পোলার্ড ঝড়ে উড়ে গেল হায়দ্রাবাদ

প্রস্তুতি : স্পোর্টস (প্রতিমুহূর্ত.কম)



শিরোনাম দেখে ভাবছেন ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন' বুঝি তার নাম বদলেছে। আসলে তা না, এই ঝড় এসেছে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে, মাতাচ্ছেন পুরো বিশ্বকে, খুন করছেন বোলারদের। 

ক্রিকেটকে চির অনিশ্চয়তার খেলা বলা হয়। আর টি-২০ তে এই কথা আরও তীব্রভাবে ধরা পরে। একজন খেলোয়াড় পারেন পুরো ম্যাচের হিসেব বদলে দিতে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ষষ্ঠ আসরের আজকের এই ৬২তম ম্যাচটি হবার কথা ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও সানরাইজেজ হায়দ্রাবাদের মধ্যে কিন্তু ম্যাচটি যেন অলিখিতভাবেই হয়ে গেল কাইরন পোলার্ড ও হায়দ্রাবাদের মাঝে।

মুম্বাইয়ের ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামে আজকের ম্যাচটি ছিল পয়েন্ট টেবিলের তিনে থাকা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও পাঁচে থাকা হায়দ্রাবাদের মাঝে। ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের চারে গিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আজ হায়দ্রাবাদ অধিনায়ক ক্যামেরুন হোয়াইট টস করতে নেমেছিলেন। দিবা-রাত্রির ম্যাচ বলেই বোধহয় ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। দুই ওপেনার পার্থিব প্যাটেল ও শিখর ধাওয়ান শুরুটা ভালোই করেছিলেন। প্যাটেল যখন মালিঙ্গার বলে রাইডুর হাতে ক্যাচ তুলে দিলেন তখন তিনি করেছেন ২৬ রান (১৪ বলে)।  ৩.৫ ওভারে প্যাটেলের উইকেটের পতনের পর মুম্বাইয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১২.৫ ওভার পর্যন্ত। জনসনের বলে ধাওয়ান আউট হবার আগে করেছেন ৫৯ রান (৪১ বলে)। ধাওয়ানের এই ৫৯ রানেই ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছয়ের মার। তাকে আরেকপ্রান্ত থেকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিলেন  বিহারী। ৩৭ বলে ৪১ করে বিহারী মালিঙ্গার বলে জনসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেবার আগে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ধাওয়ানের সাথে যোগ করেন ৭২ রান। ধাওয়ানের আউটের পর ক্রিজে আসেন হায়দ্রাবাদ অধিনায়ক ক্যামেরুন হোয়াইট। কথায় আছে যায় শুরুটা ভালো তার সবই ভালো। ধাওয়ান-বিহারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে তাই তিনিও খেললেন ৪৩ রানের (২৩ বলে) এক ধ্বংসাত্মক ইনিংস। ধাওয়ান-বিহারী-হোয়াইট কল্যাণে হায়দ্রাবাদ ২০ ওভারে মুম্বাইকে ১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং টার্গেট ছুড়ে দেয়।

হায়দ্রাবাদের সামনে আজ মুম্বাইয়ের তারকা বোলাররা সুবিধা করতে পারেনি। জনসন ১টি উইকেট নিলেও বেশ খরুচে ছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ৪৩ রানের বিনিময়ে তিনি ধাওয়ানের উইকেটটি পান। টি-২০ এর আদর্শ বোলায় বলাহয় লাসিথ মালিঙ্গাকে। ৪ ওভারে ২৬ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে প্রমাণ করেছেন কেন তাকে আদর্শ বলা হয়। অভিজ্ঞ হারভজন সিং সহ মুম্বাইয়ের বাকী স্পিনারদের আজ উইকেট শূন্যই থাকতে হয়েছে ।

১৭৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামেন শচীন টেন্ডুলকার ও ডুয়েন স্মিথ। স্মিথ শুরু থেকেই মারমুখী থাকলেও শচীন তার স্বভাবসুলভ ক্ল্যাসিক শর্টই খেলেছেন। স্মিথ একতরফাভাবেই ১৭ বলে ২১ করে যখন বিদায় নিলেন তখন মুম্বাইয়ের রান ২৫। ব্যাট হাতে আসেন মুম্বাইয়ের আরেক অনফর্ম ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্ত্তিক।

