১৪ তম দিনে ৪২টি লাশ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা ৭৩২

১৪ তম দিনে ৪২টি লাশ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা ৭৩২




প্রস্তুতি : জাতীয় (প্রতিমুহূর্ত.কম) ---

রানা প্লাজা ধসের ১৪তম দিনেও উদ্ধার কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে।  ৭ মে মঙ্গলবার ভোর থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত ৪২টি লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এ নিয়ে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৩২জনে।

এর মধ্যে ৫৬০ জনের মৃতদেহ শনাক্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে ৪৭টি লাশ। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে ৬৪টি এবং অধরচন্দ্র মাঠে রয়েছে ৭০টি লাশ।

মঙ্গলবার সরেজমিন  সাভারে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও সেখানে চলছে  শোকের মাতাম। বাতাসে লাশের গন্ধ আর ভাঙ্গা ভবনের ধূলোবালি মিলে মিশে একাকার অবস্থা। সাভারে প্রবেশ করে রানা প্লাজার কাছে আসতেই মুখে পড়তে হয় মাস্ক। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় কারো কারো। রানা প্লাজায় দুর্ঘটনাকবলিত মানুষগুলোর স্বজনেরা এখন ক্লান্ত। আহাজারি করার চেয়ে তাদের বড় কষ্টের সম্বল নিস্তব্দতা। স্বজনহারা মানুষেরা তার প্রিয়জনের লাশ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় ক্ষান্ত।

অবিরত উদ্ধার কাজ চলছেতো চলছেই। ধবংস্তুপ ভাঙ্গার কাজ তবুও শেষ হয় না। লাশ উদ্ধারের সংখ্যাও থেমে নেই। এ যেন একটি লাশের খনি। এক একটি লাশ উদ্ধার হলেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অধরচন্দ্র হাই স্কুল মাঠে। যেখানে স্বজনেরা অধীর ভারাক্রান্তে প্রিয়জনের মৃত মুখ খুজে বেড়ায়। নতুন অরেকটি লাশ আনা হলে কেউ কেউ ছুটে যাচ্ছেন লাশের পেছনে। একে একে লাশগুলো এনে রাখা হয়েছে অধরচন্দ্র হাই স্কুলের নিচতলায়। শত শত ভীবৎস্য লাশ মেঝেতে শুয়ানো। দম আঁতকে উঠে দুর্গুন্ধে। কিন্তু প্রিয়জন হারা স্বজনেরা এ সব তোয়াক্কা না করে হেঁটে হেঁটে সাদা কাপড় উল্টিয়ে হারানো প্রিয়জনের মুখ খুঁজে বেড়ান।

ভবন ধসের ১৩ দিন পর ৬ মে উদ্ধারকৃত নিখোঁজ হওয়া পাবনার শাপলা খাতুনের (২০) মরদেহ আজ নিজ গ্রামে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ১৩ দিন পর শাপলার লাশ পেয়ে হারানোর যন্ত্রণার মাঝে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজে পান বাবা টোকন মোল্লা ও স্বামী ফারুক হোসেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে শাপলার লাশ পাবনা সদর উপজেলার জোতগৌরি জালালপুর গ্রামে নিয়ে আসার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। শাপলাকে তার নিজগ্রাম জালালপুরে দাফন করা হয়।

এর আগে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন একই গার্মেন্টসে কাজ করা শাপলার মা সাজেদা খাতুন। গত ২৬ এপ্রিল তার লাশও জালালপুরে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। মেয়ে শাপলা ও মা সাজেদা খাতুন দুজনই পাশে শায়িত এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে।

এদিকে, সাভারে বৃষ্টিতে ভিজে মানববন্ধন করেছেন ধসে পড়া রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিকর ও ব্যবসায়ীবৃন্দ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত তারা ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এই মানববন্ধন করেন। এ সময় মানববন্ধনের মাধ্যমে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ  প্রায় দুইশ’ দোকান মালিক-কর্মচারী ও ব্যবাসায়ী তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।

দোকান মালিকরা মার্কেট মালিকের অবহেলার কারণে রানা প্লাজা ধসে পড়ায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করা মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন। রানা প্লাজার নিচ তলায় ১৪৯ টি দোকানে প্রায় ৭০কোটি টাকার মালামাল ভবন ধসে মাটিতে মিশে গেছে। আজাদ নামের নিচ তলার এক দোকান মালিক জানান তার একটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ বিক্রয় ও সার্ভিসিং দোকানে প্রায় ১৮লক্ষ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।  তিনি বলেন, ‘ভবন ধসে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এটা পুষাবার নয়, আমরা পথে বসে গেছে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মানববন্ধন, অনশন করে যাব। পরবর্তীতে আমরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করব।’

সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধার কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবক প্রকৗশলী ইজাজ উদ্দিন চৌধুরী কায়কোবাদের মরদেহ দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলবার। রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পর তার মরদেহ কবরে নামান পরিবারের সদস্যরা। উল্লেখ্য সাভারের রানা প্লাজা ধসে নিহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে কদিন আগে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন স্বেচ্ছাসেবক ইজাজ। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১ মে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ৪ মে শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে মারা যান ইজাজ। যেভাবে মানব সেবায় প্রকৗশলী ইজাজ উদ্দিন চৌধুরী কায়কোবাদ নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তা জাতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

লেখা : জামিল আশরাফ নয়ন
জেএ/৭/৫-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সালাহ্উদ্দিন লাভলুর ধারাবাহিক নাটক 'কবুলীয়তনামা'

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ২টি গল্প

নাচো নাচো (রিমিক্স)