নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষে বিজিবি-পুলিশসহ নিহত ১৪



নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষে বিজিবি-পুলিশসহ নিহত ১৪


 প্রস্তুতি : সারাদেশ(প্রতিমুহূর্ত.কম/protimuhurto.com) ---

নারায়ণগঞ্জের কাচঁপুরে ৬ মে সোমবার ভোর ৬ টা থেকে হেফাজতে ইসলামের ক্যাডারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের  টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন ও পুলিশের দুই জন সদস্য রয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোর রাতে ফজরের নামাজের পর হেফাজতকর্মীরা মাইকের মাধ্যমে ঘোষনা দিয়ে মাদ্রাসা-মসজিদ হতে তাদের কর্মীদের  নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একত্রিত হতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে, এ সময়ে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

একপর্যায়ে হেফজত কর্মীরা মহাসড়কের আশপাশের দোকান-পাটে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। কর্তব্যরত পুলিশ হেফাজত কর্মীদের বাধা দিতে গেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য কয়েক’শ রাউন্ড ফাঁকাগুলি, রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আইন-শৃংখলা বাহিনীর চাপে হেফাজত কর্মীর কিছুটা পিছু হটলেও বিভিন্ন গলির মধ্যে প্রবেশ করে পুনরায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা পুলিশ ফাড়ি ও বেশ কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধালণ করে।



সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা বিরামহীন এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান অনেকে। দীর্ঘক্ষণ মহাসড়কের ওপরেই পড়ে ছিল তাদের লাশ। এতে বিজিবির একজন, পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।  আহত হয় শতাধিক ।

নিহতদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও একজন অজ্ঞাতপরিচয়। এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা বলছেন, নিহতদের মধ্যে কেউ হেফাজতের কর্মী ছিল না। তারা নিরীহ ও সাধারণ মানুষ। কাজের উদ্দেশ্যেই তারা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এলাকাবাসীর দাবি, সকালে সংঘর্ষের পর নিহত অনেকের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নিরীহ ব্যক্তি।

নিহতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার মৃত হাশেম কন্ট্রাক্টারের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ফাহিমা ফ্যাশনের সেলসম্যান। সকালে দোকানে যাওয়ার পথে তিনি সংঘর্ষের পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। সিদ্ধিরগঞ্জের মা জেনারেল হাসপাতা অ্যান্ড ল্যাবে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। নিহত পথচারী পলাশ (২৫) মাদানীনগর এলাকায় তার গ্রিল ওয়ার্কশপের দোকান ছিল।

বাসের হেলপার জসিম উদ্দিন (৩০) হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনি মিজমিজি ধনুহাজী ঈদগাঁও এলাকায় থাকতেন।  নিহত জাহিদুল ইসলাম সৌরভ (১৭) এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী বাঘমারা এলাকার এনামুলের ছেলে।

পথচারী মাসুম (৩০) শিমরাইল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান। হান্নান (৩৫) সিদ্ধিরগঞ্জের আল আমিন সোয়েটার ফ্যাক্টরির আয়রন বিভাগের ইনচার্জ ছিল। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান।

তুরাগ বাসচালক বাবু গাজী (৩৬) সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সুগন্ধা হাসপাতালে মারা যান। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। ডেমরার পুর্ব বকসনগর এলাকার রইছ মিয়ার ছেলে সাদেক (৩২) দোকানে দোকানে ফিল্টার পানি সরবরাহ করতেন। রিকশাচালক হাবিবুল্লাহ (৩৪) চাঁদপুরের কচুঁয়া থানার জারচরা এলাকার আবুল মুন্সীর ছেলে। এছাড়া নিহত অপরজন হলেন ট্রাকের হেলপার মিজানুল হক।

নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। অন্য সব মৃতদেহ আত্মীয়স্বজনেরা নিয়ে গেছে।

নিহত বিজিবি সদস্য হলেন নায়েব সুবেদার শাহ আলম (৫৫)। নিহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন নায়েক ফিরোজ (৩৫) ও কনস্টেবল জাকারিয়া (২৮)। 

 নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন হাসান আনোয়ার, মমতাজুল, সোলেমান, জাকারিয়া, মাহবুব, ফিরোজ, তানভীর, মনির হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন, নাঈম। এদের মধ্যে জাকারিয়া ও ফিরোজ ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান।

আহত বিজিবি সদস্যরা হলেন লাভলু, শাহ আলম, আবুল খায়ের, গুলজার, আলম এবং বিজিবির গোয়েন্দা শাখার আনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে শাহ আলমকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তারা মারা যান। গুলিবিদ্ধ পথচারীরা হলেন ইমরান, সুমন ও মজিবুর রহমান, মাসুম, সালাউদ্দিন, মোজাম্মেল, আমিনুল।

এজে/০৬/০৫-১

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)