ভোলায় ঘূর্নিঝড়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে হিড়িক

মাঠ পর্যায় থেকে তিল পরিমাণ দেখানো হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি

প্রস্ততি : সারাদেশ (প্রতিমুহূর্ত.কম)

ভোলা জেলায় ঘুর্নিঝড় মহাসেনের আঘাতে ক্ষয়-ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি দেখাতে ওঠে পড়ে লেগেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন জন প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন প্রশাসন। চরফ্যাশন উপজেলা উপজেলা থেকে ১৫ হাজার ঘরবাড়ি বিধস্ত হওয়ার রিপোর্ট পেয়ে খোদ জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সরজমিনে ওই সব এলাকা ঘুরে হতাশ হয়েছেন। 

মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলা থেকে ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের কথা বলা হচ্ছে। অথচ ভোলা থেকে যাওয়া সাংবাদিকরাও এমন তথ্যের সঙ্গে মিল খুজে পান নি। যেখানে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার, সেখানে মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টের যোগফল এসে দাঁড়ায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার।
আজ ১৭ মে রোববার জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যে জেলায় ২৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, তারা সঠিক তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিলেও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের কারণে পেরে ওঠছেন না।

এদিকে ঘর বাড়ির ক্ষতি দেখাতে  জনপ্রতিনিধিরা অধিক ব্যস্ত থাকলেও তাদের এলাকায় আড়ালে থেকে যাচ্ছে জেলে ও কৃষকের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ।
মনপুরার চর নিজাম থেকে ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিসি)’র টিম লিডার মোঃ ইউছুফ সরকার, চরপাতিলা থেকে মোঃ নুরন্নবী ও কুকরিমুকরি থেকে বেল্লাল শরীফ জানান, ওই সব চরে বা এলাকায় কোন পানি ওঠে নি। তেমন ঘরও পড়ে নি। কিছু কাচা ঘর পড়েছে। অথচ কেউ কেউ প্রচার করছেন ওই সব এলাকা ৫ ফুট পালিতে তলিয়ে গেছে। বেড়ি না থাকলেও কোন চরে এবার পানি ওঠে নি।

সিপিপি কর্মীদের প্রাথমিকভাবে দেয়া তথ্য অনুযায়ী- তজুমদ্দিনে ৩শ, মনপুরায় ২শ, লালমোহনে দেড়শ, চরফ্যাশনে ২শ, দৌলতখানে দেড়শ, বোরহানউদ্দিনে ২শ, ভোলা সদরে ২শ  ঘরবাড়ি কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

জেলা সিপিপি উপ পরিচালক মোঃ শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, প্রাথমিক রিপোর্ট পেলেও এখনও চুড়ান্ত করা হয় নি। তিনিও স্বীকার করেন ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের সঙ্গে তার তথ্যে পার্থক্য হচ্ছে।

অপর দিকে জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সম্পাদক জানান, জেলায় সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ভোলা সদরে, বোরহানউদ্দিনে ৪ হাজার, দৌলতখানে ২০ হাজার, লালমোহনে ২০ হাজার, তজুমদ্দিনে সাড়ে ৩ হাজার, চরফ্যাশনে ৪ হাজার, মনপুরায় ৫ হাজার । এদের মধ্যে কৃষক, জেলে, ঘরপড়া, গাছ পড়ার সংখ্যাও রয়েছে।

অপর দিকে চরফ্যাশন উপজেলা কর্মকর্তা তার রিপোর্টে দেখিয়েছেন, ১৪ হাজার ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। ওই উপজেলার রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মিন্টু জানান, তার ইউনিয়নে ৩৫০টি ঘর সম্পূর্ণ ও ২ হাজার ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একইভাবে চরমানিকা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, তার এলাকায় ৫শ ঘর সম্পূর্ন ও ২ হাজার ঘর আংশিক তিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি ইউপি চেয়ারম্যানরাই ৫০ কে ৫শ ঘরবাড়ি উল্লেখ করে রির্পোট দেয়ার হিড়িকে নেমেছেন বলেও সূত্র জানায়।

এদিকে গত দু 'দিন ধরে সাংবাদিকরা ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত দলে দলে ঘুরে বেড়িয়েও চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্যের কোন মিল খুঁজে পান নি। চরফ্যাশনের সিকদার চর, তেতুঁলিয়া নদীর পাড় এলাকায় বেশ কিছু কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাধ এলাকায় অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়ে, ওই হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা অনেক।

জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান,  মাঠ পর্যায় থেকে দেয়া তথ্যের সঙ্গে  ঘরবাড়ি সম্পূন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বাস্তবতার মিল না থাকায় রোববার ফের তদন্ত করে দেখার জন্য ইউএনওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভোলা-৪ আসনের এমপি আব্দুল্ল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা দেখতে গ্রামে গ্রামে ছুটে যান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রান সামগ্রী দেন। ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনও  ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রথম থেকেই খাদ্য ও ত্রান সমাগ্রী পাঠান।



প্রতিবেদন :  অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলা জেলা প্রতিনিধি
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, নিউজরুম এডিটর

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)