ভবিষ্যতে গ্রহাণু, উল্কা ও ধূমকেতুর গতিরোধ করা সম্ভব

ভবিষ্যতে গ্রহাণু, উল্কা ও ধূমকেতুর গতিরোধ করা সম্ভব


প্রস্তুতি : প্রযুক্তি (প্রতিমুহূর্ত.কম) --

বিজ্ঞানীরা মহাকাশে বিপুল বেগে ধাবমান গ্রহাণু, উল্কা ও ধূমকেতু সুষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ, তার গতিরোধ করা এবং পৃথিবীতে আঘাত করার আগেই সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া কিংবা তাদের গতিপথ বদলে দেয়ার ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে নতুন টেলিস্কোপ স্থাপন এবং কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাবে যা দিয়ে তীব্র গতিতে চলা মহাকাশের বস্তু লক্ষ্য করা যাবে।

এ ব্যবস্থাটি করা হবে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। অপরদিকে রাশিয়া তাতারস্থান রাজ্যের রাজধানী কাজান শহরের অল্পদূরেই ‘মেগাটরতোর’ নামের একটি নতুন টেলিস্কোপ চালু করতে যাচ্ছে। এটা দিয়ে খুব বড় নয় অথচ বিপুল বেগে ধাবমান মহাকাশের বস্তু লক্ষ্য করা যাবে। ‘মেগাটরতোর’ একই সাথে ৯টি বস্তুর দিকে দৃষ্টি রাখবে। এঙ্গেলগার্টড মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক ইউরি নেফেদিয়েভ বলেন, ‘এক চ্যানেলবিশিষ্ট যন্ত্র মহাকাশের কোনো অর্ধ্বগোলাকৃতি বস্তুকে দেখতে পাওয়ার মতো জায়গাই নজর করতে পারে। কিন্তু ৯টি চ্যানেলযুক্ত টেলিস্কোপের সাহায্যে পুরো অর্ধগোলাকৃতি বস্তুকেই দেখা যাবে। এর অর্থ হলো, আমরা মহাকাশে কোনো দ্রুত ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াই লক্ষ্য করতে পারবো এবং তা নির্দিষ্ট করতে সমর্থ হবো।

ইউরি নেফেদিয়েভ কথা প্রসঙ্গে বলেন, গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার আগেই তা কিভাবে ধ্বংস করা যায় তা নিয়ে আমরা ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই বলছেন, পারমাণবিক শক্তি বা অন্য কোনো পন্থায় গ্রহাণুকে ধ্বংস করতে হবে। কেনো না ভেঙে পড়া গ্রহাণু পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ হতে পারে। আবার অনেকে মনে করেন, গ্রহাণুর নিকটে মহাকাশযান চলতে শুরু করলে এটি নিজের মধ্যাকর্ষণ দিয়ে এর গতিপথ বদলে দেবে এবং পৃথিবীর দিকে আসতে বাধা দেবে। তবে এ প্রসঙ্গে নেফেদিয়েভ আরো বলেন, বর্তমান বিজ্ঞান আপাতত এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে সমর্থ নয়। তাই আজকের দিনের প্রাথমিক কাজ হলো এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে জনগণকে আকাশ থেকে সম্ভাব্য বিপদ সম্বন্ধে সময় মতো ও দ্রুত সতর্ক করে দেয়া যায়।

