আবারও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস


প্রস্তুতি : স্পোর্টস (প্রতিমুহূর্ত.কম) --


ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে বুধবার হয়েছে দুটি খেলা। প্রথম ম্যাচে 'কলকাতা নাইট রাইডার্স'-কে হারিয়ে দেয় 'পুনে ওয়ারিয়র্স' এবং অপর ম্যাচে 'রাজস্থান রয়েলস'-কে হারায় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

 আইপিএলের ৬৫তম ম্যাচে বুধবার রাতে মুখোমুখি হয় শাহরুখ খানের 'কলকাতা নাইট রাইডার্স' ও 'পুনে ওয়ারিয়র্স'। কাগজে কলমে সেমিফাইনাল নিশ্চিত না হলেও কলকাতা বা পুনে কারোরও প্লে-অফে খেলার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। ম্যাচটি কেবল নিয়ম রক্ষার্থেই ছিল, কিন্তু রাঁচির জেএসসিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ত্রিশ হাজার দর্শক যেন তা বুঝতেই দিলো না। কোথাও উত্তেজনার এতটুকু কমতি ছিল না।

গত ম্যাচে বাঙ্গালুরকে হারানো কলকাতা ছিল আত্মবিশ্বাসী আর সেদিক থেকেই আজকের ম্যাচের ফেবারিট ছিল কলকাতাকেই। টস জিতে কোলকাতার অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ফিল্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রাঁচির এই পিচে আগে ফিল্ড করার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল তা বোধহয় খোদ গম্ভীর নিজেও জানতেন না। কলকাতার বোলারদের একরকম নির্যাতন করেই উথাপ্পা ও ফিন্স জুটি করেন ৪১ রান। উথাপ্পা ২৫ রানে (২১ বলে) আউট হলেও অধিনায়ক ফিন্স খেলে গেছেন ১২.৫ ওভার পর্যন্ত। লক্ষ্মীপতি বালাজির বলে বোল্ড হবার আগে ফিন্স করেন ৪৮ রান (৩২ বলে)। এরপর হাল ধরেন মনিস পান্ডে ও যুবরাজ সিং। যুবরাজ ক্যালিসে বলে ৩০ রানে আউট হলেও অন্যপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন পান্ডে। ১৯তম ওভারে তিনি আউট হবার আগে করেন ৬৬ রান। ৪৭ বলে খেলা এই ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ১টি ছয়ের মার। টপ অর্ডার কল্যাণে পুনে ২০ ওভারে করে ১৭০ রান।

কলকাতার বোলারদের মাঝে বালাজি, সিনানায়েকে ও ক্যালিস ১টি করে উইকেট নিলেও আজকের ম্যাচে কোন উইকেটের দেখা পাননি এবারের আইপিএলের অন্যতম সেরা বোলার সুনীল নারানে।

১৭৯ রানের টার্গেটে নামা কলকাতার শুরুটা ভালো হয়নি মোটেই। মাত্র ২৯ রানেই তারা ৩ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারায়। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইউসুফ পাঠান ও টেন ডাসকেট। দুজন মিলে ৯৮ রানের পার্টনারশিপ করেন। হয়তো এই পার্টনারশিপ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারতো যদি না পাঠান রান নেবার সময় ক্রিটিয়ানো রোনাল্ডের মতো বলকে ফ্রি কিক না মারতেন। ফিল্ডিং প্রতিবন্ধকতার দ্বায়ে আউট হবার আগে পাঠান ৪৪ বলে ৭২ (৮ চার ও ২ ছয়) রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন আর ডসকেট করেন ৩০ বলে ৪২ (৪ চার ও ১ ছয়)। পাঠান-ডসকেট আউট হবার পর দ্রুতই ভেঙ্গে পড়ে কলকাতার ব্যাটিং লাইনআপ। পুনের দেয়া অতিরিক্ত ১৫ রানের পরও তারা ১৬৩ –এর বেশি করতে পারেনি। “ক্রিকেটে কোন কিছুই আগে থেকে ঠাহর করা যায় না” এই কথাকে প্রমাণ করে পুনে আজকের ম্যাচ নিজের করে নিলো ৭ রানে জিতে। 

পুনের বোলারদের মাঝে পারনেল ২টি, কুমার ও পান্ডে ১টি করে উইকেট পান।

প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ হন পুনের মনিশ পান্ডে।



দিনের অন্য খেলায়  মুখোমুখি হয় পয়েন্ট টেবিলের দুই ও তিনে থাকা মুম্বাই ও রাজস্থান। একেবারে সমানে সমান লড়াই বলতে যা বোঝায় তাই।

