতে হবে।

* রান্না করার আগে শাক-সবজি ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

* পঁচা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।

এই বর্ষায় রোগবালাই নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে একটু খানি সচেতন হলেই সুস্থ থাকা যায়।

এএ/৭/৫-১

বর্ষার অসুখ-বিসুখ ও তার প্রতিরোধ




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)