নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করা হবে : গওহর রিজভী




প্রস্তুতি: অর্থনীতি (প্রতিমুহূর্ত.কম)

বিদেশি সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
 
আজ ১৫ মে বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত “২০১৫-উত্তর টেকসই উন্নয়নে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা: এশিয়া বিকাশমান বাস্তবতা” র্শীষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গওহর রিজভী বলেন, “বিদেশি সাহায্য নির্ভরশীলতার কারণে পদ্মাসেতু নিয়ে আমাদের অপমানজনক অবস্থায় পড়তে হয়েছে। সরকার এখন বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়াই পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে, আমরা পদ্মাসেতুর প্রথম ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি।” 

উপদেষ্টা আরও বলেন, “নানা সংকট সত্ত্বেও সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সফলতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে কাজ করছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদেশি সাহায্য নির্ভরশীলতা কমাতে সরকার কাজ করছে।” 

তিনি আরও বলেন, ''২০১৫-উত্তর উন্নয়ন আমাদের মনোসংযোগ ঘটানো জরুরি। উন্নয়ন অধ্যয়নের অংশ হিসেবে আমাদেরকে নিজেদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পাশ্চাত্যের বৃত্তে আটকে থাকলে চলবে না আমাদের। অনেকে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে সত্যি, তবে তাদের উন্নয়নের আশা আমরা ছাড়িনি। নিজেদের সম্পদের উন্নয়ন ঘটানোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। বর্তমান বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র গণতন্ত্র ছাড়া অগ্রসর হতে পারে না। দুর্নীতিও উন্নয়ণের প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের উন্নয়ন ঘটে না। 

মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন  পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
 
তিনি বলেন, ''দারিদ্র দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে পিকেএসএফ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কাজ করছে। পূর্বে এর কোনো কাঠামো ছিল না। আর এ ক্ষেত্রে কোনো বৈদেশিক সাহায্যও আসেনি। তথাপি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারছে, এটাই সুখবর। এখন আমাদের উচিত, অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা। আর উন্নয়ন কাঠামো ও উন্নয়ন অগ্রগতি কী হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর।''
 
তিনি আরো বলেন, "এশিয়ায় ৭০ কোটি দরিদ্র মানুষ আছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাটা বেশি। আমরা সার্ক গঠন করেছি সত্যি, কিন্তু আঞ্চলিক বাণিজ্য মূল বাণিজ্যের ৫% শতাংশেরও কম। আগে আমাদের যারা শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করতো, তা এখনও রয়ে গেছে। সেই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াব ও নিজেদের চিন্তায় কাজ করবো।"

এ সেমিনারে বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, "২০১৫ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যগুলোর সব হয়তো আমরা অর্জন করতে পারবো না। তবে অধিকাংশই অর্জনের পথে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্য আমরা পিছিয়ে আছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অংশগ্রহণ খুবই আশাব্যশক। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে নানা বৈচিত্র রয়েছে।"

তিনি মনে করেন, অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক সহযোগিতা থাকলে সাফল্য বেশি আসে। তাই রাজস্বের কথা ভেবে হলেও সব ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। দক্ষিণ এশীয় দুটি দেশ ও উত্তরকেন্দ্রিক একটি দেশ মিলে ত্রিমাত্রিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন। 

বাংলাদেশে দারিদ্র অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে পিকেএসএফ-এর সভাপতি জানান, শিক্ষাখাতে সমতা আনা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা পাওয়ার ওপর জোর দেন

এ ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে উল্লেখ করেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দুর্যোগ তথা হরতাল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের উঠে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। তাই প্রত্যেকের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। সরকার কিংবা বিরোধী দলকেও ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে হবে। 

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল করিম বলেন, এ দেশে বৈদেশিক সাহায্য ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। আশার কথা হলো, তবুও আমাদের উন্নয়নের গতি থেমে নেই। উন্নত দেশগুলো আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ৬% শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রস্তাবে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। কারণ যে কোনো উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি অর্থের যোগান

তার প্রশ্নের উত্তরে সেমিনারের আলোচক পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল। অনেকে এ দেশকে ক্ষুদ্র ঋণের ইউনিভার্সিটি বলে থাকে। কারণ ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে যে জীবন পাল্টে দেওয়া যায়, তা প্রমাণ করেছি আমরা। আমাদের বড় পুঁজি সহমর্মিতা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা। যদিও আমাদের আড়াই কোটি লোক দারিদ্রসীমার নিচে আছে।তিনি জানান, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০১৫ উত্তর উন্নয়নে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে পরিকল্পনা কমিশন।

রিপোর্ট : আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের
এজে- ১৫/৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)