জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ে মিশন শেষ করলো টাইগাররা


জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ে মিশন শেষ করলো টাইগাররা


প্রস্তুতি : স্পোর্টস (প্রতিমুহূর্ত.কম)---

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচে কাগজে-কলমে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখা হয়। এবার সাকিব-নাসিররা যখন জিম্বাবুয়েতে পা রাখে তখন তারা ছিল শ্রীলঙ্কা সিরিজে ভালো খেলা আত্মবিশ্বাসী একঝাঁক জয় পিপাসু ক্ষ্যাপা বাঘ। কিন্তু টেস্ট সিরিজ ড্র, ওয়ানডে সিরিজে হার, মুসফিকের হঠাৎ অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়া সর্বোপরি প্রথম টি-২০ তে হার। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের এবারের জিম্বাবুয়ে সফরটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। হয়তো ফেবারিটের এই বাড়তি চাপ তারা নিতে পারেনি। 

সবমিলিয়ে শেষ টি-২০ তে ভালো করা বাংলাদেশের জন্য একরকম চ্যালেঞ্জই ছিল। আগের টি-২০ তেও শামসুর-সাকিবদের ভালো খেলার পরও মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় জিততে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য তাই শেষ টি-২০ জেতার কোন বিকল্প ছিল না। ‘বাংলাদেশ সবসময় চাপে ভালো খেলে’ এই কথাকেই মেনে নিয়ে আজও টেলিভিশন সেটের সামনে বসেছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা।

বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাবে মুসফিক যখন টস করতে নামলেন তখন অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন এটাই হয়তো অধিনায়ক মুসফিকের শেষ টস। নিজের অধিনায়কত্বকেই হয়ত স্মরণীয় করে রাখার জন্য টসও জিতলেন। কিন্তু গ্যালারী থেকে কোন উচ্ছ্বাসী কন্ঠ ভেসে এলো না, কয়েক হাজার শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ আপন খেয়ালে নাচছেন, গাইছেন। ক্রিকেট বিশ্বে জিম্বাবুয়েই বোধহয় সেই দেশ যেখানে বাংলাদেশকে এমন দর্শক খড়ায় ভুগতে হয়।

টস জিতে অধিনায়ক (সম্ভবত বিদায়ী!!!) মুসফিক ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেন। আগের দিনে অর্ধশতক করা শামসুর উৎসেয়ার প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ওয়ালারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। শুরুতেই উইকেটের পতন কালকের ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি হবে বলে মনে হচ্ছিলো।

এরপর মাঠে নামেন সম্প্রতি ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পাওয়া সাকিব। দুই বামহাতি যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন অনেককেই একটু হতাশই মনে হচ্ছিল। সম্প্রতি তামিমের ফর্মটা ভালো যাচ্ছে না, আর গত জানুয়ারিতে ইনজুরিতে পরার পর থেকে সাকিবের সেই ধারাবাহিকতাকে যেন আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলো না। গতকালের ম্যাচে ভালো খেলার পরও ক্রিকেটের সাধারণ দর্শকেরা যেন সাকিবের উপর ভরসাই করতে পারছিলেন না। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে সাকিব-তামিম মিলে ৮.১ ওভারে গড়ে তলেন ৮২ রানের পার্টনারশিপ।

দলীয় ৮৬ রানে সাকিব যখন মুসহাংগুয়ের বলে সিকান্দার রেজার হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন তখন তার নিজের নামের পাশে যোগ করেছেন ৪০ রান। ২৮ বলে খেলা এই ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভারবাউন্ডারি। সাকিবের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিলো সেই পুরনো সাকিব আবার ফিরে এসেছেন আপন রূপেই। অপরপ্রান্তে তামিম তখনো বলকে আগুনের গোলা বানিয়ে বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলছেন। বিধ্বংসী এই ওপেনার জিম্বাবুয়ের বোলারদের নাকের পানি, চোখের পানি একাকার করে দিয়ে করেন ৩০ বলে ৪৩ রান, যাতে ৬টি চারের সাথে ছিল ১টি ছয়ের মার। ১০১ রানে তামিমকে আউট করে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক টেইলরের কপালের ভাঁজ মুছে দিলেন অভিজ্ঞ স্পিনার প্রসপেয়া উৎসেয়া। সাকিব-তামিমের আউটের পর কুইন্স স্পোর্টস ক্লাবের দর্শকরা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। গত ৮ ওভার যে সাকিব-তামিম তাদের উচ্ছ্বাসকে প্রার্থনায় বদলে দিয়েছিলো।

সাকিবের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মুসফিক। অধিনায়কত্ব থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেয়া মুসফিক স্বভাবতই চেয়েছিলেন অধিনায়ক হিসেবে নিজের শেষ ম্যাচকে স্মরনীয় করে রাখতে। কিন্তু ১২ বলে ১৭ করার পর তাকে এল.বি.ডাব্লিউ-এর ফাঁদে ফেলেন হ্যামিল্টন মাসাকারজা। মাঠে আসেন গতকিছুদিন থেকে বাংলাদেশের অন্যতম ধারাবাহিকভাবে পারফর্মার নাসির হোসেন।

