বগুড়ার মহাস্থানগড়ে গাঁজা উৎসব শুরু

 বগুড়ার মহাস্থানগড়ে গাঁজা উৎসব শুরু



 প্রস্তুতি : সারাদেশ  (প্রতিমুহূর্ত.কম) ---

বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে দেশ বিদেশের সাধু সন্নাসীদের মিলনমেলা শুরু হয়েছে। আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার পীঠস্থান পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী মহাস্থানগড়ে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

'সাধু সন্নাসীদের মিলনমেলা'  বলা হলেও এটি গাঁজা উৎসব নামেই বেশি পরিচিত। এতে যোগ দিতে বিভিন্ন ধর্মের লাখো নারী পুরুষ বাউল, বেরাগী, সাধু-সন্নাসীদের সমাগম ঘটেছে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই।

এরই মধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে জটাধারী সাধু সন্নাসীদের বিচিত্র সব আচার অনুষ্ঠান। নানা তরিকার নানা ধর্মের সংসারত্যাগীদের মহা সম্মেলনে রূপ নেয়া এই উৎসবে কেউ আসেন নাচতে গাইতে, কেউ আসেন জিকির আজকার করতে আর কেউ আসেন উম্মুক্ত মাদক সেবনের উৎসবে যোগ দিতে। আর এসব বিচিত্র কর্মকাণ্ড দেখতে দেশের প্রত্যান্ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন হাজারো উৎসুক মানুষ।

প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসা নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের এই মিলন উৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে গাঁজা সেবন। গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানের নারী পুরুষ এবং ভারত, নেপাল শ্রীলংকা ও বার্মাসহ বিভিন্ন দেশের সাধু সন্নাসীরা মহাস্থানে এসে জড়ো হচ্ছেন। যুগ যুগ ধরে গাঁজা উৎসবের পরিচিতি পাওয়া এই মিলন মেলায় কয়েকশ মন গাঁজাসহ নানা রকম মাদক বেচা কেনা হয়ে আসছে। এবারেও প্রচুর মাদকের মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে উৎসবকে কেন্দ্র করে। গাঁজা সেবনের হরেক রকমের সরঞ্জামের বিশাল দোকানও বসে এখানে। এ সব কিছুই দর্শনার্থীদের বাড়তি আকর্ষণ এবং আনন্দ জোগায় বলে লাখো দর্শকের সমাগম ঘটে।

বুধবার সন্ধ্যা থেকেই সাধু সন্নাসীরা গাঁজার কলকিতে দম দিচ্ছেন। জমে উঠেছে গান বাজনার মজমাও। দশ/বারোজনের একক একটা গ্রুপ করে চলছে। বাউল গানের আসর। শরিয়তি-মারফতি মাইজভাণ্ডরি তরিকার হাজারো ভক্তরা এসেছেন জিকির আসকার করতে। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হাজারো মানুষ এসেছেন তাদের নিজ নিজ আচার অনুষ্ঠান করতে।

সাধু সন্নাসীদের এই বৈশাখী মেলায় এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতশত সাধু সন্ন্যাসী ও হাজার হাজার ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন। মেলা উপলক্ষে নড়ে চড়ে বসেছেন গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইেন ও ব্যবসায়ীরাও। উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে মহাস্থান মাজার এলাকার চারপাশের প্রধান প্রধান সড়ক পথগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে বর্ণাঢ্য তোরন। আশপাশে এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ বর। সারাদেশে বিখ্যাত মহাস্থানের কটকটি তৈরি  করতে ব্যবসায়ীরা দিন রাত পরিশ্রম করে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আগত মেহমানদের জন্য তৈরী করছে শত শত মন কটকটি।

বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে প্রাচীন বাংলার রাজধানী ইতিহাসের অমর স্বাক্ষী হিন্দু মুসলিমদের তীর্থস্থান ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে শায়িত আছেন পারস্য থেকে আগত হযরত শাহ সুতলতান বলখী মাহী সাওয়ার (রহ.)। যিনি হিন্দু রাজা পরশুরামকে পরাজিত করেছিলে বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই দিনকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করতে প্রতি বৎসরের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বিজয় মেলা বসতো আগে। কালের পরিক্রমায় এখানে সাধু সন্নাসী ও বাউলদের আগমন ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের গাঁজা সেবনের উৎসবে রুপ নেয় সেই বিজয় উৎসবটি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)