রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে ইরানের সাইবার হামলা


প্রস্তুতি : আন্তর্জাতিক (প্রতিমুহূর্ত.কম)

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যানডিয়ান্ট কর্পোরেশন জানায়, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪১টি কোম্পানির সাইট হ্যাক হয়েছে। আর এই সাইবার হামলাগুলোর জন্য এত দিন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে দায়ী করে এলেও সম্প্রতি চীনের পাশাপাশি ইরানকেও সন্দেহ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ম্যানডিয়ান্টের মতে, এ ধরনের সাইবার হামলায় ইরানের ব্যাপক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অল্প কিছু হামলায় দেশটির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানায়িছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি।

গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোতে এ ধরনের হামলায় ইরানের সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায়  ম্যানডিয়ান্ট কর্পোরেশন। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিতে সাইবার হামলা করে তাদের বিভিন্ন তথ্য আত্মসাৎ করেছে বলে দাবি করেন ম্যানডিয়ান্টের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রিচার্ড বেজলিক। খবর ব্লুমবার্গের।

কয়েক বছর ধরে সাইবার হামলায় ইরানের সম্পৃক্ততা বেড়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ম্যানডিয়ান্টের দাবি, ইরানি হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির সাইটে নিয়মিত হামলা করছে। ফলে এ ধরনের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে বলে জানান প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। এর পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলোর কার্যপরিকল্পনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ের সাইবার হামলাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ম্যানডিয়ান্টের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের জনপ্রতিনিধি মাইক রজারও এ ধরনের হামলায় ইরানের সম্পৃক্ত থাকার দাবি করেন। তার মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের আর্থিক ক্ষতিসাধনের জন্যই ইরান এ ধরনের হামলা করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানই ইরানের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। এমনকি ম্যানডিয়ান্টের মতো প্রতিষ্ঠানও ইরানের কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সাইবার হামলার সঙ্গে জড়িত, এ ব্যাপারে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি সাইবার হামলায় অংশগ্রহণকারী ইরানি হ্যাকারদের আগে কখনো লক্ষ করা যায়নি বলে জানান ম্যানডিয়ান্টের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রিচার্ড বেজলিক। তার ধারণামতে, ইরান নিত্যনতুন হ্যাকার দিয়ে এ ধরনের হামলা চালায়। এতে হামলাকারীকে শনাক্ত করা কষ্টকর হয়ে যায়।

ইরানের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলার দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন দেশটির মুখপাত্র আলিরেজা মিরুজেফি। ইন্টারনেটে এক বার্তায় মিরুজেফি আরো জানান, কয়েক বছর ধরে ইরান নিজেই বিভিন্ন দেশ কর্তৃক চালানো সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ইরান নিজেদের সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে ব্যস্ত।

ম্যানডিয়ান্টের তথ্য অনুযায়ী, তারা গত কয়েক মাসে ডজনখানেক সাইবার হামলাকারীকে শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছে। এর মধ্যে চীন, রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের বেশকিছু হ্যাকিং গ্রুপের নাম উঠে আসে। গ্রুপগুলো নিয়মিত বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাইটে হামলা করে বলে মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বেজলিকের মতে, এ ধরনের হামলা অনৈতিক। যেকোনো সাইবার হামলা করার আগে প্রত্যেকের এ কার্যের ফলাফল সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মার্কিন সরকার এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বলে সরকারি এক মুখপাত্র জানান। এইচআর ৬২৪ নামক আইনটির দ্বারা সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে এ ধরনের সাইবার হামলা ঠেকানো সম্ভব বলে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে এ ধরনের হামলা ঠেকানো সম্ভভ হবে না। এ ধরনের ক্ষতিকর হামলা ঠেকাতে কঠোর নীতিমালার প্রয়োজন বলে দাবি করেন বেজলিক।


রিপোর্ট : তাওসীফ তালুকদার
সম্পাদনা : জামিল আশরাফ খান
টিটি/জেএ/১৬/০৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)