কারাগারের হাজতি অন্তসত্ত্বা



প্রস্তুতি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

শরীয়তপুর জেলা কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজতির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৮ জন পুলিশ সদস্য ও এক মহিলা কারারক্ষির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

শরীয়তপুর জেলা কারাগার সূত্র জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিঞ্জিরা আমবাগিচা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম মোল্লার মেয়ে বেবী আক্তার (২৬) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা । ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ স্বামী সজল মিয়াকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।


আদালতের মাধ্যমে তাকে ওই বছর ১৯ মার্চ জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে বিচারাধীন হত্যা মামলায় সে জেলা কারাগারে আটক আছে।


এদিকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার নুর হোসেন মিয়ার পুত্র মিলন মিয়া (২৯) সখিপুর থানার একটি ডাকাতি মামলায় ২০১১ সালের ১০ মার্চ কারাগারে আসে। গত ১৬ জানুয়ারি বেবী আক্তার ও মিলন মিয়াকে মামলার হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে নেয়া হয়। আদালতের হাজতখানায় মহিলা ও পুরুষ বন্দীদের রাখার জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ও কারারক্ষীর সহযোগিতায় বেবী আক্তার ও মিলন মিয়া একটি কক্ষে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে।   


ওই মহিলা হাজতি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা কারাগারের সার্জনের দায়িত্বে থাকা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা কারাগারে হাজতীর সাথে কথা বলেন। মহিলা হাজতি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনাটি চিকিৎসককে অবহিত করেন।


ঘটনাটি জানাজানি হলে বিষয়টি তদন্ত করার ও মহিলা হাজতির ডাক্তারি পরীক্ষা করার জন্য শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

২০ এপ্রিল মহিলা হাজতীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফি ও ইউরিন পরীক্ষায় তার ১১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটি ১৩ মে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।


তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,বেবী আক্তার ও মিলন মিয়া পূর্ব পরিচিত। আদালতে হাজিরা দিতে আসার পথে তাদেরসাথে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন হয়। গত ১৬ জানুয়ারি হাজিরা দিতে এসে পুলিশের সহায়তায় আদালতের হাজতখানার একটি কক্ষে তারা মিলিত হয়। এ বিষয়টি বেবী আক্তার ও মিলন মিয়া লিখিতভাবে তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন।


পরার্তীতে তাদের দু’জনের স্বীকারোক্তি ও তদন্ত কমিটি তদন্ত করে জানতে পারে, ১৬ জানুয়ারি আদালত হাজতখানায় দায়িত্ব পালন করেন সশস্ত্র সহকারী পরিদর্শক মজিবুর রহমান, সশস্ত্র সহকারী পরিদর্শক বাবুল দত্ত, কনস্টেবল মহসিন, জামাল মাতুব্বর, আবুল বাশার, তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস, আবুল খায়ের ও মহিলা কারারক্ষী আফরাজা বেগম । তদন্ত কমিটি তাদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।


অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাজতি বেবী আক্তার ও মিলন মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে পুলিশ ও কারারক্ষীর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা যথাযত দায়িত্ব পালন করলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বেবী আক্তার ও মিলন মিয়ার অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

 
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন,আদালতে হাজতি অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। এ ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, হাজতির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি সরবরাহ করা হবে।
 

প্রতিবেদন : আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, নিউজরুম এডিটর

এজে- ২৩/৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)