সিটি করপোরেশন নির্বাচন : বিএনপির কৌশলী অবস্থান

প্রস্তুতি : রাজনীতি (প্রতিমুহূর্ত.কম) ---

চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বললেও ভেতরে ভেতরে একে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবেই গ্রহণ করেছে বিএনপি । সরকার-সমর্থক প্রার্থীরা হারলে তা আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে বলে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি।

রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সামনে রেখে
প্রার্থীরা প্রচার শুরু করেছেন। নির্বাচনী প্রচরণায় সরগরম ওই চারটি নগর। আগামী ১৫ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

চার সিটি করপোরেশনের সব কটিতেই বিএনপির একাধিক নেতা বিভিন্ন ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন।
কেউ কেউ দল থেকে পদত্যাগ প্রার্থী হয়েছেন। 

বিএনপির সূত্র জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে চার সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে তারা। বিশেষ করে মহানগর কমিটিগুলোকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একাধিক প্রার্থী থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে শেষ পর্যন্ত একজন করেই দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং তা হবে (১৮-দলীয়) জোটগতভাবে। 

এরই মধ্যে রাজশাহীতে বিএনপির দুই নেতার একজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মের মধ্যে অন্য নগরেও কেন্দ্রের সবুজ সংকেত যিনি পাবেন, তিনি ছাড়া বাকিরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে দলের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।

দলীয় মনোনয়নের বাইরে কেউ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না বলে দলটি মনে করে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্র থেকে কাউকে সমর্থনের কথা জানানো হবে না। তবে যাঁরা নির্বাচনের জন্য দল থেকে পদত্যাগ করেছেন বা করবেন বা বহিষ্কার হবেন, বিজয়ী হলে তাঁদের আবার ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ রকম দৃষ্টান্ত  আছে।


চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। তা ছাড়া এটি স্থানীয় নির্বাচন, দলীয়ভাবে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয়ভাবে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে কেন্দ্রীয় সমর্থন নেই।’


দলের সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষিত সিদ্ধান্ত থাকায় সিটি নির্বাচনে কৌশলী হয়েছে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এ নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের অনেকটিতেই তাদের নেতারা নির্বাচিত হবেন। বিএনপি মনে করে, সরকার বিএনপিকে বিপদে ফেলতেই হঠাত্ করে চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সরকারকে সে সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে চারটি গুরুত্বপূর্ণ নগর নির্বাচনের ফল জাতীয় রাজনীতিতে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। আর আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হলে সারা দেশে যে বার্তা যাবে, তা বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে। এ জন্য সব বিভেদ ভুলে একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে।

দলের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগকে খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেবে না। এই নির্বাচনকে বিএনপি একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। এসব নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীরা তাঁদের প্রচারে সরকার-সমর্থকদের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরবেন, এটা তাঁদের আন্দোলনের অংশ।

বিএনপির  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, আইনগতভাবে স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সমর্থন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভোটাররা রাজনীতির বাইরে নন, তাঁরা সত্য জানেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষেই ভোট দেবেন।

বিএনপির প্রার্থী যারা 


রাজশাহীতে ১৮-দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন গত সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক ও জামায়াতে ইসলামীর মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। শফিকুল হক গতকাল মঙ্গলবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

খুলনায় জাতীয়তাবাদী নাগরিক সমাজের ব্যানারে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছে ১৮-দলীয় জোট। মনিরুজ্জামান দলীয় কৌশলের কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এম এম শফিকুল আলম ও সেকান্দার জাফর উল্লাহ খান। এ দুজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জোর চেষ্টা চালছে।

সিলেটে ১৮-দলীয় জোটের পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগরের সহসভাপতি নাছিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শামসুজ্জামান ও জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (কারাবন্দী)। তবে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠিত সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম সমর্থন দিয়েছে আরিফুল হককে। একক প্রার্থী রাখার জন্য এবং চারজনকে বসিয়ে দেওয়া নিয়ে জোটে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।


বরিশালে বিএনপির তিনজন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির জেলা সভাপতি আহসান হাবিব কামাল, জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়দুল হক চাঁন ও কমিটির নগর সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান। তাঁদের মধ্যে কাকে ১৮ দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে, সে জন্য এরই মধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে বলে বিএনপির স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।


আরএম- ২২/৫-৪

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)