 রানরেট দশের উপরে, দুই ব্যাটসম্যানকে চেপে ধরেছে হায়দ্রাবাদ বোলাররা। চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই বোধহয় শচীন মেরে খেলা শুরু করলেন। আক্রমণাত্মক ক্ল্যাসিক  শর্টের সেকি অপূর্ব সমারোহ!!! স্টেপ এগিয়ে স্টেইট ড্রাইভে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে জানিয়ে দিলেন ক্রিকেটের সাথে ২৩ বছর পার করার পর এখনো তিনি রান পিপাসু। বিপত্তি ঘটলো তারপর থেকেই। হাতে ব্যাট গ্রিপ করতে পারছিলেন না। ফিজিও এলেন, প্রাথমিক সেবাও দিলেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। শচীন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে গেলেন প্লেয়ার ডগআউটে। তার জায়গায় এলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু একি! কার্ত্তিক আউট হলেন পরের বলেই।  ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামের চল্লিশ হাজার দর্শকের মাঝে তখন পিনপতন নীরবতা। ম্যাচটা যে মুম্বাইয়ের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আউট হবার আগে কার্ত্তিক-শচীন মিলে মুম্বাইয়ের স্কোরে জমা করেন ৬৮ রান। ব্যাক্তিগত ২ রানেই রাইডুও আউট। শর্মার বলে প্যাটেলের এক দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিঙের শিকার হন তিনি।

মাঠে এলেন কাইরন পোলার্ড। মাঠে এসেই জানিয়ে দিলেন ম্যাচ হেরে যাবার জন্য তিনি আসেননি, আসেননি আত্মসমর্পণ করতেও। তিনি শুধু ২৭ বলে ৬৬ ই করেননি,  মুম্বাইকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন। পোলার্ডের অর্ধশতক আসে ১৯ বলে। ১৬ থেকে ১৮ এই ১২ বলে তিনি মুম্বাইয়ের খাতায় জমা দেন ৫২ রান। ৭ বলে ছয় মারলেন ৬ টি। গ্যালারীর বাইরেও বল পাঠালেন দু’বার। মিডঅফ, মিডঅন, ফাইন লেগ, স্কয়ার লেগ, স্টেইট কোনদিকে খেলেনি তিনি! একটি অসম্ভব ম্যাচকে সম্ভব বানালেন পোলার্ড তাও আবার ৪ বল বাকী থাকতেই! পোলার্ড কাছে হায়দ্রাবাদের বোলারা ছিল অসহায়। কেবলমাত্র ডেল স্টেইনকেই যেন একটু সমীহ করলেন পোলার্ড।

পোলার্ডের ছায়ায় অনেকটাই ঢাকা ছিলেন রোহিত শর্মা। তবে তিনিও ১৫ বলে ২০ করে পোলার্ডকে ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন। 

পোলার্ড ঝড় আসার আগ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছে। পোলার্ড এসেই সব এলোমেলো করে দিলেন। স্টেইন কোন উইকেট না পেলেও রানের লাগামটা টেনে রেখেছিলেন। হায়দ্রাবাদী বোলারদের মাঝে ইশান্ত শর্মা ১টি ও করণ শর্মা ২টি উইকেট নেন। হায়দ্রাবাদ শিবিরে সবচেয়ে খরুচে বোলায় ছিলেন পেরেরা। তিনি ৩.৩ ওভারে ৫৫ রান দেন।

ম্যাচ সেরার পুরষ্কার যায় পোলার্ডের হাতে।

চেন্নাইকে হটিয়ে মুম্বাই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চলে গেলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি হায়দ্রাবাদের।

গ্রুপ পর্যায়ের খেলা শেষেরদিকে, কিছুদিন পর শুরু হবে প্লে-অফ। আজকেই এই অবিশ্বাস্য ম্যাচের জয় নিশ্চয় মুম্বাইকে শিরোপা জয়ের বাড়তি প্রেরণা যোগাবে বলেই মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।



প্রতিবেদন : নিপুণ কাওসার

এনকেঃ১৪/০৫-০৫

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)