মুম্বাইয়ের সাধারণ মানুষরা ক্রিকেটের যতটা না ভক্ত তার চেয়েও বেশি ভক্ত শচীনের। আজকের ম্যাচে ইনজুরির কারণে শচীন থাকবেন না হয়তো এর প্রভাব দর্শকদের মাঝেও পরবে এটাই যেন আয়োজকদের একটু চিন্তার কারন হয়ে দেখা দিচ্ছিলো। কিন্তু সব সঙ্কাকে দূর করে একটা পরিপূর্ণ বিনোদন প্রাপ্তির আশায় মাঠে এলেন হাজার হাজার দর্শক। ম্যাচ শুরুর আগেই স্টেডিয়ামে তিল ধরার জায়গা নেই।

টস জিতে রাজস্থান অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। মুম্বাইয়ের ওপেনার হিসেবে আসা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও আদিত্য টারে বুঝতে দিলেন না স্মিথ ও শচীনের অনুপস্থিতি। ম্যাক্সয়েল ২৩ রানে (১৭ বলে) আউট হলেও আদিত্য টারে তার প্রথম অর্ধশতক নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। কুপারের বলে আউট হবার আগে তারে খেলেন ৫৯ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। ৮ চার ও ১ ছয়ে সাজানো এই ইনিংসের জন্য তিনি ব্যায় করেছেন মাত্র ৩৭ বল। দীনেশ কার্ত্তিক ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা ২১ ও ১৪ রানেই ফিরে যান। মাঠে আসেন আগের ম্যাচে মুম্বাইকে প্রায় অসম্ভব ম্যাচ জেতানো পোলার্ড। মুম্বাইয়ের কয়েক হাজার দর্শক তখন কাইরন পোলার্ডের কাছে আগের দিনের মতো আরেকটি ইনিংস প্রত্যাশা করছিলো। কিন্তু ১৪ বলে ১৭ করে পোলার্ডে দ্রুতই বিদায় নেন। হারভজন সিং-এর অপরাজিত ১৫ রানের সুবাদে শেষ পর্যন্ত মুম্বাই ২০ ওভারে ১৬৬ রান করে।

রাজস্থান রয়েলসের বোলারদের মাঝে ফুলকানার ও ওয়াটসন ২টি করে উইকেট তুলে নেন। এছাড়াও টাম্বি ও কেভিন কুপার ১টি করে উইকেট পান।

ব্যাট করতে আসা রাজস্থান মাত্র ৫ রানেই অভিজ্ঞ রাহুল দ্রাবিড়ের উইকেটটি হারায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা গেল রাজস্থানের স্কোর ৫ ওভারে ৪ উইকেটে ২৮ রান। একে একে ড্রেসিং রুমে ফিরে গেছেন রাহানে, ফুলকার ও স্যামসন। ওপেনার ওয়াটসন ৫ নাম্বারে নেমেও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেনি। ১৯ রানেই তাকে সাজঘরের পথ দেখায় প্রজ্ঞান ওঝা। বেনি ও হজ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও মালিঙ্গা-হারভজনদের সামনে টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। হজ ৩৯ রানে আউট হলে বেনির অপরাজিত ৩৭ রানও জেতাতে পারেনি রয়েলসদের। মুম্বাই ম্যাচ জিতে যায় ১৪ রানে।

মুম্বাইয়ের সব বোলাররাই আজ উইকেট পেয়েছে। জনসন ও কুলরানি ২টি করে উইকেট নেন। মালিঙ্গা, ওঝা ও হারভজনরা ১টি করে উইকেট নিয়ে জনসন-কুলরানিকে ভালোই সহযোগিতা করেছেন।

৩৭ বলে ৫৯ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরষ্কার আদিত্য টারের হাতে ওঠে।

এই জয়ের সাথেই তারা আবার উঠে গেল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটি গতকালই চেন্নাইয়ের দখলে যাবার ঠিক ২৪ ঘন্টা পর মুম্বাই আবার সেটা নিজের করে নিলো।

ক্রিকেটের ঝলমলে সব তারকাদের নিয়ে আইপিএলের সৃষ্টি। একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেটকে শুধুই এক কাঠখোট্টা খেলা হিসেবে দেখা হতো আজ একে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। বলিউড বা হলিউডের কোন ব্লকবাস্টার হিট সিনেমার চেয়ে কোন অংশে কম যায়না আইপিএল ম্যাচগুলো। এখানে হাসি আছে, আবেগ আছে, বন্ধুত্ব আছে, শ্বাসরুদ্ধ উত্তেজনা, থ্রিলার আছে, আছে একশনও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যেটা সবার নজর কাড়ে তা হচ্ছে বিশ্বের সব ক্রিকেটারের মাঝে সৌহার্দ। আইপিএল যেন বিশ্ব মানবতারই প্রতিচ্ছবি।



প্রতিবেদন : নিপুণ কাওসার, বিভাগীয় সম্পাদক, স্পোর্টস

এনকেঃ১৬/০৫-০৯

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)