গত ম্যাচে শূন্য রানে রান আউট হওয়া নাসিরের কাছে আজকের ম্যাচে ভালো কিছু করার তাগিদ তো ছিলই, তারসাথে ছিল শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে তার হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেবার তাড়াও। কিন্তু আজ ২৩ বলে ২৭ রান (দলীয় ১২৭) করার পর সিবান্দার দুর্দান্ত থ্রোতে রানআউট হন তিনি। মাহমুদুল্লাহ ১ ও মমিনুল ৯ রানে ফিরে গেলে বাংলাদেশের স্কোরকে আর বেশিদূর টেনে নিয়ে যাওয়া যায়নি। ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশ করে ৭ উইকেটে করে ১৬৮ রান। রানরেটে  প্রতি ওভারে ৮.৪০।

উৎসেয়ার বলে দেখা যাচ্ছিলো যথেষ্ট অভিজ্ঞতার ছাপ। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে একটু বেশিরকমের কৃপণতার পরিচয় দিলেন তিনি। ভেক্টরি, পানিয়াঙ্গারা, হ্যামিল্টন মাসাকারজা ও মুসহাংগুয়ে ১টি করে উইকেট নেন।

১৬৯ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ১.১ ওভারে হারায় গত কিছুদিন থেকে বাংলাদেশকে ভোগাতে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকারজার উইকেট। রাজ্জাকের বলে ব্যাট চালিয়ে মিস করে বোল্ড হন তিনি। জিম্বাবুয়ের স্কোর তখন ৫/১। মাঠে আসেন অনফর্ম অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। কিন্তু সাকিব তাকে আউট করে জানিয়ে দিলেন আজ টেইলরের দিন নয়। নাসিরের হাতে ক্যাচ দেবার আগে টেইলর করেন ১৫ রান (দলীয় ৪৫/২)। অন্যপ্রান্তে লড়াই চালিয়েই যাচ্ছিলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটদলের আরেক পারফর্মার সিবান্দা। মাত্র ১৯ বলে ৩২ রানের (৩ চার ও ১ ছক্কা) এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলে যখন তিনি সাফিউলের বলে আউট হলেন তখন দলের রান ৫৩।

এ অবস্থায় স্বাগতিক দলের হাল ধরার জন্য মাঠে আসেন ওয়ালার ও রেজা। ওয়ালার ১৯ বলে ১৬ রান করে রানআউট হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন রেজা। ৩০ বলে ৩২ করে তিনি একরকম হুমকিই দিচ্ছিলেন। সাকিব তাকে বোল্ড করে জানিয়ে দেয় কোনকিছুই আজ বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। ছিঙ্গি মাসাকারজা ৯ ও উৎসেয়া ৬ রানে আউট হলে জিম্বাবুয়ের সিরিজ জয়ের স্বপ্নে ভাঁটা পড়ে। জিম্বাবুয়ের টেইলএন্ডারদের পাত্তাই দেয়নি টাইগারা। ৯ উইকেটে ১৩৪ রানেই থামিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ফলাফল বাংলাদেশ ৩৪ রানে জয়ী, সেই সাথে টি-২০ সিরিজ ১-১ এ ড্র।

বাংলাদেশের বোলারদের মাঝে আজও সাকিব ৪ ওভারে ২২ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তার ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত। এছাড়া রাজ্জাক ও সফিউল ২ টি করে উইকেট নেন।৪০ রান ও ৪ চার উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন সাকিব আল হাসান, সিরিজ সেরাও হন তিনি।

একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেট সমালোচক ও ধারাভাষ্যকাররা বাংলাদেশ দলকে বলত “Most unpredictable team in cricket”। আজ শুধু দেশের সমর্থকরা কেন, ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও বাংলাদেশের সম্ভাবনার বলে, কথা বলে ধারাবাহিকতার। অনেকেই এখন সমীহের চোখে দেখে টাইগারদের। এই সম্মান টিকিয়ে রাখতে হলে মাঠেই নিয়মিত পারফর্ম করতে হবে সাকিব-তামিমদের।

জিম্বাবুয়ে সিরিজে দেশের ক্রিকেটভক্তদের প্রত্যাশা ছিল অনেক কিন্তু সিরিজ শেষে বাংলাদেশের ঝুলি অনেকটা শূন্যই রইলো। এবারের সিরিজের ভুলগুলো শুধরে আগামী সিরিজে বাংলাদেশ ভালো করবে এই প্রত্যাশা রইলো টাইগারদের প্রতি।

 রিপোর্ট : নিপুণ কাওসার

এনকে-১১/০৫-০৪

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)