বিজ্ঞানীদের এসব ব্যবস্থা পৃথিবীকে দশ মিটারের বেশি ব্যাসার্ধের উল্কা সম্প্রতি চেরিয়াবিনস্ক শহরের কাছে পড়েছে। তার থেকে আরো অনেক বড় উল্কা কিংবা ধূমকেতুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। অপরদিকে পৃথিবীর দিকে বিপুলবেগে ধাবমান গ্রহাণুর গতিরোধে এক নতুন উপায় বের করতে সমর্থ হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারো স্পেস এবং পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডেভ হাইল্যান্ড বলেছেন, রঙের একটা পাতলা আস্তরণ গ্রহাণুর ওপর ফেলে পৃথিবীর সাথে এর সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভভ। তিনি আরো বলেন, এ পরিকল্পনার পেছনে বিজ্ঞান অত্যন্ত তৎপর। সেজন্যই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পর্যন্ত ব্যাপারটা প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। তারা এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে ব্যাপারটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে চায়। ডেভ হাইল্যান্ড মনে করেন, গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষ এড়ানোর একটা সম্ভাব্য উপায় হলোÑ একটা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার, আর তাহলো ‘ট্রাইবোচার্জিং পাউডার ডিসপেন্সিং’। ধেয়ে আসা গ্রহাণুর দিকে উচ্চচাপে রঙের একটা পাতলা স্তর ছিটিয়ে দেয়া হবে। রং ছিটিয়ে দেয়ার ফলে গ্রহাণুটির সূর্যের আলো প্রতিফলনের মাত্রা পরিবর্তন হবে।

গ্রহাণুর দুই পিঠের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে সেটি বেশি গতিসম্পন্ন হয়। এর অন্ধকার দিকে তাপমাত্রা বেশি হয় এবং সেখান থেকে অনেক বেশি পরিমাণ ফোটন নিঃসৃত হয়। প্রতিটি ফোটন কণার কিছু পরিমাণ গতিবেগ থাকে এবং এগুলোই ওই গ্রহাণুকে গতিবেগ যোগায়। তবে যে রং প্রয়োগ করা হবে, তা অবশ্যই গুঁড়ো হতে হবে। ডেভ হাইল্যান্ড বলেন, এভাবে রঙের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিলে গ্রহাণুর দুই পিঠের তাপমাত্রার পার্থক্যটা এলোমেলো হয়ে যায়। ফলে পাল্টে যায় এর গতিপথ এবং পৃথিবী তার নিশানা থেকে সরে যায়। ডেভ হাইল্যান্ডের এ তত্ত্ব কিছুটা অদ্ভূত হলেও বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তিনি জানান, ট্রাইবোচার্জিং পাউডার ডিসপেন্সার যন্ত্রে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সাথে গুঁড়ো রং মিশিয়ে এ কাজ করা যেতে পারে।

তবে সঠিক সময় গণনা করে গ্রহাণুর গাযয়ে রং ছিটানো একটা চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নাসা ডেভ হাইল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করেছে। ২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিল ‘অ্যাপোফিস’ নামে একটি গ্রহাণুর পৃথিবীর খুব নিকটে এসে পড়ার কথা রয়েছে। সেটি অবশ্য পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে নাসা ওই গ্রহাণুটির ওপর হাইল্যান্ডর এই তত্ত্বের পরীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। মহাকাশ থেকে আসা বিপদের মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রহ প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের সাত বছরের বেশি সময় লাগবে না। বর্তমানে বিজ্ঞানীদের কাছে অন্তত চব্বিশ ধরনের ঘটনা পরস্পরার বিবরণ রয়েছে, যা দিয়ে আমাদের পৃথিবী নামের গ্রহকে উল্কা, গ্রহাণু, ধূমকেতু এবং অন্যান্য বিপজ্জনক মহাকাশের বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

রাশিয়ার বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাকাশ থেকে এসে পড়া বস্তুর আঘাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য রাডার ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। তারা বলছেন, এ ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু কিংবা অন্য কোনো বস্তু পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখা দিলেই জনগণকে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দ্রুত নিরাপদ জায়গা, মাটির নিচে বাঙ্কার ও মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিতে হবে। তাছাড়া আন্তঃগ্রহ প্রতিরক্ষা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তারা মহাকাশে বিশেষ ধরনের উপগ্রহ পাঠাবেন। যেগুলো পৃথিবীর নিকটে চলে আসা বিপজ্জনক বস্তুগুলো ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখবে।

সুত্র: ইটারনেট।

লেখা: আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের

এজে- ১০/৫-৩ 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)