ছয়টি পয়েন্টে হেফাজতের অবস্থান, ঢাকা প্রবেশে বাঁধা
ছয়টি পয়েন্টে হেফাজতের অবস্থান, ঢাকা প্রবেশে বাঁধা
প্রস্তুতি : জাতীয় (প্রতিমুহূর্ত.কম/ protimuhurto.com) ---
হেফাজত ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সামনে রেখে আগের রাত থেকেই ঢাকার সঙ্গে দেশের বেশিরভাগ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ৫ মে রোববার ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার, টঙ্গী ব্রিজ, আমিন বাজার প্রভৃতি পয়েন্টে লাঠি হাতে অবস্থান নিয়েছেন হেফাজত কর্মীরা। তবে তারা যেন ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে আটকে দিয়েছে পুলিশ।
১৩ দফা দাবির সপক্ষে হেফাজত কর্মীরা ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে মাইকে ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। বৃষ্টিতেও তারা পথ ছেড়ে যায়নি। হেফাজত কর্মীরা রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নেওয়ায় ঢাকা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বারবার ঢাকা প্রবেশের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থানরত হেফাজত কর্মীরা ঢাকায় ঢুকতে ও ঢাকা থেকে বের হতে বাধা দিচ্ছেন সব ধরনের যানবাহনকে। লাঠিসোটা নিয়ে স্লোগান দেওয়া এসব হেফাজত কর্মীদের লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকাও বাধা দেখা গেছে।
প্রতিমুহূর্ত.কমের প্রতিনিধিরা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে তৎক্ষণিকভাবে জানাচ্ছেন সেখানকার পরিস্থিতি। তাদের দেওয়া তথ্য অনযায়ী হেফাজতের কয়েক হাজার নেতাকর্মী গাবতলী, আমিনবাজার, টেকনিকেলের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তারা ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।
যাত্রাবাড়ির কাজলা এলাকায় ভোর থেকেই সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হেফাজতকর্মীরা। সেখানে সড়কে পুলিশও ব্যারিকেড দিয়েছে। এর একপাশে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা এবং অন্যপাশে হেফাজত কর্মীরা রয়েছে। পুলিশ হেফাজতকর্মীদের ব্যারিকেড অতিক্রম না করতে মাইকিং করছেন। নয়াবাজারে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে হেফাজতকর্মীদের ঢাকার দিকে আসতে দিচ্ছে না। পুলিশের সাজোয়া যান ও পানি ছিটানোর গাড়ি আশপাশেই আছে।
ফজরের নামাজের পর থেকেই হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার সমর্থক সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জাতীয় পতাকা ও হেফাজতের পতাকা হাতে এ দু’টি মহাসড়ক অবরোধ করে সেখানে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। মহাসড়কের ওপরে বসেই এসব লোকজন জিকির করছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কেই অবস্থান করবেন বলেও জানিয়েছেন হেফাজতের কর্মীরা।
১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে অবরোধ করছে হেফাজত। এগুলো হলো যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, পোস্তগোলার বুড়িগঙ্গা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু, উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর পর্যন্ত এবং গাবতলী-আমিনবাজার থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত। কর্মসূচি চলাকালে বাইরে থেকে কোনো যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং রাজধানী থেকেও কোনো যানবাহন বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। তবে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
হেফাজতের পক্ষ থেকে আরও বলা হচ্ছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন এবং সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে বিকেল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করবে তারা।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি পড়ে শুনিয়ে বলেন, অধিকাংশ দাবি পূরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলো হচ্ছে। তিনি সংগঠনটিকে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ অভিহিত করে কর্মসূচির একদিন আগে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের আমির আহমদ শফী অবরোধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, হেফাজতের সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলিতে সংহতি প্রকাশ করেছে। ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন